কলকাতা: ১ জুলাই থেকে রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি বাস চালুর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে পরিষেবা শুরু করার কথা জানানো হয়েছিল। বাস মালিক সংগঠনগুলি যদিও জানিয়ে দিয়েছিল, ভাড়া না বাড়ালে রাস্তায় বেসরকারি বাস নামবে না।
ভাড়া পুর্নবিন্যাসের জন্য রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। তবে সেই কমিটি ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও গাইডলাইন দেয়নি। তাই হয়ত প্রথম দিনে তেমন ভাবে রাস্তায় নামল না বেসরকারি বাস। আগের ভাড়ায় আর বাস চালানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে বাস মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু দেখা যায়নি বেসরকারি বাস। সরকারি বাস থাকলেও রাস্তায় বেসরকারি বাস ছিল হাতেগোনা। ধর্মতলা, শ্যামবাজার, শিয়ালদহ থেকে শুরু করে হাজরা, কালীঘাট, বেহালা- সর্বত্রই একই চিত্র।
বিধিনিষেধে কিছুটা ছাড় মিললেও বাস পেতে রীতিমতো হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে । বেসরকারি বাসে কার্যত ঠাসাঠাসি ভিড় দেখা গিয়েছে। ৫০ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার নির্দেশিকা থাকায় অনেক সরকারি বাস যাত্রী তুলতে পারেনি। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যাত্রী থাকলেও বাসের সংখ্যা হাতে গোনা।
১৫ জুন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ১ জুলাই থেকে গণ পরিবহণ বন্ধ থাকায় বেসরকারি সংস্থাগুলিকেই কর্মীদের যাতায়াতের বন্দোবস্ত করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই ব্যবস্থা করা হয়নি। পর্যাপ্ত বাসও ছিল না। বাধ্য হয়ে বহু গুণ বেশি টাকা খরচ করে অ্যাপ ক্যাবে করেই গন্তব্যে পৌঁছন অনেকে।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জ্বালানির দাম প্রতিদিন বাড়ছে। এই অবস্থায় এত কম জ্বালানিতে বাস চালাব কী করে? সে কারণেই অধিকাংশ বাস মালিক রাস্তায় বাস নামাননি।
ধর্মতলায় অপেক্ষারত এক যাত্রী বলেন, ‘সরকারি বাস থাকলেও বেসরকারি বাস প্রায় নেই বললেই চলে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাচ্ছি না।’ বৃহস্পতি বার ছুটির দিন হওয়ায় সরকারি অফিস বন্ধ। সে কারণে যাত্রী অনেকটাই কম। শুক্রবার সমস্ত অফিস ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে চালু হলে অফিসযাত্রীরা হয়ত আরও বিপাকে পড়বেন।
পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সরকারি বাস অনেক চলছে। যাত্রীদের কথা ভেবে আমরা পর্যাপ্ত সরকারি বাস নামিয়েছি। আমরা বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলব। তাদেরও কিছু দাবি দাওয়া রয়েছে আমি জানি। সমস্যা দ্রুত মিটবে বলে আমি আশা করছি।’
লকডাউনের আগে কলকাতার রাস্তায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বেসরকারি বাস ও মিনিবাস চলত। গোটা রাজ্যে সেই সংখ্যাটা ছিল প্রায় ২৭ হাজার। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বেড়ে চলায় গণপরিবহণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সংক্রমণে লাগাম টানতে ১৬ মে থেকে পুরোপুরি বন্ধ ছিল বাস মিনিবাস পরিষেবা।
ভোটের পর থেকে বেড়েছে জ্বালানির দাম। ডিজেলের লিটার প্রতি দাম এখন ৯২ টাকা। গত এক বছরে লিটার পিছু ডিজেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা। ডিজেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেলেছে গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম। কিন্ত ভাড়া সে ভাবে বাড়েনি।