বারাসত: গত ৪ এপ্রিল সিকিম (Sikkim) বেড়াতে গিয়ে বরফের তলায় চাপা পড়ে যাওয়ার সেই হাড়হিম করা মুহূর্তের কথা বাড়ি ফিরে শোনালেন বারাসতের (Barasat) তিন যুবক। রবিবার তাঁরা মৃত্যুর গুহা থেকে ফিরে এসেছেন বাড়িতে। তাঁরা হয়তো প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন, কিন্তু চোখের সামনে একাধিক মানুষের মৃত্যু দেখে আজও নিশ্চিন্তে দুচোখের পাতা এক করতে পারছেন না।
চোখ বুজলেই এখনও যেন ভেসে উঠছে সেই দৃশ্য। এত কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখার পর সেই স্মৃতি তাড়া করে বেড়াচ্ছে বারাসতের তিন যুবককে। টানা প্রায় আধঘণ্টা বরফের নীচে (Avalanche) চাপা পড়েও কোন এক ঐশ্বরিক ক্ষমতায় বেঁচে ফিরলেন বারাসতের তিন যুবক। তাঁদের মধ্যে একজন পুরোপুরি বরফের তলায় চাপা ছিলেন প্রায় আধঘণ্টার বেশি। বাকি দু’জনের শরীরের অধিকাংশ অংশটাই বরফে ঢাকা ছিল। নড়াচড়ার উপায় ছিল না। কেউ এসে উদ্ধার না করলে, কী ঘটে যেত তা ভাবলে এখনও গা শিউরে উঠছে।
আরও পড়ুন: Weather Forecast | গরমের দাপুটে ব্যাটিং, তিলোত্তমা ৪০ ছুঁতে পারে
বারাসত শহরের তিন যুবক সুমিত দাস, তথাগত রায়চৌধুরী ও অরিন্দম দাশগুপ্ত চলতি মাসের ২ তারিখ গ্যাংটকে (Gangtok) বেড়াতে যান। ৩ এপ্রিল রাতে তাঁরা গ্যাংটকের হোটেলে পৌঁছান। পরেরদিন দুপুরে গাড়ি ভাড়া করে তিনজনে ছাঙ্গু (Changu Lake), বাবা মন্দির (Baba Mandir) ও নাথুলা পাশ (Nathula Pass) বেড়াতে যান। সেইমতো সিকিমের ১৭ মাইলে বেড়াতে আসেন। ১৭ মাইল পর্যন্তই গাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি মেলে। যে শেয়ার গাড়িতে ওইদিন বেড়াতে বেরিয়েছিলেন, সেই গাড়ির চালক বলে আরও কিছুটা যাওয়ার অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় সেই মতো আরও কিছুটা এগিয়ে যান তাঁরা।
অন্য পর্যটকদের মতোই একটি ঝরনার পাশে ছবি তুলছিলেন তিন বন্ধু সহ গাড়ির সবাই। হঠাৎ করে কেঁপে উঠল গোটা এলাকা। সেকেন্ডের মধ্যে ভয়ঙ্কর বরফের চাঁই এসে অন্যদের মতো তাঁদেরও কিছুটা দূর ঢেলে নিয়ে গিয়ে ঢাকা দিয়ে দেয়। বরফের তলায় প্রায় আধঘণ্টারও বেশি সময় চাপা পড়ে ছিলেন সুমিত দাস। অরিন্দম ও তথাগতদের কোমর থেকে নীচের দিক পুরোটাই বরফে চাপা পড়ে যায়।
সুমিত দাস দূর থেকে বরফ ধেয়ে আসছে দেখে একটু সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একটি পা সরানোর আগেই বরফ তাঁর উপর পড়ে যায়। প্রায় ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় তাঁরা বরফের তলায় ছিলেন বলে জানান দুই বন্ধু। মুহূর্তের মধ্যে চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়। জ্ঞান হারান সুমিত। হয়তো সেই কারণেই সুমিত আজ সকলের মধ্যে আছে, তা না হলে হার্টফেল করতে পারত বলে ধারণা সকলের। সুমিতকে কিছুক্ষণ পর সেনা জওয়ানরা (Indian Army) বেলচা দিয়ে বরফ কেটে বের করেন। তারপর জ্ঞান ফেরে তাঁর। সেনা জওয়ানরা তাঁকে প্রথমে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান। পরে গ্যাংটকের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। এখানে এসেও তাঁদের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।