বজবজ : ফোনটা হাতে নেওয়া মায়ের কাছে খেতে হয়েছিল খুব বকুনি ৷ যে মোবাইলটা বছর কয়েক আগে মা-বাবা-ই তুলে দিয়েছিলেন ৷ তাই আর ‘বকুনি’টা সহ্য হয়নি দশম শ্রেণির মেয়েটার ৷ মনে মনে ঠিক করে ‘সবক’ শেখাতে হবে বাবা-মাকে ৷ ফোন কেড়ে নেওয়ার ‘অপমানে’ আত্মঘাতী হল ওই ছাত্রী ৷
ঘটনাটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের। পুলিশ জানিয়েছে, তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার সুভাষ মণ্ডলের ৷ সুভাষ পেশায় জুটমিল কর্মী ৷ এতদিন অনলাইন ক্লাস চলায় মোবাইলটা মেয়ের কাছেই ছিল । ১৬ নভেম্বর রাজ্যে স্কুল খুলে গিয়েছে। তাই মেয়ের থেকে মোবাইলটি নিয়ে নেন মা।
মোবাইল ঘাঁটার জন্য সামান্য বকাবকিও করেন মেয়েকে। স্রেফ এর জেরেই অভিমানে আত্মঘাতী হয়েছে মেয়ে, দাবি মৃতের বাবার। বৃহস্পতিবার স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই তাদের নিজ কর্মক্ষেত্রে বেরিয়ে যান। সাড়ে ৯টা নাগাদ সুভাষবাবুর বড় ছেলে ঘরে ঢুকে তার বোনের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়।
আরও পড়ুন: হাতের তালুতে সুইসাইড নোট, আত্মঘাতী তরুণী
গোটা ঘটনার কথা বাবাকে ফোন করে জানায় সে। তড়িঘড়ি বজবজ পুর-হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ চিকিৎসকরা ছাত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বজবজ ফাঁড়ির পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
২০২০-র মার্চ। করোনার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনলাইন ক্লাসই ছিল ভরসা। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার ৷ হঠাৎ করে একটা ফোন কেনা, চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন সুভাষ ৷ নিজের ফোনটাই মেয়টাকে দিয়ে দেন ৷ ক্লাস করার জন্য ৷
আরও পড়ুন: টাকা না দিলে গোপন ছবি ফাঁসের হুমকি প্রেমিকের, আত্মঘাতী স্কুল পড়ুয়া
শুধু ক্লাস করাই নয় ৷ ফোনটাই হয়ে উঠেছিল মেয়াটার ধ্যানজ্ঞান-চিন্তাভাবনা ৷ বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-ক্লাস সব কিছুই ছিল এই ফোনকে ঘিরেই ৷ এরই মধ্যে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ খুলেছে স্কুল। ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুলে যেতে শুরু করেছেন পড়ুয়ারা। দাড়ি পড়েছে অনলাইন ক্লাসে।
স্বভাবতই পড়ুয়াদের থেকে মোবাইল ফিরিতে নিতে শুরু করেছেন অভিভাবকরা। শুধু তাই নয়, বোঝানো হচ্ছে, মোবাইল তাদের শত্রু ৷ বলা হচ্ছে, অতিরিক্ত মোবাইল ঘাঁটলে পড়াশোনোয় ক্ষতি হতে পারে। যে মোবাইল পড়ুয়াদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছিল, সেটাই ফেরত চেয়েছিলেন মা। মনে করা হচ্ছে, এতেই অভিমানে ওই ছাত্রী আত্মঘাতী হয় ৷
আরও পড়ুন: পুরভোটের আগে উত্তপ্ত ত্রিপুরা, তৃণমূল কর্মীকে বেধড়ক মার, ফাটল মাথা