বিতর্কের আগুনের ঘি ঢালা হয়েই চলছে। ঋদ্ধিমানের সাহাকে ভারতীয় টেস্ট দলে না নেওয়া নিয়ে বিতর্কে তোলপাড় ভারতীয় ক্রিকেট। এরই মধ্যে ঋদ্ধি নিজের একটি টুইটার পোস্ট করে , এই পর্বের মাত্রা আরও চড়িয়ে দিয়েছেন।
সদ্য জাতীয় টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া ঋদ্ধিমান সাহা এক সাংবাদিকের হুমকি চ্যাট ফাঁস করে দিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল হয়ে গিয়েছে তারপরই । এরপরেই বোর্ডের তরফে গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানা যাচ্ছে, বোর্ডের এক সূত্র থেকে।
ঋদ্ধিমান সাহা শ্রীলঙ্কা সিরিজে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পরে জনৈক ভারতীয় সাংবাদিক তাঁর সাক্ষাৎকারের জন্য জোরাজুরি করেছিলেন। ঋদ্ধির উত্তর না মেলায় তারপরে শেষমেশ হুমকিও দিইয়েছেন ।
টুইটারে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের সেই কথোপকথনের স্ক্রিনশট শেয়ার করে দেন ঋদ্ধিমান সাহা। এমন ঘটনা সামনে আসার পর পরই বীরেন্দ্র শেওয়াগ থেকে হরভজন সিং, আকাশ চোপড়া, হরভজন সিংরা এমনকি রবি শাস্ত্রীও বাংলার সফল ক্রিকেটারের পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছেন।
বিসিসিআইয়ের একাংশ বোর্ডের এপেক্স কাউন্সিল গোটা বিতর্কিত ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। বোর্ডের এক প্রতিনিধি ( নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, “সবকিছু কার্পেটের তলায় মোটেই চাপা দেওয়া হবে না। ঋদ্ধিমান প্রচারমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে যা যা বলেছে এবং যে টুইট শেয়ার করা হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে তদন্ত করে দেখার কথা ভাবা হচ্ছে।”
Please name him wriddhi! I promise you as a representative of players, I will make sure our cricket community boycotts this so called journalist!! https://t.co/XmorYAyGvW
— Pragyan Ojha (@pragyanojha) February 20, 2022
এমন ঘটনায় রবি শাস্ত্রী বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকে নজর ঘুরিয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই ভারতীয় ক্রিকেট মহল জানে, কোচ শাস্ত্রীকে সরতে হয়েছিল বোর্ড সভাপতির সঙ্গে মানসিক দূরত্ব থাকায়। ঋদ্ধিমান বাংলার ক্রিকেটার, সৌরভও বাংলার। আর যে সাংবাদিকের নাম – পরিচয় ঋদ্ধি বলেননি তা বাংলারই , এটাই নেটজেনরা প্রমাণ করে বসেছে। বাংলায় এমনিভাবেই একে অপরকে দাবিয়ে রাখার গপ্পো শুরু হতেই, অন্য রাজ্যের সকলে ঘটনার মজা লুটতে শুরু করেছে। শাস্ত্রী টুইটারেও পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখার কথা লিখেছেন বোর্ড প্রেসিডেন্টকে।
Shocking a player being threatened by a journo. Blatant position abuse. Something that's happening too frequently with #TeamIndia. Time for the BCCI PREZ to dive in. Find out who the person is in the interest of every cricketer. This is serious coming from ultimate team man WS https://t.co/gaRyfYVCrs
— Ravi Shastri (@RaviShastriOfc) February 20, 2022
ঋদ্ধিমান জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০২১-এর নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়াংখেড়েতে। বিসিসিআইয়ের এক কর্তা বলেছেন, “ঋদ্ধিমান এখনও বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার। ক্রিকেটারদের ভালো মন্দ দেখভাল করা দায়িত্ব বোর্ডের । এর বাইরে কিছু থাকতেই পারে। যদি কোনও আঁতাত কাজ করে, তাহলে সেটাও খুঁজে বের করা দরকার।”
Extremely sad. Such sense of entitlement, neither is he respected nor a journalist, just chamchagiri.
With you Wriddhi. https://t.co/A4z47oFtlD— Virender Sehwag (@virendersehwag) February 20, 2022
বোর্ড সূত্র বলছে , বোর্ডের তরফে ঋদ্ধিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্ক্রিনশটের ফরেন্সিক তদন্তের কথা বলা হতে পারে। ঋদ্ধি কি রাজি হবেন? যদি হন, আর তদন্তের পর যদি উঠে আসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভারতীয় ক্রিকেট কভার করা কোনও সাংবাদিক। সেক্ষেত্রে বোর্ডের তরফে সেই সাংবাদিককে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।” কিন্তু এই সাংবাদিক অনেকদিন ধরে দেশের প্রথম সারির বড় মাপের ক্রিকেট প্রশাসক আর ক্রিকেটারদের সঙ্গে ওঠাবসা করেন। মাল্টি স্পোর্টস তিনি ঢুকে পড়েন। সব জানেন। কিন্তু বাংলারই একজন ক্রীড়াবিদ তাঁকে পাত্তা দেবেন না, এটা মানতে পারেননি। তিনি সেই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় অন্য অনেক সাংবাদিকদের হেয় করেছেন। আর নিজেকে প্রভূত ক্ষমতাবান প্রমাণ করতে চেয়েছেন।
Venkatesh Prasad Reacts to Wriddhiman Saha Being Disrespected by a Journalist, Writes About 'Top Players' Not Having ‘Clear’ Boundaries@venkateshprasad @Wriddhipops #WriddhimanSaha #VenkateshPrasad https://t.co/G680USBIPz
— LatestLY (@latestly) February 21, 2022
শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে ঋদ্ধিমান সহ ইশান্ত শর্মা, চেতেশ্বর পূজারা, অজিঙ্কা রাহানে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন। তারপরই সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ঋদ্ধিমান দাবি করেন, ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে পরোক্ষে অবসরের কথা চিন্তাভাবনা করতে বলেন। দ্রাবিড় সেই তথ্য অস্বীকার করেননি। রবিবার টি টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলছেন, ঋদ্ধি তাঁকে নিয়ে যা যা বলেছে সব সত্যি। তিনি স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। একজন সিনিয়র দলে যোগ্যতা সত্ত্বেও থাকবেন, কিন্তু খেলার সুযোগ পাবেন না – সেটা যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে খুব যন্ত্রণার। তাই তিনিই ঋদ্ধি সত্যিটা শুনিয়েছেন। আর ঋদ্ধি সেকথা প্রচার মাধ্যমে বলতেও, রাহুল কিছু মনেও করেননি। ব্যাক্তি স্বাধীনতাতে তিনি বিশ্বাসী।
সামনে এসেছে, বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা কানপুর টেস্টের পরে ঋদ্ধিকে দলে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন ঋদ্ধিমান।
He is so cute & so polite that it is almost impossible to dislike him.
