কলকাতা: দিন কয়েক আগে বিআর আম্বেদকরের জন্মদিনে বিধানসভায় শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে রাজ্য সরকারকে খুল্লমখুল্লা আক্রমণ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। বিধানসভার অধ্যক্ষ, সরকার আধিকারিক থেকে মায় মুখ্যমন্ত্রী- (Mamata Banerjee) কাউকেই তিনি ছেড়ে কথা বলেননি। নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ শুধু নয়, নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতা জাহির করতে গিয়ে তিনি একরকম হুমকিই দিয়েছিলেন। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Mamata Banerjee blocked Jagdeep Dhankhar) এহেন আচরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হলেও মিডিয়ার সামনে তার বহির্প্রকাশ ঘটেনি। না মুখ্যমন্ত্রীর, না তাঁর দলের কোনও নেতা বা মন্ত্রীর। অদ্ভুতরকম নীরব ছিলেন। সাধারণতন্ত্র দিবসে রেড রোডের কুচকাওয়াজে ছাইচাপা আগুনের কিছুটা আঁচ নিশ্চিত ভাবেই পেয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্লিপ্ত সৌজন্য বিনিময়ে। হয়তো সঠিক সময়ের অপেক্ষা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানুয়ারির শেষ দিন, মুখ্যমন্ত্রীর ভিতরের সেই ছাইছাপা আগুনের উদগীরণ হল। খুব শান্ত ভাবে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লক করার কথা যে ভাবে ঘোষণা করলেন, তা একরকম বিস্ফোরণই। সেদিন রাজ্যপালের আক্রমণ ছিল নজিরবিহীন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী যা করলেন, তা-ও নজিরবিহীন। মমতা ঘোষণা করলেন, উনি রাজ্যপালকে টুইটার অ্যাকাউন্টে ব্লক করে দিয়েছেন।
কেন ব্লক করেছেন, তা-ও জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘উনি বিরক্ত করতেন, তাই ব্লক করে দিতে বাধ্য হয়েছি।’ রাজ্যপাল যে কথায় কথায়, প্রায় প্রতিটি টুইটেই মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করতেন, করেছেন, তা কারও অজানা নয়। রাজ্যপাল নিজেও মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করার কথা একাধিকবার প্রকাশ্যে জানিয়েছেন। সেই বিরক্তির জায়গা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জগদীপ ধনখড়কে ব্লক করে দেন। তাঁর এই আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশও করেন।
রাজ্যপালের নাম না-করেই মমতা এদিন বলেন, ‘ওনাকে সরানোর অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চার বার চিঠি দিয়েছি। তার পরেও ওনাকে সরানো হয়নি।’
ক্ষোভের সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাওড়ার বালি-সহ বিভিন্ন ফাইল রাজ্যপাল আটকে রেখেছেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের ফাইলও আটকে রয়েছে। ওনার কারণেই হাওড়ায় পুরভোট আটকে রয়েছে। প্রত্যেকটি কাজে উনি বাধা দিচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: Bengal Internship Scheme: কলেজ পড়ুয়াদের জন্য সরকারি সংস্থায় ইন্টার্নশিপ, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
আসে ‘মা ক্যান্টিন’-এর প্রসঙ্গও। মমতা বলেন, ‘উনি তো রোজ তাজ বেঙ্গল থেকে খাবার আনান। আমরা কি সেই বিল চাইব? উনি মা ক্যান্টিনের হিসেব চাইছেন!’ রাজ্যপালকে ‘সুপার পাহারাদার’ বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। ‘প্রতিদিন উনি উস্কানি দিয়ে চলেছেন। অসাংবিধানিক কথাবার্তা বলছেন।সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন।’
ধনখড়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার দাবি, বিজেপি-র গুন্ডারা রাজ্যপালের ইন্ধনে হামলা চালাচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরে তৃণমূল নেতা খুনের প্রেক্ষিতেই রাজ্যপালের দিক তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী।
জগদীপ ধনখড় বাংলার রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত লেগে রয়েছে। কখনও মুখ্যমন্ত্রী, কখনও বিধানসভার অধ্যক্ষের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন রাজ্যপাল। ভোট পরবর্তী হিংসার কথা বলে রাজ্যে গণতন্ত্র নেই বলেও তিনি দাবি করেন। রাজ্যপাল বিজেপি-র সুরে কথা বলছেন বলে উপেক্ষাও করতে চেয়েছেন শাসকদলের নেতারা। ফাইল আটকে রাখা নিয়েও রাজ্য-রাজ্যপাল তরজা জড়িয়েছে। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ বারবার তোলা হয়েছে। বিধানসভার অধ্যক্ষ পর্যন্ত এ নিয়ে বিষোদগার করেছেন। কিন্তু, রাজ্যপাল এই অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করে উলটে রাজ্যকেই কাঠগড়ায় তোলে। অভিযোগ করেন, তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই বিরোধ থামার নয়। এখন দেখার, মমতা তাঁকে টুইটারে ব্লক করায়, কী প্রতিক্রিয়া দেন রাজ্যপাল।