মেদিনীপুর: মানবিক ডাকাত! ঠিক তাই, ডাকাত হলেও মানবিকতার পরিচয় দিল লুটেরার দল। ডাকাতি করা দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা গৃহস্বামীর চোখেমুখে জল দিয়ে, জল খাইয়ে আপাত সুস্থ করে তোলে তারা। এমনকী ডাকাতের ‘মর্যাদা’ রাখতে গৃহস্থের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া একটি মোবাইলও নিয়ে যায়নি তারা। ঘরের এক জায়গায় সেগুলি রেখে দিয়ে গিয়েছে।
তবে, বাড়িতে ৫০ লক্ষ টাকা রয়েছে বলে যে খবর পেয়ে তারা হানা দিয়েছিল, তা না পেয়ে গোটা বাড়ি তছনছ করে। সোনার গয়না ও নগদ টাকা মিলিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় তারা। ডাকাতির খবর পেয়ে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিস শুক্রবার সকাল থেকেই তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: Bhadu Sheikh Murder CBI: ভাদু শেখ হত্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
শুক্রবার ভোররাতে মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে বিদ্যাসাগরপল্লিতে এই ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে। ১৪-১৫ জনের ডাকাতদলটি জানালা কেটে ঢুকে গৃহস্থের গলায় ভোজালি ধরে। অস্ত্র দেখিয়ে সকলকে কোণঠাসা করে ডাকাতি করে। স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় নতুন একটি বাড়ি তৈরি করে প্রায় এক বছর ধরে বসবাস করছেন ঝাড়গ্রাম জেলার শিক্ষা দফতরের বিদ্যালয় পরিদর্শক অমরেশ কর। বাড়িতে দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রী নিয়ে বসবাস করতেন।
শুক্রবার রাত তিনটে নাগাদ ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে দেখেন তার গলাতে একটি ভোজালি ধরেছে ডাকাতের দল। তারা দাবি করে, বাড়িতে রাখা ৫০ লক্ষ টাকা ও সোনার গয়নাসহ যা কিছু আছে দিয়ে দিতে। অমরেশবাবু জানান, আমার কাছে কোনও টাকা নেই।
আরও পড়ুন: WB Weather Forescast: তীব্র গরমে সুখবর দিল হাওয়া অফিস, আজ বৃষ্টির সম্ভাবনা ৫ জেলায়
এই কথোপকথনের মাঝে অমরেশবাবুর স্ত্রী সুচিত্রা কর বেরিয়ে এসে দেখার চেষ্টা করেন কী হয়েছে। তখনই সকলকে একটি জায়গায় জোর করে সোফাতে বসিয়ে দেয় ডাকাতের দল। অস্ত্র দেখিয়ে বাড়িতে থাকা সমস্ত আলমারি ও ড্রয়ার তছনছ করে। প্রায় ১৬ ভরি সোনার গয়না, সোনার মেডেল ও নগদ ২৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয় তারা।
অমরেশবাবু বলেন, এই ধরনের ঘটনা ঘটবে বুঝতে পারিনি। ডাকাতির শুরুতে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইলগুলি বাড়ির সামনে রেখে গিয়েছে তারা।
আরও পড়ুন: Birth in Train: চলন্তে ট্রেনে প্রসব, চিকিৎসক খুঁজতে গিয়ে লুট টাকা, সহায় রেল পুলিস
স্ত্রী সুচিত্রা কর বলেন, ডাকাতরা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমাদের বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে। ওই সময় হাই সুগারের রোগী আমার স্বামী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন ওই ডাকাতরাই জলের গ্লাস নিয়ে এগিয়ে দেয় আমাদের দিকে। খানিকটা সহযোগিতা করে সুস্থ করার ক্ষেত্রে। আমাদের শারীরিকভাবে কোনও হেনস্তা করেনি। কিন্তু বাড়িতে কোনও জিনিস রাখল না তারা। কোথাও একটা খোঁজ পেয়েছিল, আমাদের বাড়িতে ৫০ লক্ষ টাকা রয়েছে। সেই টাকা না পেয়ে নিজের মধ্যে হিন্দিতে বলাবলি করতে থাকে এই খবরটা যে দিয়েছিল, তাকে গিয়ে ধরবো চল।
ডাকাতির খবর পেয়ে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিস শুক্রবার সকাল থেকেই তদন্ত শুরু করে। ডাকাতদলের আসা-যাওয়ার সম্ভাব্য রাস্তাগুলি দেখার সঙ্গে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখে। অমরেশ কর ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে গুড়গুড়িপাল থানার পুলিস।