বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে মঙ্গলবার তুলকালাম ঘটল হাওড়া এবং কলকাতায়। দফায় দফায় বিজেপি সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলে। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে দেদার ইটবৃষ্টি, ছোড়া হয় পাথর। পাল্টা জলকামান, টিয়ার গ্যাস, লাঠি চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অনেকে জখম হন। পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং অগ্নিমিত্রা পল দলবল নিয়ে ধরনায় বসে পড়েন। পরে তাঁদের আটক করা হয়।
সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, কলকাতার এমজি রোড, লালবাজারের সামনে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। গঙ্গার দুই পাড়ের বহু রাস্তা ইট, পাথর, চটি, জুতো, বাঁশের খুঁটিতে ভরে যায়। অনেক রাস্তায় পুলিশকে সাধারণ পথচারীদেরও মারতে দেখা যায়। রবীন্দ্র সরণিতে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ বহু বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, বিজেপি সমর্থকরা তাণ্ডব চালিয়েছে এদিন।
আরও পড়ুন: বিজেপির নবান্ন অভিযানে নাকাল সাধারণ মানুষ, বন্ধ কলকাতা-হাওড়ার একাধিক রাস্তা
এদিন সাঁতরাগাছির মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়ের। হাওড়ার মিছিলের নেতৃত্ব দেন সুকান্ত মজুমদার, কলকাতার মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। শুভেন্দুকে কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের সামনে আটকে দেয় পুলিশ। শুভেন্দু বলেন, আমাদের গ্রেফতার করুন। সেখানেই শুভেন্দু বসে পড়েন। পরে তিনি দিব্যি গিয়ে প্রিজন ভ্যানে উঠে পড়েন। তাঁকে এবং লকেটকে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। শুভেন্দুর পরিবর্তে সাঁতরাগাছির মিছিলের নেতৃত্ব দেন সাংসদ সৌমিত্র খান।
নবান্ন অভিযান ঠেকাতে পুলিশের চেষ্টার কোনও ত্রুটি ছিল না। সাঁতরাগাছি, হাওড়া স্টেশন এবং কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে তিনটি মিছিল এগোয় নবান্নের দিকে। পুলিশ দিয়ে নবান্নকে একেবারে দুর্গ বানিয়ে ফেলা হয়। মিছিল যাতে এগিয়ে না যেতে পারে, তার জন্য মাটি খুঁড়ে লোহার ব্যারিকেড বসানো হয়েছিল।
তিনটি মিছিলই নবান্নের অনেক আগেই আটকে দেওয়া হয়। বিজেপি সমর্থকরা বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেললেও লোহার ব্যারিকেড ভাঙতে পারেনি। নবান্ন অভিযানের শুরুতেই ধুন্ধুমার ঘটে সাঁতরাগাছিতে। মিছিলকারীরা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। পুলিশের উপর সমানে ইট, পাথর, বাঁশের টুকরো ছোড়া হয় তিন জায়গাতেই। পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালায়, ব্যবহার করা হয় জলকামান, ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস।
আরও পড়ুন: ইডির বকেয়া মামলায় এখনও জেলেই কাটাতে হবে কাপ্পানকে
বিজেপির এই অভিযানের জন্য বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য কলকাতা এবং হাওড়া শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বহু রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। স্কুল-কলেজ ফেরত পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়ে। পথচলতি বহু মানুষও পুলিশের মার খান। আতঙ্কে্ বহু দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা।