বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলায় শরীরে পুষ্টির চাহিদা। তাই বয়স বাড়লে জাঙ্ক ফুড কমিয়ে বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ওপরে জোর দেন বিশেষজ্ঞরা। শরীরের কার্যক্ষমতা কেমন থাকবে তা নির্ভর করে আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার ওপর। তাই নিউট্রিশনিস্টদের মতে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রাখা উচিত যা শরীরে পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে, শুশ্রুষা করে শরীরকে চনমনে রাখে। তাই পঞ্চাশ পেড়িয়ে শরীর সুস্থ রাখতে রোজকার খাদ্যতালিকায় এই খাবারগুলো অবশ্যই রাখুন।
বোন ব্রোথ (Bone broth) বা হাড়ের রস কেন এত উপকারী?
পাঁঠা বা মুরগীর হাড়ের কিংবা বড় মাছের কাটার রসে প্রচুর পরিমাণে কোলাজেন (collagen), গ্লাইসিন(glycine), জিলেটিন(gelatin), প্রোলিন(proline), গ্লুটামিন(glutamine) ও আর্জিনাইনের(arginine) মত পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে।
এই কোলাজেন ত্বক ভাল রাখে ও হাড় শক্ত করে।
জিলেটিন হাড়ের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। ঘষা লাগতে দেয় না। হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে জিলেটিন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে মাংশপেশি ভাল রাখতে সমান প্রয়োজনীয় গ্লুটামিন(glutamine)। পাশাপাশি গাট হেলথ, লিভার, মস্তিষ্ক ও শরীরের যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ নিকাশের জন্য এই গ্লুটামিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টের কাজ করে গ্লাইসিন(glycine)। মন ভাল করে। ঘুম আসে ভাল।
ডিম (Eggs)
পুষ্টির পাওয়ারহাউস হল ডিম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন। তবে শুধু প্রোটিন নয় রয়েছে বেশ কয়েকটি জরুরী পুষ্টিকর উপাদানও। ডিমের সাদা অংশে রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশের মত হাই গ্রেড অ্যানিম্যাল প্রোটিন (high grade animal protein)। এদিকে কুসুমে রয়েছে ফ্যাট(fat), ভিটামিন(vitamin), প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ(minerals) ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (antioxidant)। তাই ন্যাচারাল সুপারফুড হিসেবে ডিমের বেশ খ্যাতিও রয়েছে।
মেটে (liver)
লিভারে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ(vitamin A), ভিটমিন বি(vitamin B), ফোলেট(folate), আয়রন(iron) ও কপার (copper)রয়েছে। এছাড়াও মেটেতে থাকে জিঙ্ক(zinc) ও সেলেনিয়ামের(selenium) মত প্রাকৃতিক খনিজ পদার্থ রয়েছে। তাই পরিমিত মাত্রায় নিয়মিত মেটে খেলে শরীরের পুষ্টির অভাব হবে না। মেটে খেলে বার্ধক্যজনিত বেশ কয়েকটি রোগ যেমন চোখের সমস্যা, আলঝাইমার(alzheimer), বাতের ব্যাথা(arthritis), ইনফ্লেমেশন(inflammation) সহজে প্রতিরোধ করা যায়। পাশাপাশি মেটে খেলে হার্ট ভাল থাকে হেমোগ্লোবিনের মাত্রা(haemoglobin level) বৃদ্ধি পায়।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা থেকে কীভাবে দূরে রাখবে মটন, চিকেন, সিফুড (mutton, chicken, seafood)
মাংশ খাওয়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক তো চলতেই থাকবে বিশেষ করে বয়m বাড়লে রেড মিট (red meat) খাওয়া আদেও ঠিক কিনা সেই নিয়ে অনেকের অনেক আশঙ্কা রয়েছে। তবে পুষ্টির নিরিখে এর গুরুত্বও কিছু কম নয়। রেড মিটে স্টিয়ারিক অ্যাসিড(stearic acid) রয়েছে। এই উপদান শরীরে বাড়তি ফ্যাট বার্ন (fat burn) করতে সাহায্য করে এবং ওজন কম করে।
মুরগির মাংসে ভিটামিন কেটু(vitamin k2) থাকে, মুরগির চামরায় থাকে ত্বকের প্রয়োজনীয় প্রোটিন কোলাজেন। এই উপদানগুলি শরীরের জন্য উপকারী।
এদিকে পমফ্রেট, চিংড়িমাছের মত সামুদ্রিক মাছে প্রোটিন ও ওমেগা থ্রির(Omega-3) মত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড(fatty acid) রয়েছে। এই উপাদানগুলির অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি(anti inflammatory) কার্যকারিতা রয়েছে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে ও সারিয়ে তুলতে নিয়মিত তবে পরিমিত মাত্রায় এই অ্যানিম্যাল প্রোটিন (animal protein) খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
ঘি, মাখন ও নারকেল তেল
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে নানা রকমের তেল যেমন ক্যানোলা অয়েল, সোয়াবিন অয়েল, বাদাম তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, সরষের তেল, তিলের তেল, পাম অয়েল, কর্ন অয়েল খেলে ইনফ্লেমেশানের সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞজের মতে এগুলোর পরিবর্তে ঘি, মাখন ও নারকেল তেল খেলে ইনফ্লেমেশনের সমস্যা হবে না। গুলি সেলুলার ইন্টেগ্রিটি বজায় রাখে যেটা বয়স্কদের জন্য একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি খেলে শরীর স্যাচুরেটেড ফ্যাট পায় যেটা হরমোনাল ইমব্যালেন্সের ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরী। শরীরে পর্যাপ্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকলে ত্বকের জৌলুস বাড়ে, ত্বক সুন্দর ও টানটান থাকে।
কেন খাবেন মরসুমি ফল
ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তাই মিষ্টি কিছু খেতে ইচ্ছে করলে মনের আনন্দে ফল খেতে পারেন। তবে ফলে চিনি আছে বলে ভয় পাবেন না ফলের ফ্রুকটোজ প্রোসেস্ড ফুডে থাকা ফ্রুকটোজের মত ক্ষতিকারক নয়। তবে হ্যাঁ, যাঁদের হাই ব্লাড সুগার আছে তাদের চিকিত্সকের পরামর্শ মেনেই ফল খাওয়া উচিত না হলে আচমকা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।