কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: চলমান আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সোমবার হোয়াইট হাউস বক্তৃতায় তিনি বলেন, “বর্তমানে আফগানিস্তানের গোটা পরিস্থিতির ওপর তিনি এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার উপদেষ্টার দল নজর রাখছেন।“
যদিও আসরফ ঘানি সরকারের এইভাবে পতন মেনে নিতে পারছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, “গত জুলাইতে আশরফ ঘানিকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্থান কি সত্যিই তালিবানদের পরাস্ত করতে পারবে? আমার উত্তরেই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই ‘হ্যাঁ’ বলে জানিয়েছিলেন পরাজিত আসরফ ঘানি।” কিন্তু তার ফলাফল আজকে আমরা দেখতেই পাচ্ছি। আফগান সেনার উন্নয়নে ৩ ট্রিলিয়ন ওপর অর্থ ব্যয় করেছে আমেরিকা। গত কুড়ি বছরে হাজারো মার্কিন সেনা প্রাণ হারিয়েছে সুদূর আফগানিস্থানে। সেই সমস্ত কিছুর ফলাফল এরকম হল। আক্ষেপের সুর ঝরে পড়ল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গলায়।এই পরিস্থিতির জন্য তিনি কার্যত আশরাফ ঘানির ঘাড়ে দোষ চাপালেন বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিমহল।
আরও পড়ুন: তালিবানের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে’র প্রস্তাব চিনের, টানাপোড়েন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে
যদিও আমেরিকা বরাবরই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড় এসেছে এবং আগামী দিনেও লড়বে। প্রয়োজন হলে আফগানিস্থানে পুনরায় সেনা অভিযান হতে পারে বলেও জানিয়েছেন বাইডেন।
আজ থেকে কুড়ি বছর আগে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হামলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আফগানিস্তানের নেশন বিল্ডিং অর্থাৎ জাতি গঠন কখনোই উদ্দেশ্য ছিল না আমেরিকার। আমাদের লক্ষ্য ছিল আল-কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা। এবং সেই কাজে আমরা সফল হয়েছি।” প্রয়োজনে আগামীতেও আমেরিকা আফগানিস্তানে এবং ওই অঞ্চলের সামরিক অভিযান চালাতে পারে বলেও একরকম ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আফগানিস্থানে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে, সেখানকার নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে আমেরিকা। এই প্রচেষ্টায় বিশ্বের অন্যান্য বন্ধু দেশগুলিকেও একসঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আফগানিস্তানে আটকে থাকা মার্কিন কূটনীতিক আধিকারিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সেই প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আফগানিস্তান থেকে মার্কিন কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।“ আগামী দিনে আমরা সমস্ত মার্কিন আধিকারিকদের সুরক্ষিত দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি আফগান শরণার্থীদের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে প্রেসিডেন্টের কথায়। বাইডেন বলেন, আমেরিকায় আসার জন্য স্পেশাল ইমিগ্রেশন ভিসা পাবেন আফগান শরণার্থীরা। বিভিন্ন মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি আফগান শরণার্থীদের উন্নয়নে কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বর্তমান আফগানিস্তানের ছয় হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। ওই সমস্ত আমেরিকান কূটনীতিকদের ফিরিয়ে আনতে আরও এক হাজার সেনা পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: Breaking: আফগানিস্তানে আটক মার্কিন-আফগানদের উদ্ধারে আরও ১০০০ সেনা পাঠাচ্ছে আমেরিকা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং মার্কিন কূটনীতিকদের এই দশা অনেকটা ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকানদের পরাজয়ের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে কমিউনিস্ট যোদ্ধাদের কাছে হেরে উত্তর ভিয়েতনাম থেকে পাততাড়ি গোটাতে হয়েছিল মার্কিন বাহিনীকে। ১৯৭৪ সালে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন জানিয়েছিলেন কমিউনিস্ট গেরিলাদের পক্ষে ভিয়েতনাম দখল সহজ হবে না। কিন্তু পরবর্তীকালে কি হয়েছিল সেই ইতিহাস সকলেই জানে। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও একই কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কিন্তু বাস্তব যে সম্পূর্ণই আলাদা তা প্রমান হল এবার।
যদিও আফগানিস্তানের আজকের এই পরিস্থিতির জন্য বিগত দিনের নানান ভুল সিদ্ধান্তই দায়ী করলেন তিনি। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছিলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইমতো তিনি অনেক দূর এগিয়ে ছিলেন। অর্থাৎ গোটা পরিস্থিতির জন্য একরকম পূর্বসূরী ট্রাম্পের ঘাড়ে দোষ চাপালেন তিনি।