উত্তর ২৪ পরগনা: ওদের চোখে দৃষ্টি নেই, কিন্তু ঘাটতি নেই দর্শন বোধে। কার্যত সেই বোধকে সঙ্গী করেই করোনাকালে রক্তের ঘাটতি মেটাতে বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার গুমায় প্রেরণা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি থেকে রক্ত দিলেন ৮০ জন দৃষ্টিহীন। দৃষ্টিহীনদের নিয়েই এই প্রেরণা সংগঠন। নামের সঙ্গে কাজ মিলিয়ে দায়, দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে গোটা সমাজকে সেই বার্তাই দিলেন দৃষ্টিহীন মানুষগুলো।
পথচলতি জীবনে ওদের করুনার চোখেই দেখে মানব সমাজ। যেহেতু ওদের চোখের দৃষ্টি নেই, পরনির্ভরশীলতায় রসদ জোগাড় করতে হয় বেঁচে থাকার। তাই সমাজও চাই কম ওদের কাছে। কিন্তু বছরের পর বছর চলে আসা সেই ভাবনাটা আছে সত্যিই বিবর্ণ, তা প্রমাণ করলেন গোবিন্দ সরকার, পুতুল মন্ডল ও সুমিতা পালের মতো দৃষ্টি হীনেরা। ঘুমার প্রেরণা ওয়েলফেয়ার সোসাইটির ডাকে এক শিবিরে রক্ত দিলেন কম বেশি আশিজন দৃষ্টিহীন। করোনাকালে রক্তের সংকট মেটাতে সমাজের বিভিন্ন সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফ্রী আবেদনে সাড়া দিয়ে এই এদিনের কর্মযজ্ঞে সামিল তাঁরা।
বৃহস্পতিবার সংগঠনের ডাকে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও রক্ত দিতে জড়ো হয়েছিলেন দৃষ্টিহীনেরা। তাঁদের কেউ এসেছেন কেবল লাঠির ভরসায়, কেউবা পরিজনকে নিয়ে।
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র রক্তদানের আয়োজনে সীমাবদ্ধ নেই প্রেরণার কর্মকাণ্ড। প্রতি মাসে ৭০ টি দৃষ্টিহীন পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেন সংগঠনের সদস্যরা। পাশাপাশি একটি অডিও গ্রন্থাগার ও চালান তাঁরা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দৃষ্টিহীনতা যাতে প্রতিবন্ধক না হয় তার জন্য উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রায় ২০০ জন দৃষ্টিহীন পড়ুয়ার বিষয়ভিত্তিক অডিও রেকর্ড করে পেনড্রাইভে পৌঁছে দেন তাঁদের কাছে। বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে যেখানে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় তাঁদের, সেখানে দৃষ্টিহীনদের এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে আমজনতাও।