কলকাতা: রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে (Rampurhat violence) সোমবার বিধানসভায় তুলকালাম ঘটল। বিজেপি ও শাসকদলের বিধায়কদের মধ্যে চলল বচসা (WB Assembly Clash) ও ধাক্কাধাক্কি। দু পক্ষের মধ্যে তুমুল বচসাও হয়। অধিবেশনের শুরুতেই আগের কয়েকদিনের মতো এদিনও বিজেপি সদস্যরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন। চলে স্লোগান। পালটা স্লোগান দেন শাসকদলের বিধায়করা। তাদের মধ্যে অনেকে ওয়েলে নেমে আসেন। অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের থেকে বিধায়কদের দূরে সরে যাওয়ার অবেদন করেন। তার মধ্যেই দু দলের মধ্যে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। ঘুসোঘুসিতে ঝরল রক্তও। বিজেপি বিধায়করা ওয়াক আউট করেন।
এদিন বিধানসভায় অধিবেশন শুরু হতেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ (WB Assembly TMC BJP Clash) দেখাতে শুরু করেন। রামপুরহাট হত্যাকাণ্ড সহ বিভিন্ন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে চলতে থাকে স্লোগান। বিজেপি বিধায়কদের হাতে নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দু’ঘণ্টা বিধানসভায় আলোচনার দাবি জানান শুভেন্দু। বিজেপি বিধায়করা (Suvendu Adhikari) বিধানসভার ওয়েলে নেমে আসেন। হইহট্টগোলের মধ্যে কিছুক্ষণ পর শাসকদলের অনেক বিধায়ককে ওয়েলে নেমে আসতে দেখা যায়। দু’পক্ষের মধ্যে স্লোগান-পালটা স্লোগান চলে, চলে বচসাও।
WB | A ruckus erupted inside state Assembly in Kolkata, over Birbhum violence case
Opposition demanded discussion over law & order on the last day at least, govt declined. They brought Kolkata police personnel in civil dress to clash with 8-10 of our MLAs: LoP Suvendu Adhikari pic.twitter.com/RbYsVWba2M
— ANI (@ANI) March 28, 2022
অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সভায় শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান। তিনি বিজেপি বিধায়কদের বলেন, মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের সম্মান দিন। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও দুই পক্ষের বিধায়কদের শান্ত করতে দেখা যায়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির কোনও বদল ঘটে না। মুহূর্তের মধ্যে দুই পক্ষের তুমুল ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। বিধানসভার নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে বিজেপি বিধায়করা বচসায় জড়িয়ে পড়েন। অধ্যক্ষের আসন ঘিরেও বিক্ষোভ চলতে থাকে। একসময় তৃণমূলের মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার তুমুল হাতাহাতি হয়। বিজেপির নরহরি মাহাতোকে মাটিতে ফেলে মারতে দেখা যায় শাসকদলের দুই বিধায়ককে।
প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের অভিযোগ, শুভেন্দু অধিকারী ঘুসি মেরে তাঁর নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন। ভেঙে দেওয়া হয়েছে চশমাও। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন শুভেন্দু। একসময় অধ্যক্ষকে বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, আপনারা মহিলাদের পর্যন্ত ধাক্কাধাক্কি করছেন, মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের উপর হামলা করছেন। এটা ঠিক হচ্ছে না। বারবার বলছি, আপনারা সরে যান। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বিধানসভায় এই পরিস্থিতি চলতে থাকে। এরপর জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে দিতে বিজেপি বিধায়করা সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। তুমুল গোলমাল চললেও অধ্যক্ষ বিধানসভার অধিবেশন মুলতুবি করেননি। তিনি সভার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
আরও পড়ুন: TMC-BJP Clash Assembly: শুভেন্দুর ঘুসিতে নাক ফাটল তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের, ভর্তি এসএসকেএমে
পরে লবিতে বিরোধী দলনেতা বলেন, শাসকদল আজ বিধানসভায় বিরোধীদের উপর নজিরবিহীন তাণ্ডব চালিয়েছেন। এই প্রথম কলকাতা পুলিসের লোকজনকে সাদা পোশাকে বিধানসভায় ঢুকিয়ে বিরোধীদের মারা হয়েছে। আজকের দিনটা বিধানসভার ইতিহাসের কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। চন্দনা বাউড়ি, পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়, মনোজ টিগ্গা সহ আমাদের একাধিক বিধায়ক আক্রান্ত হয়েছেন। রক্ত ঝরেছে।
বিজেপির বিরুদ্ধে পালটা গুন্ডামির অভিযোগ আনেন পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর অভিযোগ, গত কদিন ধরেই বিজেপি বিধায়করা সভায় নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিধানসভায় এদিনের ঘটনা নিয়ে দার্জিলিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয় ফিরহাদের। পরে অধ্যক্ষ জানান, জখম তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারকে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Rampurhat Violence: লড়াই শেষ, রামপুরহাটে দগ্ধ আরও ১ মহিলার মৃত্যু