কলকাতা: কুয়াশায় আচ্ছন্ন তাহেরপুর (Narendra Modi meeting in Nadia Taherpur) যাওয়া হল না, খারাপ আবহাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত কলকাতা থেকে অডিও বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। যেহেতু তাহেরপুর আর নদিয়া জেলা মতুয়া অর্ধসিদ্ধ এলাকা। অন্যদিকে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গে এসআইআরের কাজ। যা নিয়ে রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক কম হয়নি। খসড়া ভোটার তালিকায় প্রচুর মতুয়ার নাম বাদ যাওয়ায় সংশয়ে করছেন তাঁরা। সেই তাহেরপুরের মোদির সভা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বক্তৃতায় মতুয়াদের উল্লেখ থাকলেও তাঁদের এসআইআর-উদ্বেগ কমানোর মতো কোনও বার্তা ছিল না। তাই প্রধানমন্ত্রীর ফোন-ভাষণ শেষ হওয়ার পরে মতুয়া সমাজের অনেকে হতাশা নিয়েই তাহেরপুরের মাঠ ছাড়েন। সন্ধ্যায় সেই সব না-বলা প্রসঙ্গ একে একে লিখে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করলেন মোদি। তিনি বলেন, আমি প্রত্যেকটি মতুয়া ও নমশূদ্র পরিবারকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমরা সর্বদা তাঁদের সেবায় নিয়োজিত থাকব। প্রত্যেকে মতুয়াকে সিএএ-র মাধ্যমে রাজ্যে বসবাসের থাকার বন্দোবস্ত করে দেব। আর এখানেই প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর এই ফাঁদে কী মতুয়ারা কী পা দেবেন।
মতুয়াদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে মোদি লেখেন, CAA বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের জোরেই মতুয়ারা এ দেশের নাগরিক। প্রত্যেক মতুয়া এবং নমশূদ্র পরিবারকে পাশে থাকার ‘নিশ্চয়তা’ দিয়েছেন। মতুয়া ও নমশূদ্ররা) তৃণমূলের দয়ায় এখানে থাকছেন না। আমাদের সরকারের আনা সিএএ-র সৌজন্যে মর্যাদার সঙ্গে ভারতে বাস করা তাঁদের অধিকার। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকার শপথ নেওয়ার পরে আমরা মতুয়া এবং নমশূদ্র সমাজের জন্য আরও অনেক কিছু করব। প্রধানমন্ত্রীর পোস্টে যুবভারতীতে লিওনেল মেসিকে নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান ভেস্তে যাওয়ার প্রসঙ্গও এসেছে। লিখেছেন, ‘‘তৃণমূলের সৌজন্যে পশ্চিমবঙ্গের মতো একটা ফুটবলপ্রেমী রাজ্যের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাটি অজস্র ফুটবলপ্রেমী তরুণের মন ভেঙে দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ‘বাংলায় সুযোগ দিয়েই দেখুন…’,ভোটের বাদ্যি বাজিয়ে পরিবর্তনের ডাক মোদির
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য মতুয়ারা কী বিশ্বাস করবেন। এর ফাঁদে পা দেবেন মতুয়ারা, এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী যখন বলছে সিএএ-র মাধ্যমে মতুয়ারা এদেশে থাকার বন্দোবস্ত করে দেবে, সেই কথার উপর ভিত্তি করে রাজ্য বিজেপি জেলায় জেলায় সিএএ-র সহযোগি ক্যাম্প করেছে। যেখানে এই সমস্ত মতুয়ারা সিএএ-র ফর্ম ফিলআপ করেছেন। সিএএ-র ফর্ম পূরণ করার মানে আমি ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছি। অর্থাৎ আমি ভারতের নাগরিক নই, আমাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নের ভিত্তিতে গত ৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় আগে নাগরিকত্ব পরে ভোটার। এই যে এসআইআর চলছে এখানে সিএএ-র ফর্ম ফিলআপ করলেই নির্বাচন কমিশন ভোট দেওয়ার জন্য স্বীকৃত দেবে এই ধারনায় থাকা ভুল। আগে সিএএ আইনের মাধ্যমে নাগরিক হতে হবে, ভারত সরকার বলবে এই দেশের নাগরিক তার পর নির্বাচন কমিশন বলবে ভোটার। যারা ইতিমধ্যেই সিএএ-র ফর্ম ফিলআপ করে বসে আছেন তারা ২৬ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।
এই মুহূর্তে বেশ চিন্তিত মতুয়া সম্প্রদায়। তাঁরা যে ‘রাজনীতির বোড়ে’, তা ভালোই বুঝতে পেরেছেন। কারণ বিজেপিকে ভোট দিলেই নাগরিক হবে না। আবেদন করেছেন নাগরিক কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পেলেই তবে নাগরিকত্ব মিলবে। শনিবার মতুয়াদের নিয়ে তৃণমূলের আশ্বাসকে হাতিয়ার করেই মোদি স্পষ্ট বার্তা দিলেন, মতুয়ারা কেউ তৃণমূলের দয়ায় ভারতের নাগরিক নয়, তাঁদের নাগরিকত্ব দিয়েছে সিএএ। এখন দেখার, এই এসআইআরের পর ছাব্বিশের ভোটে মতুয়া গড়ে কী ফলাফল হয়।