ঝাড়্গ্রাম: চেন্নাইয়ের এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ভারতের সবচেয়ে উঁচু পদমর্যাদার পরীক্ষা আইএএস কর্মপ্রার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হয় এখানে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন সেখানকার প্রধান। ভর্তি চলছে পরবর্তী ব্যাচের চাকরি প্রার্থীদের। উপস্থিত হয়েছেন অভিভাবক সহ পড়ুয়ারা। ভর্তি চলাকালীন প্রাথমিক আলাপচারিতায় এক পড়ুয়ার অভিভাবককে চিনতে পারেন ওই কেন্দ্রের প্রধান। ওই অভিভাবক পশ্চিমবঙ্গের বিনপুর বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক চুনিবালা হাঁসদা। ভর্তি করাতে এসেছেন তাঁর ছোটো মেয়েকে। সঙ্গে রয়েছেন বড় মেয়েও। কথা প্রসঙ্গে ওই কেন্দ্রের প্রধান জানতে পারেন, চুনিবালা হাঁসদার বড় মেয়ে এখন মন্ত্রী। কিন্তু তাঁরা এত পথ এসেছেন ট্রেনে। যা শুনে তিনি বলে ওঠেন পশ্চিমবঙ্গ বলেই এত সাধারণ জীবনযাপন সম্ভব। নিজের সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে এই কথা শেয়ার করেছেন ওই কেন্দ্রের প্রধান।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান ইজরায়েল জেবাশিং। তাঁর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সম্পর্ক বহুদিনের। কর্মসূত্রে জীবনের বহু সময় তিনি কাটিয়েছেন ঝাড়গ্রামে। ছিলেন তখনকার ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক। সে সময় তিনি হয়ে উঠেছিলেন ঝাড়গ্রামবাসীর ঘরের লোক। পরে তিনি চেন্নাইয়ে গিয়ে আইএএসদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলেন। মাসকয়েক আগে বিনপুর বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়ক চুনিবালা হাঁসদা তাঁর ছোট মেয়েকে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তির আবেদন জানিয়ে ফোন করেন ইজরায়েল সাহেবকে। জানান, তাঁর বড় মেয়ে বিরবাহা হাঁসদা ঝাড়গ্রাম বিধানসভার নবনির্বাচিত বিধায়ক হয়েছেন।
ঝাড়্গ্রামের প্রাক্তন জেলাশাসক ইজরায়েল মন্ত্রী বিরবাহাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই পোস্ট
আরও পড়ুন: সব রকম সহযোগিতা করব, ইডির অফিসে ঢোকার আগে বললেন অভিষেক
দিনকয়েক আগে বিরবাহা তাঁর মা ও বোনকে নিয়ে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বোনকে ভর্তি করাতে যান। সৌজন্যমূলক আলোচনা চলাকালীন বিরবাহার মা প্রাক্তন বিধায়ক চুনিবালা হাঁসদা প্রশিক্ষণের টাকার ইনস্টলমেন্ট বাড়ানোর অনুরোধ করেন। ইজরায়েল সামান্য বিস্মিত হয়েও হাসি মুখে সম্মতি প্রকাশ করেন। এরপর ভদ্রতার খাতিরে ইজরায়েল সাহেব জিজ্ঞাসা করেন, তাঁদের ফ্লাইট কখন পৌঁছেছে? উত্তরে তাঁরা জানান, তাঁরা ফ্লাইটে নয় ট্রেনে এসেছেন। এটা শুনেই কিছুক্ষণের জন্য স্থম্ভিত হয়ে পড়েন ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন মহকুমাশাসক। তিনি বলেন, যে নিজে বিধায়ক, যার মা প্রাক্তন বিধায়ক সে কিনা ব্যক্তিগত কাজে ট্রেনে এসেছেন!
তখনও অবাক হওয়ার বেশ কিছুটা বাকি ছিল। এরপর ইজরায়েল সাহেব কথা পাল্টানোর ছলে বিরবাহাকে জিজ্ঞাসা করেন, বিধায়কের কাজ কেমন চলছে? বিরবাহা উত্তরে জানান, সব কিছু ঠিকঠাক আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বন দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন। এই শুনে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বলেন, এই সহজ-সরল জীবনযাপন, অহংকারী না হওয়া এটা শুধুমাত্র বাংলাতেই সম্ভব।
আরও পড়ুন: স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সহ দেশের বিখ্যাত জ্যোতির্লিঙ্গ ঘুরিয়ে দেখাবে ভারতীয় রেল