কলকাতা : ময়দান যে অপরাধের স্বর্গরাজ্য তা আরও একবার প্রমাণিত। নজরবন্দি শিথিল হতেই অপরাধীরা ফের থাবা বসাল ময়দানে। বুধবার ভোরে ময়দানে ছিনতাইয়ের শিকার ৩ শহরবাসী। যদিও বুধবার সকালের ওই ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত পদক্ষেপ নেয় কলকাতা পুলিশ। যুগ্ম কমিশনার মুরলীধর শর্মার নির্দেশে বৃহস্পতিবার দুপুরে ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
ময়দানে সকালবেলা হাঁটতে যান শহরের বহু নাগরিক। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার হাই প্রোফাইল। কেননা ময়দান কলকাতার ফুসফুস। কলকাতা পুলিশের বহু অফিসারও নিয়মিত ওখানেই শরীর ফিট রাখতে মর্নিং ওয়াকে যান। কলকাতা পুলিশের অপরাধ দমন শাখার যুগ্ম কমিশনার মুরলীধর শর্মার বক্তব্য, ‘আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত তাদের গ্রেফতার করেছি। অপরাধের শাস্তি এরা পাবেই। হ্যাঁ, ময়দানের নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন : সাতসকালে ফোর্ট উইলিয়ামের কাছে যুবককে ধারাল অস্ত্রের কোপ
বৃহস্পতিবার থেকেই ময়দানে চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আলাদা নজর দিচ্ছে লালবাজার। সূত্রের খবর, এবার থেকে প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টে থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা। সেইসঙ্গে থাকবে মোট ৪টি পুলিশ টহলদারি গাড়ি ও বাইক। এছাড়াও ময়দান চত্বরে মোতায়েন থাকবে ৪টি পিকেট। কাজ হবে সন্দেহভাজনকারীদের উপর নজর রাখা, প্রয়োজন হলে তাঁদের আটক করা। সেইসঙ্গে মর্নিং ওয়াক করতে আসা সাধারণ মানুষের উপরেও নজর রাখবে কলকাতা পুলিশ। প্রতিদিনই ওই এলাকায় বহু বয়স্ক মানুষ মর্নিং ওয়াক করতে আসেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখে ময়দান চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স রাখার অনুরোধও করা হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের কাছে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, ময়দানে অপরাধের ইতিহাস নতুন নয়। আজ থেকে বছর কুড়ি আগে এরকমই এক সকালে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে এক মহিলা ক্রীড়াবিদের সঙ্গে। বাধা দিলে ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাঁকে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। ঘটনার প্রতিবাদে তাঁর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা।
ওই ঘটনার দু’বছর পর ময়দান চত্বর অর্থাৎ রেড রোডে দুই ইজরায়েলি তরুণীর শ্লীলতাহানি ঘটনাও মনে করায়। সেই ঘটনাতেও বেকায়দায় পড়তে হয়েছিল কলকাতা পুলিশকে। কিন্তু দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করায় মুখরক্ষা হয় লালবাজারের।
শুধু তাই নয়, ২৩ বছর আগে উত্তরপ্রদেশের স্পেশাল টাস্কফোর্স এক অপরাধী দলকে ধাওয়া করে এসে হাজির হয় এই ময়দানে। সেই অপরাধী দলের নেতা ছিল উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত দুষ্কৃতী বাবলু শ্রীবাস্তব। অপরাধী দলের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের গুলির লড়াই হয়েছিল পার্কস্ট্রিটে।
তারপর থেকেই ময়দানে মর্নিং ওয়াক করতে আসেন যাঁরা, তাঁদের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল সাদা পোশাকধারী পুলিশ।