কলকাতা: সিগন্যালের (Signal) ত্রুটিই প্রাণ কাড়ল ২৯৫ জনের। বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ সিগন্যালের ত্রুটি। এমনটাই রেলের তরফে একটি যৌথ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। শনিবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সিগন্যালের ত্রুটির কথাই যৌথ রিপোর্টে বলছেন রেল আধিকারিকরা। মেন শুক্রবার সন্ধে ৭টা নাগাদ ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express)। একসঙ্গে তিনটি ট্রেন- হামসফর এক্সপ্রেস, করমণ্ডল এক্সপ্রেস ও মালগাড়ির মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনায় এখনও অবধি ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৯০০-রও বেশি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
শনিবার সকালে ভোরে আলো ফুটতেই ভয়াবহতা ছবিটা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ট্রেনের কামরা গুলি দলা পাকিয়ে একটার উপর একটা রয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যাত্রীদের দেহাংশ। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। সাদা কাপড়ে ঢাকা মৃতদেহ। তার মধ্যেই ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ, আর্তনাদ। আর সব কিছু ছাপিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দ। ছবিটা এককথায় এই রকমই।এত কিছুর মাঝে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরে আসছে, তা হল এই রকম বীভৎস দুর্ঘটনা ঘটল কীভাবে? সিগন্যালিংয়ের সমস্যা নাকি সঠিক সময়ে ব্রেক কষতে না পারা, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন বহু। লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস (Coromandel Express Accident) কী ভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল দেওয়ায় কোনও গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কার গাফিলতিতে বেঘরে প্রাণ গেল অসহায় মানুষ গুলোর। নিশ্চিন্তের রেল যাত্রা মানুষের শেষ যাত্রা পরিণত হল।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee | রেলমন্ত্রীর ইস্তফা চাইলেন অভিষেক
ট্রেনের যাতা সাধারণ মানুষের কাছে খরচ সাধ্যের মতো হওয়াতেই আজও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভারতীয়দের প্রথম পছন্দ রেল। সরকারের পর সরকার বদল ঘটেছে কিন্তু রেলের সুরক্ষা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। বারে বারে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছে শয়ে শয়ে মানুষ। রাজধানী, জ্ঞনেশ্বরী, সাইসাল, থেকে শুক্রবারে করমণ্ডল। প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের কী প্রাণ কোণও মূল্য কি নেই। ২০১৬ সালে থেকে পৃথক রেল বাজেট তুলে দেওয়ার সুপারিশপত্র জমা দেয় নীতি আয়োগ কমিশন। নীতি আয়োগের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর কাছে ওই সুপারিশ জমা দেওয়া হয় নীতি আয়োগের তরফে। নীতি আয়োগের কাছ থেকে ওই সুপারিশপত্র পেয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে চিঠি লেখেন প্রভু। পৃথক রেল বাজেট না রেখে, সেটিকে সাধারণ বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়। ২০১৭ সালে প্রথম বার সাধারণ বাজেটের অন্তর্ভুক্ত করে রেল বাজেট পেশ করেন জেটলি। সেই থেকে একত্রে বাজেট পেশের রীতিই চলে আসছে। এরপরই প্রশ্ন উঠেছিল কেন্দ্রের কাছে সাধারকণ মানুষের কোনও গুরুত্ব নেই। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বক্তব্য ছিল, “পৃথক রেল বাজেট তুলে দিলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে রেলের সমন্বয়েরর অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
ভারতীয় রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা এ দিন সকালেই বলেন, উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার আমরা রেললাইন মেরামতির কাজ করছি। এই রুটে কবচ ব্যবস্থা ছিল না। গতকাল উদ্ধারকাজে সামিল হওয়া রেলের আধিকারিকরাও জানিয়েছিলেন, অ্যান্টি-কলিশন সিস্টেম, কবচ ব্যবস্থা ছিল না ডাউন যশবন্তপুর এক্সপ্রেস বা আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। ফলে দুর্ঘটনা এড়ানোর কোনও সুযোগই ছিল না।