নারদা মামলায় চার নেতা মন্ত্রীকে জেল থেকে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে দুই বিচারপতির মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল তাঁদের জেল হেফাজত থেকে গৃহবন্দি রাখার কথা জানান। আর তা নিয়েই অপর বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আপত্তি জানান। হাই কোর্টের কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতির আদেশ দেখে বিশেষজ্ঞ মহলের মনে হচ্ছে এই রাজ্যটাকেও আগামী দিনে জম্মু কাশ্মীর বানাতে চাইছে কেন্দ্র? এইভাবে গৃহবন্দির ঘটনা তো জম্মু কাশ্মীরেই ঘটেছে। যেখানে নির্বাচিত মেহেবুবা মুফতির সরকারকে ফেলে দিয়ে কেন্দ্র ৩৭০ ধারা বিলোপের আড়ালে ওখানকার তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সহ সব প্রথম সারির নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়। বাংলায় নির্বাচনে হেরে গিয়ে মোদী অমিত শাহ যে নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে তা নিয়ে এরই মধ্যে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছে সব বিরোধী দল। দুই বিচারপতির রায় নিয়ে এই মতভেদের ফলে বৃহত্তর বেঞ্চে এই মামলার শুনানির আর্জি জানান হয় অভিযুক্তদের তরফে। অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন আজই পরিস্থিতির বিচার করে বৃহত্তর বেঞ্চের গঠন করা উচিত। কারণ রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ফিরহাদ হাকিম সহ সকলের মুক্তি আবশ্যক। কারণ ফিরহাদের নেতৃত্বে কলকাতা পুরসভা কোভিড মোকাবিলায় মাঠে নেমে কাজ করছে। তাঁকে জেলে বন্দি করে রাখলে সেই কাজ ব্যাহত হবে। এরই পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কাছে মনু সিংভির আবেদন সিবিআইয়ের আবেদনও তো সঙ্গে সঙ্গেই শোনা হয়েছিলো ও ওই রাতেই রায় দেওয়া হয়েছিল। তবে এক্ষেত্রে কেনও বিলম্ব করা হবে? কারণ বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করতে বেশি সময় লাগে না। তাই তাড়াতাড়ি বেঞ্চ গঠন করে এই মামালার শুনানি করে রায় দেওয়া হোক। কারণ প্রত্যেকেই জেল হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের বয়স ও শারীরিক বিষয়টিও এই অতিমারির সময় মাথায় রাখার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন অভিষেক মনু সিংভি। এরপরেই দুপুর ২টোয় ৩ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করতে চলেছে আদালত বলে সূত্রের খবর। পরে সন্ধ্যায় জানান হয় ৫ বিচারপতিকে নিয়ে বৃহত্তর বেঞ্চে আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি শুরু হবে। তবে আদালত জানিয়েছে পরবর্তী রায় না বের হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বাড়ি থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রশাসনিক কাজকর্ম চালাতে পারবেন। কোনও মতেই তাঁদের সঙ্গে কোনও সরকারি আধিকারিক বা কেউ দেখা করতে পারবেন না। দেখা করলেও কি কারনে কতক্ষণ ছিলেন তার সম্পূর্ণ তথ্য রাখতে হবে।
শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ কলকাতা হাই কোর্টে শুরু হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে নারদ কান্ডের শুনানি। বৃহস্পতিবার এই শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণ বশত তা পিছিয়ে শুক্রবার সকাল ১১ টা করা হয়। অপরদিকে এই মামলা ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বদলে কলকাতা হাই কোর্টে স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছেন সিবিআইয়ের তরফের আইনজীবী। এই মর্মে তারা কলকাতা হাই কোর্টে পিটিশন দাখিল করেছে। তবে তা নিয়ে এদিন প্রধান বিচাপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এই শুনানি অন্য বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। যার ফলে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে জামিন পান কি না, তা নিয়ে কি রায় দেয় আদালত, সে দিকেই তাকিয়ে বঙ্গবাসী থেকে রাজ্য এবং দেশের রাজনৈতিক মহল।