কলকাতা: বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে প্রায় তিনশোর দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছল শনিবার দিনের শেষে। আহত নশোর কাছাকাছি। বিভিন্ন মহলের আশঙ্কা, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। রেলের দাবি, অনেক মৃতদেহই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জখমদের চিকিতসা চলছে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ বিকেলে জানান, উদ্ধারকাজ শেষের পথে। এখন লাইন মেরামত করে, ভাঙাচোরা বগিগুলি সরিয়ে দ্রুত ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। হতাহতদের মধ্যে এ রাজ্যের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা কাজের খোঁজে দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছিলেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। বিকেলে ঘটনাস্থলে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি ওই দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে বলেন, দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।
বিভিন্ন মহল থেকে শুক্রবার সন্ধ্যার ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পিছনে রেলের গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর দায় এড়াতে পারেন না। তিনি বন্দে ভারত উদ্বোধন করতে সবার আগে সবুজ ঝান্ডা হাতে দাঁড়িয়ে পড়েন। আর সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা ভাবেন না। অভিষেক রেলমন্ত্রীর ইস্তফাও দাবি করেন। তৃণমূল নেতার আরও প্রশ্ন, রেলে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বসানোর কী হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুপুরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রীর সামনেই বলেন, এর পিছনে অন্য কিছু আছে কি না, খতিয়ে দেখা উচিত। তিনি রেলের কোনও সমন্বয় নেই বলেও অভিযোগ করেন। মমতা বলেন, রেলকে উপেক্ষা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগে রেল বাজেট আলাদা করে হত। এখন সেটাই তুলে দেওয়া হয়েছে। সিপিএম সাংসদ এবং বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, এটা পরিকল্পিত গণহত্যা।
আরও পড়ুন: Coromandel Express Accident| ধ্বংস্তূপ সরিয়ে কবে স্বাভাবিক হবে পরিষেবা, জানতে চায় আমজনতা
শুক্রবার সন্ধ্যায় বালেশ্বরের কাছে চেন্নাইগামী শালিমার-করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়। পাশের লাইনে ছিল হাওড়ামুখী বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস। সেটিও লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডলের অভিঘাতে। পাশে লুপ লাইনে ছিল একটি মালগাড়ি। করমণ্ডলের একাধিক বগি মালগাড়ির উপরে উঠে পড়ে। করমণ্ডল এবং বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেস, দুটি ট্রেনেরই গতি ছিল বেশি। বেঙ্গালুরু এক্সপ্রেসের তেমন কোনও ক্ষতি না হলেও করমণ্ডলের বগিগুলি একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। হাওড়ামুখী ট্রেনের কোনও যাত্রীর কোনও ক্ষতি হয়নি। করমণ্ডলের যাত্রীরাই রয়েছেন হতাহতের তালিকায়। বগিগুলির তলায় চাপা পড়ে যাত্রীরা। প্রথমে স্থানীয়রাই উদ্ধারকাজে হাত লাগান। পরে রেল, পুলিশ, দমকল, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী আসে। যাত্রীদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। উদ্ধারকারীরা গ্যাসকাটার দিয়ে বগিগুলি কেটে প্রচুর দেহ উদ্ধার করেন। এদিন সকালে রেল লাইনেই সার দিয়ে মৃতদেহ রেখে দেওয়া হয় সাদা চাদরে ঢেকে। পাশাপাশি চলতে থাকে উদ্ধারের কাজ। অনেকের কাটা হাত, পা মেলে ধ্বংসস্তূপ থেকে। রেলের লাইন পর্যন্ত বেঁকে যায়, তার ছিঁড়ে পড়ে। এই মৃত্যুর মিছিল দেখে উদ্ধারকারীরাও হতবাক হয়ে যান। স্বজনহারাদের ভিড় জমে যায় অকুস্থল বাহানাগা বাজারে। রাতেই রেল মৃত এবং আহতদের পরিবার পিছু আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করে।
এদিন সকালে ঘটনাস্থলে যান রেলমন্ত্রী, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, তাঁর মন্ত্রিসভার আরও অনেক সদস্য। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেল যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গিয়েছিলেন বাংলার রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসও। দক্ষিণ পূর্ব রেলের দাবি, মঙ্গলবার নাগাদ সব কিছু সরিয়ে রেল চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে। এই দুর্ঘটনার জন্য শনিবার দক্ষিণ পূর্ব রেলের প্রায় সব ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। অল্প কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হয়।