কলকাতা: সাংবিধানিক পদে বসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) যে ভাষায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তোপ দেগেছেন, তাতে তিনি ব্যথিত। মঙ্গলবার রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে এ ভাবেই উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। রাজ্যপাল যাতে এ ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন, চিঠিতে সেই অনুরোধও ছিল।বুধবার মমতার সেই চিঠির জবাব দিয়ে রাজ্যপাল আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন, তিনি দমবার পাত্র নন। মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির লাইন ধরে ধরে জবাব দিয়েছেন। স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন, রাজ্যভবনে বসে তিনি চুপ থাকতে পারেন না। রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের ঘটনার প্রেক্ষিতেই (Rampurhat Violence) এই চিঠি। রাজ্যের গঠন করা বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)-এর তদন্তেও যে তাঁর আস্থা নেই, তা-ও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
https://twitter.com/jdhankhar1/status/1506501457469530119?s=20&t=YLhR8B5OMqLHKQA6JZkUCg
জগদীপ ধনখড় লিখেছেন, রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে পুড়িয়ে মারার ঘটনা (Rampurhat Violence) বিগত দিনের অনেক স্মৃতি উসকে দেয়। সাম্প্রতিক অতীতের হিংসার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই তার তুলনা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কেন এর বিরোধিতা করছেন? সঞ্জু শেখের পরিবারের আট সদস্যকে পুড়িয়ে মারার (Birbhum Rampurhat Fire Deaths) উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। এর প্রেক্ষিতেই রাজ্যপাল লেখেন, রাজভবনে ‘নীরব দর্শক’ হয়ে বসে থাকতে পারি না। রাজপালের বক্তব্য ‘রাজনৈতিক ভাষ্য’ বলে মনে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতাকে পালটা খোঁচাও দিয়েছেন ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)।
মমতা চিঠিতে দাবি করেছিলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার কথা বাদ দিলে, আমাদের রাজ্য সবসময় শান্তিপূর্ণ।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি খণ্ডন করে একুশের ভোটপরবর্তী হিংসার কথা আবারও সামনে আনেন রাজ্যপাল। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট কী ছিল, তা মনে করিয়ে দেন জগদীপ ধনখড়। নিজের অবস্থানে অটল থেকে তিনি বলেন, ‘এ রাজ্যে এখন শাসকের শাসন চলছে, আইনের শাসন নয়। এটা এখন ওপেন সিক্রেট।’ রাজ্যপালের এই অভিমত নতুন কিছু নয়, বাংলার আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে একাধিকার তিনি এ কথা বলেছেন।
রামপুরহাটের হিংসার ঘটনার (Rampurhat political violence) পিছনে বাংলার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ থাকতে পারে বলেও মঙ্গলবারের চিঠিতে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল মমতার এই দাবিকে আমল দেননি। উলটে বলেন, এ ভাবে অপরাধ বা হিংসাকে চাপা দেওয়া যায় না।
রামপুরহাটের হিংসার পিছনে যে বা যারাই থাকুক, কাউকেই রেয়াত করা হবে না। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতিও ছিল মমতার কথায়। রাজ্যপাল তাতে আশ্বস্ত হতে পারেননি। বিগত দিনে একটাও নিরপেক্ষ তদন্ত হয়েছে কি না, তা নিয়ে পালটা প্রশ্নও তিনি তোলেন। তদন্তের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ থাকার কথা বলেন ধনখড়। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী সিট গঠনের কথা বললেও, তাতে আস্থা নেই রাজ্যপালের।
বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বড় হিংসার ঘটনা ঘটলে রাজ্যপাল কেন চুপ থাকেন, সেই প্রশ্নও তুলেছিলেন মমতা। ধনখড়ের জবাব, আমার কাজের ক্ষেত্র তো পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যের মানুষের ভালমন্দ দেখা।
চিঠির শেষে ধনখড় লেখেন, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে দেখা, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আপনার উচিত রাজ্যপালের দোষত্রুটি না খুঁজে, রাজ্যে এ বার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। রাজ্যপাল সংবিধানের মধ্যে থেকে সঠিক ভাবেই তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।