কলকাতা টিভি ডিজিটাল ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ। একটানা বৃষ্টি। ভাসছে বহু জেলা। আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ। জল জমে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় নেমেছে ধস। প্রাণও গিয়েছে অনেকের।
বাঁকুড়া
বাঁকুড়ার সিমলাপাল থানার পাথরডোবা গ্রামে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত ১। বৃষ্টির জেরে মাটির দেওয়াল ধসে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যাক্তির নাম আব্দুল ওয়াস খান(৬৫)।
অন্যদিকে, বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার সিদ্ধান্তডাঙ্গা গ্রামে দুই প্রতিবেশীকে নিয়ে বৃষ্টির সময় নিজের বাড়িতে বসে গল্প করছিলেন লখীন্দর সরেন নামে এক ব্যক্তি। সেই সময় মাটির দেওয়াল সহ বাড়ির একটা অংশ ভেঙ্গে পড়ে তাঁদের উপর। স্থানীয় মানুষ তিনজনকে উদ্ধার করে। নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় রাধানগর হাসপাতালে। সেখানে লখীন্দর সরেন (৬২) কে মৃত বলে ঘোষনা করেন চিকিৎসকরা। আহত বাকি দুজনকে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- নিম্নচাপের জের, প্রবল বর্ষণে ভাসছে গ্রাম-বাংলা
পশ্চিম বর্ধমান
লাগাতার বৃষ্টির জেরে ভাঙল মাটির ঘর। দেওয়াল চাপা পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। রঘুনাথগঞ্জ থানার জামুয়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোষপুকুর গ্রামের ঘটনা। মৃতের নাম নাটু মন্ডল(৭৬)।
জলপাইগুড়ি
কিছুক্ষণের ঝড় ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া পাতকাটা নাউয়া পাড়ার একাংশ। ভেঙে পড়েছে বেশ কিছু বড় গাছ। কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, কেউ আহত হয়নি।
শিলিগুড়ি
ধ্বসের ফলে বন্ধ হয়ে যায় শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক এর যোগাযোগ। ২৯ মাইল এলাকায় রাত দশটায় ধ্বস নামার ফলে রাস্তার একটি অংশ নদীগর্ভে চলে যায়। ধ্বস সরানোর কাজে হাত দিলেও বৃষ্টির জন্য কাজ ব্যাহত হয়।
অন্যদিকে, নির্মীয়মাণ সেবক-রংপো রেলপথেও নামল ধস। কাজ করার সময় জলের তোড়ে ভেসে গেলেন তিন শ্রমিক। একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা গেলেও দু’জনের খোঁজ মেলেনি।
হাওড়া
ইলেকট্রিক সুইচে হাত দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল যুবকের। শুক্রবার সকালে দাশনগর থানা এলাকার শিয়ালডাঙ্গা চাষীর মাঠ এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। মৃতের নাম হেমন্ত সিং ( ৩৯ )। ভারী বৃষ্টির জেরে ঘরের ভিতরে জল ঢুকে গিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে ঘরের ইলেকট্রিক সুইচ অফ করতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় হেমন্তের।
আরও পড়ুন- টানা বৃষ্টিতে হাওড়ায় বিপর্যস্ত রেল পরিষেবা, বাতিল বহু ট্রেন
দুর্গাপুর
দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর আকবর রোড থেকে বেনাচিতি যাওয়ার রাস্তায় প্রবল বৃষ্টির জেরে উলটে গেল গাছ। বন্ধ যানচলাচল। চরম দুর্ভোগ। স্থানীয়রা ওই গাছটিকে সরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। গরু বের করতে গিয়ে গোয়ালের দেয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হলো এক মহিলার।
পশ্চিম মেদিনীপুর
টানা বৃষ্টিতে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গিয়েছিল গোয়াল ঘরের মাটির দেওয়াল । তার ভেতরে বেঁধে রাখা ছিল গরু ছাগল। সেখান থেকে গরু বের করতে ঢুকে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গেলেন পুষ্প রুইদাস(৫৫) নামে এক প্রৌঢ়া। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।
মেদিনীপুর
দুদিন ধরে প্রবল বৃষ্টি ও জমা জলের কারণে দেওয়াল ভিজে একদিনেই ছটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ল মুগবাসানে। গত দুদিন ধরেই কেশপুরের বিভিন্ন অঞ্চল জলে ডুবে রয়েছে। রাজ্য সড়ক গুলির উপর জল। মুগবাসান গ্রামেও বহু মাটির বাড়িতে জল উঠে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিনভর পরিস্থিতি দেখার পরে শুক্রবার সকাল থেকেই বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছিলেন স্থানীয়রা। জল বাড়ছে দেখে আগাম আশঙ্কা করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরই পর পর ছ-টি বাড়ি ভেঙে পড়ে ওই গ্রামে। ওই বাড়ি গুলিতে ওই মুহূর্তে কেউ না থাকায় কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
পুরুলিয়া
টানা বৃষ্টির জেরে পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন। বর্ষার জল ঢুকেছে বাড়িতে। ভেঙে পড়েছে বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি। পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যুতের তারের উপর গাছ পড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এলাকা। টানা বৃষ্টির কারণে হঠাৎ করে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়ি। অল্পের জন্য বেঁচে যায় বাড়িতে থাকা দুইজন।
নদীয়া
গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে শান্তিপুর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মতিগঞ্জে শুক্রবার দুপুর বেলা ১১ টা নাগাদ একটি পুরানো বাড়ি ভেঙে পড়ে। আহত হয়েছে তিন শিশু। আহতদের শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। সম্ভবত টানা বৃষ্টিতে মাটির স্তর নরম হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি বলে মনে করা হচ্ছে।
আসানসোল
ভোর রাতে থেকে টানা বৃষ্টি পাতের ফলে জলমগ্ন হয়ে উঠেছে আসানসোল। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে আসানসোলের রেকেট কোলমেনে বাড়ির দেয়াল চাপা পড়ে মা ও দুই শিশু আহত হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা 5 বছরের নিখিল বাস্কিকে মৃত ঘোষণা করে। আর মা লক্ষ্মী ও দেড় বছরের শিশু কন্যা অনুষ্কাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পৌর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে মা ও ছেলের। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গিয়েছে।