কলকাতা: ফের বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন মুকুল রায় (Mukul Roy)। বিধানসভায় পিএসি কমিটির চেয়ারম্যান (PAC Chairman) তিনি। অর্থাৎ খাতায় কলমে বিজেপি। তাই কি এই বেফাঁস মন্তব্য? কী বলেছেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক (BJP Krishnanagar MLA)? মুকুল রায়ের মন্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে দিয়েছে। ছেলে শুভ্রাংশু রায়ের দাবি, ‘বাবার শরীর খারাপ।’
মুকুল রায় শুক্রবার শান্তিনিকেতন গিয়েছিলেন। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও কর্মসূচি সেখানে ছিল না। বা সরকারের কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। চিকিৎসকের পরামর্শে হাওয়া বদলের জন্য এ দিন বোলপুর শান্তিনিকেতন গিয়েছিলেন মুকুল রায়। সেখানেই মুকুল রায়ের মন্তব্যে শোরগোল পড়ে যায়।
এরপরই মুকুল রায়ের ওই মন্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। কী বলেছেন একদা তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা? সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল আগামী দিনে রাজ্যে যে পুরভোট আসছে তাতে তৃণমূলের কৌশল কী হবে? ফল কেমন হবে? উত্তরে মুকুল রায় বলেন, ‘এই পৌর নির্বাচনে সারা পশ্চিম বাংলায় বিপুল ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে। এ সময় পিছন থেকে একজন এবং পাশের চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়ের ভুল শুধরে দেন। চন্দ্রনাথ বলেন, ‘জনতা পার্টি না তৃণমূল’… মুকুল রায় এটা শুনেই বলেন, ‘তৃণমূল তো বটেই ভারতীয় জনতা পার্টি মানে তৃণমূল।’ মুকুল রায়কে দেখে এ সময় বেশ খানিকটা অসুস্থই মনে হচ্ছিল।
ক্যামেরার অন্য একটি অ্যাঙ্গল কলকাতা টিভি ডিজিটাল টিমের হাতে এসে পৌঁছেছে। সেখানেও স্পষ্ট মুকুল রায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল।’ পাশে দাঁড়ানো বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে এ সময় কার্যত অসহায় লাগছিল। তিনিই মুকুল রায়কে বলেন, ‘ঠিক আছে চলো।’ এরপর সাংবাদিকদরাও মুকুল রায়কে আর কোনও প্রশ্ন করেননি।
কলকাতা টিভি টিম ডিজিটাল মুকুল রায়ে ছেলে শুভ্রাংশু রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। শুভ্রাংশু জানান, চিকিৎসকের পরামর্শেই মুকুল রায় এ দিন শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবার শরীর ভাল যাচ্ছে না। বোলপুরে মুকুল রায় যা বলেছেন, তার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগাযোগ নেই। এটা দলের মন্তব্য নয়। শুভ্রাংশু রায়ের সাফাই, মুকুল রায়ের শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রার যে মাত্রা তা মাঝেমধ্যেই ওঠানামা করছে। সমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর তার জেরেই এই গোলমাল।
এরপর কী হবে? মুকুল রায় কী ভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন? ছেলে শুভ্রাংশুর বক্তব্য, ‘অনেক রকম চিকিৎসাই চলছে। এসএসকেএমে দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা হয়েছে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালেও বাবার চিকিৎসা হয়েছে। তবে কোভিড পরিস্থিতি আরও একটু ভাল হলে, মুকুল রায়কে রাজ্যের বাইরে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া হবে।’
এর আগেও এক বার বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন মুকুল রায়। তিনি বলেছিলেন, কৃষ্ণনগর উপনির্বাচনে তৃণমূল হারবে৷ বিজেপি জিতবে৷ তাঁর মুখে এমন কথা শুনে চমকে যায় রাজনৈতিক মহল৷ প্রশ্ন ওঠে, তৃণমূলে ফিরে এলেও মুকুলের মন কি পড়ে বিজেপিতে? যদিও মুকুল পরে নিজের বক্তব্য শুধরে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু ওই সময়ই শুভ্রাংশু জানিয়েছিলেন, ‘বাবা অসুস্থ৷ তাঁর শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য মাঝে মধ্যেই নষ্ট হয়৷ যে কারণে সাময়িক স্মৃতিভ্রংশ ঘটে তাঁর৷’ এ ছাড়া মুকুল মানসিক অবসাদেও ভুগছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে দাবি করা হয়৷ স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের মারা যাওয়ার পর এই অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়৷