মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি (Sagardighi) বিধানসভা কেন্দ্রের (Assembly Constituency) উপনির্বাচনে (By Election) বাম-কংগ্রেস জোটের (Left-Congress) কংগ্রেস (Congress) প্রার্থী বায়রন (Byron Biswas) বিশ্বাস ২২ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হলেন। তৃণমূল প্রার্থী (TMC Candidate) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Debashis Banerjee) হারিয়ে রাজ্য বিধানসভায় খাতা খুললেন কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন। বিজেপি প্রার্থী দিলীপ সাহা তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত সাহা সাগরদিঘি কেন্দ্রে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতেই এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। একুশের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বামেরা একটিও আসন পায়নি। বিরোধী বলতে শিবরাত্রির সলতের মতো ছিলেন শুধু আইএসএফের একমাত্র বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি।
সাগরদিঘিতে তৃণমূলের হারের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে বসে বৃহস্পতিবার বলেন, এই হার থেকে আমরা শিক্ষা নেব। সাগরদিঘিতে অনৈতিক জোট হয়েছিল। হারের জন্য কাউকে দোষ দেব না। বাম, কংগ্রেস, বিজেপিকে হারাতে তৃণমূল একাই যথেষ্ট।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: সাগরদিঘিতে অনৈতিক জোট, হারের পর প্রতিক্রিয়া মমতার
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জোটের কংগ্রেস প্রার্থী বায়রনের জয় রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেস এখানে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করার পর বামেদের এই কেন্দ্রে প্রার্থী না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সেই অনুরোধ মেনে সিপিএম বা বামেরা এই কেন্দ্রে প্রার্থী না দিয়ে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করে। সিপিএম-সহ বাম শরিকদলের কর্মী-সমর্থকরা কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন। মহল্লা মহল্লায় ভোটের দিন বাম-কংগ্রেস সমর্থকরা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। ফলে শাসকদল ভোট লুঠ করার চেষ্টা করতে পারেনি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারিতে ভোট হয়েছে। তাই ভোট নিয়ে কোনও পক্ষই কোনও অভিযোগ তোলার সুযোগ পায়নি। বরং তৃণমূল নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, একটা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য এত কেন্দ্রীয় বাহিনীর কী দরকার। শাসকদলের নেতাদের দাবি ছিল, রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট করানো যেত।
আবাস যোজনায় দুর্নীতি, শিক্ষায় নিয়োগ কেলেঙ্কারি, গরু পাচার ইত্যাদি ইস্যুতে তৃণমূল একটু কোণঠাসা ছিল। তবু তৃণমূল এই আসনটি দখলে রাখতে চেষ্টার খামতি রাখেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না গেলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শাসকদলের তাবড় নেতা-মন্ত্রী প্রচারে গিয়েছেন সাগরদিঘিতে। অভিষেক প্রচারে গিয়ে বিজেপি-কংগ্রেস আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছিলেন কংগ্রেস এবং বিজেপি প্রার্থীর পুরনো ছবি দেখিয়ে। একই সঙ্গে ভোটের মুখেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর বিরুদ্ধে মহিলাঘটিত অভিযোগ এনে তাঁর প্রার্থীপদ বাতিলের দাবি জানায় নির্বাচন কমিশনের কাছে। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, ভোটে হার নিশ্চিত বুঝেই তৃণমূল মনগড়া অভিযোগ এনেছে। ভোটের ফলাফলে দেখা গেল, তৃণমূলের ওই প্রচার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।
আরও পড়ুন: Supreme Court: প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের কড়া ধমক সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে
সাগরদিঘি কেন্দ্রে প্রায় ৬৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। এতদিন সংখ্যালঘু ভোট প্রায় একচেটিয়া ছিল তৃণমূলের দখলে। এবার উপনির্বাচনের ফলের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু ভোট কিছুটা হলেও জোটের পক্ষে গিয়েছে। একইভাবে হিন্দু ভোটও বিজেপির থেকে বেশ কিছুটা সরে গিয়েছে। তার জন্যই বিজেপি সম্ভবত তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের দাবি, আবাস যোজনা, নিয়োগ, গরু পাচারের মতো দুর্নীতির ইস্যুগুলি তারা এই ভোটে কাজে লাগাতে পেরেছে। তিনি বলেন, কংগ্রেস যে মরে যায়নি, তা ফের প্রমাণ হল। পাশাপাশি এই ফল বুঝিয়ে দিল, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেস জোট ছাড়া উপায় নেই। আগামিদিনে এই জোটই তৃণমূল এবং বিজেপিকে পর্যুদস্ত করবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও আগেই বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটে জোট নিয়ে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলব। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ফল পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাম-কংগ্রেস জোটের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করবে।
সাধারণত, উপনির্বাচনের ফলাফল শাসকদলের অনুকুলেই যায়। এটাই ট্রেন্ড। কিন্তু সাগরদিঘির উপনির্বাচন সেই ট্রেন্ডকেও ভেঙে দিল। গত বিধানসভা ভোটের পর যে কয়টি উপনির্বাচন হয়েছে, তার সব কয়টিতেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। ব্যতিক্রম ঘটল সাগরদিঘিতেই।
এই জয় কংগ্রেসকে রাজ্য রাজনীতিতে কিছুটা স্বস্তি দিল। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে অধীর দেখিয়ে দিলেন, তাঁর নেতৃত্বেই কংগ্রেস এই সংকটকালেও জয় আনতে পারে। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক পর কংগ্রেস সাগরদিঘিতে জয়ের মুখ দেখল। ১৯৭২ সালের পর থেকে একটানা বামেরাই জিতে এসেছে এই কেন্দ্রে। তৃণমূলের হয়ে পরপর তিনবার সাগরদিঘিতে জয়ী হয়েছিলেন সুব্রত সাহা।