কলকাতা: ব্রুনোকে নিয়ে কাটছিল না আইনি জট। যে কারণে এতদিন ওর ঠিকানা ছিল দেবশ্রী রায়ের অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে অবশেষে অভিভাবকের কাছে ফিরতে চলেছে ব্রুনো।
কলকাতার বিজয়গড়ের বাসিন্দা সুপর্ণা মীরবাহার একটি কুকুর পুষেছিলেন। আদর করে নাম রেখেছিলেন ব্রুনো। গত ২৪ ডিসেম্বর হটাৎ ব্রুনো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে হাওড়ার পাঁচলা থানার অধীনে কোনও এক এলাকা থেকে ব্রুনোকে আটক করে পুলিস। থানাতেই রাখা হয় তাকে, কিন্তু ব্রুনোর অভিভাবকের কোনও খোঁজ মেলে না।
অন্যদিকে ব্রুনোর খোঁজে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুপর্ণা মীরবাহার। সাময়িকভাবে পাঁচলা থানায় ব্রুনোকে রাখা হলেও ওর ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন পুলিস কর্মীরা। অভিভাবকের খোঁজ না পেয়ে ব্রুনোকে তুলে দেওয়া হয় দেবশ্রী রায়ের অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনে। সেখানেই দিন কাটছিল ব্রুনোর।
ব্রুনোর খোঁজ না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুপর্ণাদেবী। মামলা দায়েরের পরে পুলিস ব্রুনোর বিষয়টা জানতে পারে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, ব্রুনোর অভিভাবক ওকে ছেড়ে দিয়ে এসেছেন। কারণ তিনি আর কুকুরটিকে রাখতে চাইছিলেন না।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেন ব্রনোর অভিভাবক সুপর্ণা মীরবাহার। আগে শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ব্রুনোকে যে চিকিৎসক দেখতেন, তাঁকে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিপোর্ট পেশ করতে হবে। কারণ সুপর্ণাদেবীর ব্রুনোই যে আসলে ওই কুকুরটি তা আদালতের জানা দরকার। কিন্তু চিকিৎসকের রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেনি আদালত।
পরবর্তীকালে আদালত সুপর্ণাদের দেবশ্রী রায়ের অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনে যেতে বলেন। আদালত বলে, সুপর্ণাদের সঙ্গে ব্রুনোর সদর্থক আচরণ দেখা গেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আদালতের সেই নির্দেশমতো সে দিনের দেখা করার ছবি এদিন শুনানি পর্বে পেশ করা হয়। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা মামলার শুনানি চলাকালীন মন্তব্য করেন, কোনও পশুর প্রকৃত অভিভাবক কে, তা জানা আদালতের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে, পশুদের যাতে ক্ষতি না হয় এবং তারা যাতে প্রকৃতভাবে লালিত পালিত হয় সে বিষয়ে অবশ্যই আদালত নজর দেবে। যেহেতু সুপর্ণাদেবী কুকুরটিকে লালন পালন করতে চাইছেন সেক্ষেত্রে অসুবিধে কোথায়।
আরও পড়ুন- Alipore Zoo Case: আলিপুর চিড়িয়াখানায় কোনও বহিরাগত নেই, হলফনামায় জানাল কর্তৃপক্ষ
সরকারি আইনজীবী পন্টু দেবরায় আদালতে জানান, আদালত যা নির্দেশ দেবে প্রশাসন তা পালন করতে প্রস্তত। এরপরেই বিচারপতি নির্দেশ দেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ব্রুনোকে সুপর্ণাদেবীর কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। একইসঙ্গে ব্রুনোকে দেখাশোনা করার জন্য অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনের যা খরচ হয়েছে, তাও মিটিয়ে দিতে হবে মীরবাহার পরিবারকে। ওই পরিবার ব্রুনোর সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করছে কি না, আদালত তা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশনকে। আদালতের আরও নির্দেশ, মাসে একবার করে বিজয়গড়ের বাড়িতে যেতে হবে ফাউন্ডেশনকে। আইনি জট কাটিয়ে ব্রুনোকে কাছে পেয়ে খুশি সুপর্ণারা।