কলকাতা: অনেকেই বলেন এ রাজ্যে ভালো ডাক্তার রয়েছেন। রয়েছে ভালো চিকিৎসা পরিকাঠামো। তবুও কেন দক্ষিণ ভারতে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এবার ভেলোর খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি বিল কলকাতার সমস্ত বড় বেসরকারি হাসপাতালকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পাঠাচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন।
সোমবার এই কথা জানিয়েছেন রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১৭ জানুয়ারি বিকাশ চন্দ্র মন্ডল নামে এক ব্যক্তি ভোরবেলায় মোটরবাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। প্রথমে একটি সরকারি হাসপাতালে যান। তারপর বারাসাতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান সেখানে সাড়ে চার ঘন্টায় ১৭ হাজার টাকার বিল বানানো হয় । শুধুমাত্র সিটিস্ক্যান আর প্রাথমিক চিকিৎসার ছাড়া কিছুই হয়নি।
অবশ্য রোগীর পরিজনেরা প্রতিবাদ করায় ৯ হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়। বিল বাবদ নেওয়া হয় ৮ হাজার টাকা নেওয়া হয় । এরপর তাঁরা রওনা দেন কলকাতার উদ্দেশ্যে। বাইপাসের ধারে মুকুন্দপুরের নামকরা বড় বেসরকারি হাসপাতাল ফর্টিসে ভালো চিকিৎসার জন্য তিনি ভর্তি হন।
আরও পড়ুন-চিকিৎসা না করে ফেলে রাখার অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা
অভিযোগ ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি থাকার পর তাঁরা ডিএএমএ নিয়ে ভেলোর যেতে বাধ্য হন। কারণ রোগীর পরিবারের অভিযোগ এই ১০ দিনের মধ্যে প্রথমে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন দুর্ঘটনায় তেমন কিছু হয়নি। অথচ রোগীর পায়ে ব্যথা শুরু হয়। ক্রমশ সেটা গাংরিনে পরিণত হওয়ার দিকে এগোয়। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন পা কেটে বাদ দিতে হবে। ভয় পেয়ে যান রোগীর বাড়ির লোকেরা।
নিজেদের দায়িত্বে রোগীকে ছাড়াতে গিয়ে দেখেন ১০ দিনে ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা বিল হয়েছে। কোনও ছাড় দেয়নি হাসপাতাল। জানিয়ে দেয় এই রোগী যেহেতু করোনা আক্রান্ত নয় তাই ছাড়ের প্রশ্ন নেই । সেই বিলে ১ লক্ষ টাকা শুধুমাত্র কনজিউমেবলসের জন্য ধার্য করা হয়েছিল। অর্থাৎ গজ, তুলো ইত্যাদি যা পায়ের ক্ষত স্থান পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়েছে তার খরচ।
আরও পড়ুন- এনসেফালাইটিস-নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াগরাজে হাসপাতালে ভর্তি ১৭১ শিশু
এই বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যানের বলেন, ভেলোরে গিয়ে ১৯ দিন চিকিৎসা করানো হয় ওই রোগীকে। চিকিৎসার পর পা কেটে বাদ দিতে হয়নি বরং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি । অথচ বিল হয়েছে মাত্র ১ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার পর আজ কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বাবু জানিয়েছেন, ফর্টিস হাসপাতালকে সঠিক করে বিল বানাতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়, ভেলোরে ১৯ দিনে সুস্থ করে পা কেটে বাদ না দিয়েও বিল হল ১ লক্ষ 19 হাজার টাকা। অথচ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল ১০ দিনে শুধুমাত্র কনজিউমেবলস এর জন্য বিল করেছে ১ লক্ষ টাকা । এতেই বোঝা যায় কেন মানুষ চিকিৎসার জন্য দক্ষিণের দিকে দৌড়ন।
আরও পড়ুন – লক্ষ্মীর ভাণ্ডারসহ ১৯ প্রকল্পের কাজ কতদূর, আধিকারিকদের তলব নবান্নের
এরপরেই এই বিলটি কলকাতার সমস্ত বড় বেসরকারি হাসপাতাল কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলি বুঝতে পারে যে কেন মানুষ দক্ষিনে দৌড়ন। আর জাতে কলকাতার বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিজেদের খামতি বুঝতে পারে।