গোয়া ও বেঙ্গালুরু: একটি দুর্ঘটনা ধরিয়ে দিল চার বছরের ছেলেকে খুন করার অভিযুক্ত সূচনা শেঠকে। গোয়া, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র রাস্তার সীমানা লাগোয়া চোরলা ঘাট এলাকায় একটি ট্রাক উল্টে পথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ফলে প্রায় চার ঘণ্টা গাড়িতেই বসতে থাকতে হয় সূচনাকে। আর সে কারণেই বেঙ্গালুরু পৌঁছনোর আগেই গ্রেফতার করা যায় তাঁকে।
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ছেলেকে খুন করার অভিযোগ এখনও অস্বীকার করে চলেছেন তিনি। সূচনা পুলিশকে জানিয়েছেন, রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তাঁর ছেলে মারা গিয়েছে। তিনি খুন করেননি। বারবার পুলিশকে বিভ্রান্ত করছেন বলে দাবি। অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়, ধীরস্থিরভাবে কথা বলছেন। কোথাও উত্তেজনা, রাগারাগি কিংবা জবাব দিতে অস্বস্তিবোধ বা ভাবার সময় নিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: স্বামীর ভিডিও কলের পরেই ছেলেকে খুন সূচনার
এদিকে, আজ, বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুতে সূচনার ছেলে চিন্ময় শেঠ রমনের শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন বাবা বেঙ্কটরমন। খুনের সময় তিনি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় গিয়েছিলেন অফিসের কাজে।
পুলিশ ও যে গাড়ি ভাড়া করে সূচনা গোয়া থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলেন সেই গাড়ির চালক ছিলেন রে জন এবং তাঁর সহকারী দেবরাজ শিন্ডে দুজনে ৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ হোটেলে এসে পৌঁছন। রে জানান, যতক্ষণ গাড়ির পিছনের আসনে বসেছিলেন সূচনা, ততক্ষণ একটিও কথা বলেননি। শান্ত, নিষ্পলক চোখে বসে ছিলেন।
কেবলমাত্র একবার তাঁদের জলের বোতল কিনে দিতে বলেন। গাড়ির চালক আরও বলেন, গোয়া থেকে বেঙ্গালুরু ৬০০ কিমি যাত্রাপথের জন্য তিনি ৩০ হাজার টাকা চাইলেও এককথায় রাজি হয়ে যান ম্যাডাম। গাড়িতে ওঠার সময় ড্রাইভারকে মাঝারি সাইজের নীলচে-কালো ট্রলি ডিকিতে তুলে দিতে বলেন।
রে জানান, সুটকেসটি ভীষণ ভারী ছিল। জানতে চাইলে সূচনা বলেন, তাঁর জামাকাপড় আছে। চোরলা ঘাটে এসে গাড়ি থেমে যায়। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার জন্য রাস্তা বন্ধ। চার-ছয় ঘণ্টা লাগতে পারে। ড্রাইভার তাঁকে বিমানবন্দর থেকে প্লেন ধরে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু, সূচনা গাড়িতেই বসে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
সকাল ৬টায় তাঁদের যাত্রা ফের শুরু হয়। সকাল ৮টা নাগাদ ধারওয়াড়ের উপকণ্ঠে একটি রেস্তরাঁয় জলখাবারের জন্য গাড়ি থামে। ড্রাইভারের কথায়, সে সময় খুব দ্রুত পুরি-ভাজি খেয়ে নেন ম্যাডাম। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই পুলিশের ফোন আসে ড্রাইভারের কাছে।
গোয়া পুলিশ তখন ওই গাড়ির চালকের সঙ্গে ফোনে ধরে সূচনাকে দিতে বলে। ছেলের কথা জানতে চাইলে পুলিশকে তিনি মারগাঁওয়ের একটি ভুয়ো নম্বর দিয়ে বলেন, সে তাঁর এক বন্ধুর কাছে আছে।
পুলিশ তখন ওই চালককে ফের ফোন করে কোঙ্কনি ভাষায় কথা বলতে বলে, যাতে সূচনা শেঠ বুঝতে না পারেন। পুলিশ ড্রাইভারকে নির্দেশ দেয় গাড়িটি কাছাকাছি থানায় নিয়ে যেতে। এরপর জন বুদ্ধি করে একটি রেস্তরাঁয় গাড়ি থামান।
সূচনা তখন গাড়ি থামানোর কারণ জানতে চান। ড্রাইভার বলেন, তাঁকে ওয়াশ রুমে যেতে হবে। তাঁরা নামলেও সূচনা গাড়িতেই বসে থাকেন। ওই রেস্তরাঁর লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন হাফ কিমির মধ্যে থানা আছে। সেই মতো ড্রাইভার বেঙ্গালুরু থেকে ২০০ কিমি আগে চিত্রদুর্গা জেলার একটি থানায় গাড়ি ঢুকিয়ে দেন। থানায় গিয়ে ড্রাইভার পুরো ঘটনা জানালে পুলিশ গাড়িতে রাখা ব্যাগের ভিতর থেকে ছেলের দেহ উদ্ধার করে এবং মহিলাকে গ্রেফতার করে। তখনও চোখেমুখে ভাবলেশহীন, শান্ত হয়ে বসেছিলেন সূচনা।
অন্য় খবর দেখুন