জয়জ্যোতি ঘোষ
১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। শীতের তীব্রতা বেশ ভালোরকম পড়েছে দিল্লিতে। এই আবহেই ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে ভারত-পাকিস্তান ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ। যে টেস্ট ম্যাচে কুম্বলের এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার নজির রয়েছে। ইংরেজিতে একটা প্রবচন রয়েছে- ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। তবে সব ক্ষেত্রে এই প্রবচন বোধহয় সঠিক নয়। ম্যাচের শেষ দিন প্রথম দু’ঘন্টা যদি দেখা যায়, তাহলে পাকিস্তানের স্কোর দেখাবে ১০১/০। এই অবস্থায় নিশ্চয়ই কেউ কল্পনাতেও আনেননি যে কুম্বলের এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার মাইলফলক এই ম্যাচেই হতে চলেছে! কুম্বলে তাঁর ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেন মধ্যাহ্নবিরতির পর থেকে।
ভারত-পাকিস্তান এই ম্যাচকে ঘিরে বেশ কিছু অজানা গল্প রয়েছে। কুম্বলে যখনই বল করতে যাচ্ছিলেন তিনি তাঁর টুপি এবং সোয়েটার শচীন তেন্ডুলকরের হাতে দিতেন আর সেটা গিয়ে শচীন দিতেন আম্পায়ারের হাতে। আর এই জিনিস কুম্বলের ১০ উইকেট নেওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকে। একসময় কুম্বলে বারণও করেছিলেন শচীনকে। কিন্তু শচীন এই বিষয়ে বলা যেতে পারে অবাধ্য ছিলেন। ‘পাকিস্তানের উইকেট যখন পড়ছে তখন এটা চলতে থাকুক না! ক্ষতি কী?’- এই বিশ্বাসে অনড় ছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার! পরবর্তীতে সেই ম্যাচের আম্পায়ার জয়প্রকাশ নিজেও এই ঘটনার উল্লেখ করেন।
অনিল কুম্বলে যখন পাকিস্তানের ৯টি উইকেট তুলে ফেলেছেন, সেইসময় জাভাগাল শ্রীনাথ ফিল্ডারদের একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন। কুম্বলের ওভার ছাড়া অন্য কোনও বোলারের ওভারে ক্যাচ উঠলে সেটা যেন কেউ না ধরেন। শ্রীনাথ নিজেও উইকেটের বাইরে বল করছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল একটাই যাতে কুম্বলের ‘পারফেক্ট টেন’ যেন কোনওভাবেই মিস না হয়।
কুম্বলে যখন পাকিস্তানের দশম উইকেটটি (ওয়াসিম আক্রম) নেন, সেইসময় সেলিব্রেশনে মত্ত গোটা ভারতীয় দল। আক্রমের ক্যাচ ফরওয়ার্ড শর্টলেগে দাঁড়িয়ে থাকা ভিভিএস লক্ষ্মণ নিতেই বল মাঠের অন্যপ্রান্তে ছুড়ে ফেলেন। কুম্বলেকে ঘিরে সেলিব্রেশনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে এই ঐতিহাসিক ম্যাচের বল যে সংগ্রহে রাখা উচিৎ, সেটাই কারও খেয়াল ছিল না। ভুল লিখলাম- একজনের খেয়ালে অবশ্যই ছিল। তিনি কুম্বলেরই কর্নাটকের সতীর্থ ভেঙ্কটেশ প্রসাদ। এই অমূল্য মেমেন্টো তিনি নিজের সংগ্রহে রেখে দিয়েছিলেন। সেলিব্রেশন শেষে ড্রেসিংরুমে কুম্বলেকে প্রসাদ জিজ্ঞেস করেন-‘যে বল দিয়ে তুমি ১০ উইকেট নিলে সেটা কোথায়?’ কুম্বলে বলেন, ‘সত্যিই তো! কোথায় সেটা?’ তারপর হেসে বহুমূল্য সেই মেমেন্টো কুম্বলের হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রসাদ।
এই ভারত-পাকিস্তান টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে আরও একটি মজার গল্প রয়েছে। এই ম্যাচ দেখতে ইংল্যান্ড থেকে এক ক্রিকেট অনুরাগী এসেছিলেন- নাম রিচার্ড স্টোকস। তিনি এমন একজন ক্রিকেট অনুরাগী যিনি ১৯৫৬ সালে জিম লেকারের এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি স্টেডিয়ামে বসে দেখেছিলেন। ৪৩ বছর পর ফিরোজ শাহ কোটলায় কুম্বলের বিরল কীর্তির সাক্ষীও ইংল্যান্ডের এই ক্রিকেট ফ্যান!
অন্যান্য খবর দেখতে ক্লিক করুন: