দেবাশিস দাশগুপ্ত, কলকাতা
আসন নিয়ে বামফ্রন্টের জট কেটেও কাটছে না। বড় শরিক সিপিএম চাইছে, তিন ছোট শরিক আরএসপি, ফব এবং সিপিআই তাদের ভাগ থেকে একটি করে আসন ছাড়ুক। তাহলেই কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু শরিকরা সিপিএমের (CPM) দাবিমতো একটি করে আসন ছাড়তে নারাজ। শরিকদের আরও অভিযোগ, কংগ্রেসের সঙ্গে যা কথা হচ্ছে, তা সিপিএমের। কংগ্রেস বামফ্রন্টের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কথা বলেনি। শরিক নেতাদের বক্তব্য, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়ে সিপিএম শরিকদের কাঁচি করতে চাইছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এই অবস্থায় রবিবার বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সিপিএম মনে করছে, শরিকরা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যাবে। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত যা খবর, তাতে তিন শরিকই অনড়।
বামফ্রন্ট সূত্রের খবর, সিপিএম এখনও কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতায় আশাবাদী। তবে আইএসএফের উপর সিপিএম নেতারা রেগে আছেন। আইএসএফ একতরফা আটটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় ফ্রন্ট চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ। আইএসএফে্র সঙ্গে কথা বলার দায়িত্বে রয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Mohammed Salim) এবং দলের রাজ্যসভা সদস্য বিকাশ ভট্টাচার্য (Bikash Bhattacharjee)। সিপিএম নেতারাও মনে করছেন, আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতার আর জায়গা নেই। বিশেষ করে শ্রীরামপুরে সিপিএমের তরুণ প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের বিরুদ্ধে আইএসএফ প্রার্থী দিয়ে দেওয়ায় নেতারা খুবই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।
আরও পড়ুন: প্রথম দফার ভোটের জন্য ২৫ মার্চে আসছেন ৬ পর্যবেক্ষক
আরএসপির বক্তব্য, জয়নগর তাদের বহু পুরনো আসন। তা ছাড়ার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। তাছাড়া কংগ্রেস প্রথমে সেই আসনের দাবিও জানায়নি। এখন জয়নগর ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। দলের এক নেতা জানান, জয়নগরে বামফ্রন্ট স্তরে আরএসপি প্রার্থীর হয়ে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। দেওয়াল লেখা প্রায় শেষ।
একইভাবে সিপিএম চাইছে, ফরওয়ার্ড ব্লক পুরুলিয়া আসনটি কংগ্রেসের জন্য ছেড়ে দিক। ফবর দাবি, পুরুলিয়া তাদের ট্র্যাডিশনাল আসন। সেটা ছাড়ার কথাই নেই। গত বামফ্রন্ট বৈঠকে তা নিয়ে ফবর রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিপিএম নেতাদের তুমুল কথা কাটাকাটি হয়। নরেন বলে, এরকম জোরাজুরি করলে ফ্রন্ট রেখে লাভ কী। কংগ্রেস পুরুলিয়ায় নেপাল মাহাতর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। ফব নেতারা বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। পুরুলিয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাহলে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে।
আর এক শরিক সিপিআইয়ের বহু পুরনো আসন হল বসিরহাট। ১৯৫২ সাল থেকে বসিরহাটে সিপিআই প্রার্থী জয়ী হয়েছেন বহুবার। ইন্দ্রজিত গুপ্ত, অজয় চক্রবর্তীর মতো নেতারা ওই আসন থেকে জয়ী হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। বসিরহাট নিয়েও সিপিআই নেতাদের সঙ্গে সিপিএম নেতাদের তর্ক হয়। সব মিলিয়ে তিন শরিক আসন ছাড়তে রাজি নয়। সিপিএম বলছে, বিজেপি, তৃণমূলকে দূরে রাখতে সকলকেই একটু করে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এক সিপিএম নেতা বলেন, আমরাও তো ছাড়ছি। বৃহত্তর স্বার্থেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেলিম বলেন, একটু একটু করে সেলাই করছি। কাপড় বড় হলে কিছুটা কাটতে হবে। ছোট হলে কিছুটা সেলাই করতে হবে।
এদিকে বামফন্ট দুতিন দিনের মধ্যে বাকি আসনগুলির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিতে চায়। সিপিএম সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে সম্ভবত প্রার্থী হচ্ছেন দলের রাজ্য সম্পাদক সেলিম নিজে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, সেলিম মুর্শিদাবাদে দাঁড়ালে আমাদের আপত্তি নেই।
অন্য খবর দেখুন