Look at his innocent face, Aisi shakal se pyaar nahi hoga toh kya hoga…!
Rahul Dravid should be honored with "SIR" title in #India #RahulDravid #WriddhimanSaha #TheKashmirFiles pic.twitter.com/yJUGuVdqtF
— BALIDAN4INDIA (@peacei24) February 21, 2022
প্রাক্তন এক ক্রিকেটার এখন বোর্ডের কর্তা। তিনি বিস্মিত অন্য কারনে, বলেছেন : ‘ রাহুল দ্রাবিড়ের ইস্যুটি না হয় মেনে নেওয়া যায়, বুঝতেও পারলাম টিম ম্যানেজমেন্ট এর স্বার্থে তিনি সেটা করেছেন। তিনি এমন এক কোচ, যিনি যুক্তি দিয়ে সব বিচার করতে ভালোবাসেন। ক্রিকেটারদের সামনে দলের আগামীদিনের চিন্তা – ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে থাকতেই পারেন। সেটা পুরোপুরি কোচ এবং ক্রিকেটারদের নিজেদের ব্যাপার। তবে বোর্ড কী পারে, একজন ভালো খেললেই সেই ক্রিকেটারের দলে থাকা নিশ্চিত করতে?’
ইঙ্গিত পরিষ্কার বোর্ড সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকে! ঋদ্ধিমান যে সৌরভের থেকে পাওয়া এস এম এস বার্তার কথাও সামনে এনে দিয়েছেন! সৌরভ নাকি সেই দারুণ ইনিংসের পর (২০২১ সালে) ঋদ্ধিকে অভিনন্দন জানিয়ে এই বার্তা মোবাইলে পাঠিয়েছিলেন।
‘যতদিন উনি আছেন, আমার চিন্তা করার কোনও কারণ নেই’ – এটাই তো ঋদ্ধি বলেছেন।
Why no objection is raised against @SGanguly99 for assuring @Wriddhipops a place in test squad? @BCCI should look into this seriously.Looks that there is influence than being just president and lot of internal conflicts happen by the time he leaves #ganguly #WriddhimanSaha
— ᴀʀɪғ🍁عارِفْ (@arifkazi011) February 21, 2022
অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দেশের কথা আগে ভাবতেন। বাংলার কথাই শুধু ভাবতেন না। তিনি বোর্ড সভাপতি হতে, এটাই হবে – দেশের কথা ভাববেন। কিন্তু ঋদ্ধিকে এই কথা লিখে পাঠান কিভাবে! বোর্ডের বিভিন্ন মহলে সৌরভ বিরোধী শিবির এই নিয়ে জোর চর্চায় মেতেছে।
আর সৌরভের দাদা, সিএবি – সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন: ঋদ্ধির উচিত হয়নি সৌরভের পাঠানো ব্যাক্তিগত এসএমএস বার্তা জন সমক্ষে আনা। অর্থাৎ , সৌরভ যে এমন বার্তা ঋদ্ধিকে পাঠিয়েছিলেন – তা সত্যি। সৌরভের দাদার কথায় তা প্রমাণিত। বোর্ড সভাপতি এমন কথা দেশের কোনও ক্রিকেটারকে কি বলতে পারেন? ভারতীয় ক্রিকেট মহল, এই নিয়ে চর্চায় মেতে।
The crisis of credibility in Indian cricket journalism is of our own making. We should remember we neither run it, nor control it, just report on it with honesty and integrity without favour or fear.
— Pradeep Magazine (@pradeepmagazine) February 21, 2022
ঋদ্ধিমানকে হুমকি দেওয়া সেই সাংবাদিকের বাংলা যোগাযোগ প্রমাণ হলে হয়তো দেখা যাবে, তিনি সৌরভের অতি ঘনিষ্ঠ এক সাংবাদিক। যিনি সৌরভ অসুস্থ হলে, টুইটার দিয়ে সারাক্ষণ আপডেট করতেন। তাঁর সোর্স হতে পারে সৌরভের ছায়া সঙ্গী। কিন্তু অনেক ছবি আর ভিডিও হয়তো প্রমাণ করে দেবে – সেই সংবাদিক নিজেকে এতটা ক্ষমতাবান কেন ভাবেন। আর সংবাদিক কুলের বদনাম করেন। যদিও, একজন স্বার্থান্বেষী এক ব্যাক্তি দিয়ে সাংবাদিক কূলকে বিচার করা ঠিক নয়।
ছবি: সৌ টুইটার।