এস সি ইস্ট বেঙ্গল–০ মুম্বই সিটি এফ সি-০
আই এস এল-এর দশ নম্বর ম্যাচেও জয়ের মুখ দেখল না এস সি ইস্ট বেঙ্গল। তবে শুক্রবার ভাস্কোর তিলক ময়দানে তারা গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফ সি-কে হারাতে না পারলেও যা ফুটবল খেলেছে তাতে নতুন কোচ রেনেডি সিং তো বটেই, গোটা লাল হলুদ জনতারই গর্বিত হওয়ার কথা। কারণ শুধু গতবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়াই শুধু নয়, মুম্বই কাগজে কলমে এবারও সেরা টিম। চারজন দুর্দান্ত বিদেশি আছে তাদের। ডিফেন্সে মোর্তাদা ফল, মাঝ মাঠে আহমেদ জাহু এবং কাসিনা গ্যাব্রিয়েল এবং ফরোয়ার্ডে ইগর আঙ্গুলো। চার জনই ম্যাচ উইনার। এ বলে আমায় দ্যাখ তো ও বলে আমায়। এ রকম একটা দুর্দান্ত দলের বিরুদ্ধে মাত্র একন বিদেশি নিয়ে মাঠে নেমে দশজন ভারতীয় ফুটবলার নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল যা খেলল তাতে তাদের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। গত দিন আত্মঘাতী গোল করে খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন সৌরভ দাস। কী আশ্চর্য! এদিন তিনিই ম্যাচের সেরা। রেনেডির প্রশংসা করতে হবে। আগের দিনের খলনায়কের উপর আস্থা রাখা। এবং সৌরভ সেই আস্থার জবাব দলেন ম্যাচের সেরা হয়ে।
ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে সৌরভ ছিলেন চার ব্যাকের সামনে। ডিফেন্সিভ ওয়ালে লেগে ফিরে আসা বলগুলো শুধু ক্লিয়ার করাই নয়, পঞ্চম ডিফেন্ডারের কাজটাও তিনি সারাক্ষণ করে গেলেন। তবে ব্যাক ফোরের কাজটা ছিল আরও কঠিন। মুম্বইয়ের ইগর আ্যাঙ্গুলো এবার এখন পর্যন্ত গোল করেছেন নয়টা। এই টিমটা মোহনবাগানকে পাঁচ গোল দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রায় বিদেশিহীন টিম নিয়ে নামাই এক দুঃসাহসিক কাজ। কিন্তু অমরজিৎ সিং, জয়নার, আদিল শেখ এবং হীরা মণ্ডলকে দেখে বোঝবার উপায় নেই তারা লিগের সেরা ফরোয়ার্ড লাইনের বিরুদ্ধে খেলছে। কী ট্যাকলিং, কী কভারিং, কী হেডিং সব ব্যাপারেই আদিল আ্যান্ড কোম্পানি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে গেলেন নব্বই মিনিট। এই আদিলকেই ম্যাচের পর ম্যাচ বসিয়ে রেখেছিলেন আগের কোচ। রেনেডির হাতে পড়ে যেন নবজন্ম হয়েছে আদিলের। আশা করা যায় পরের কোচ মারিও রিভেরা খুব ভালভাবেই ব্যবহার করবেন আদিলকে। প্রথমার্দ্ধেই চোট পেয়ে বসে গেলেন জয়নার। তাঁর বদলে অঙ্কিত মুখার্জি নেমে এত সুন্দর মানিয়ে নিলেন যে কোনও পার্থক্য চোখে পড়ল না। জমিতে লাল হলুদ ডিফেন্ডারদের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে শেষ আধ ঘণ্টা মুম্বই তো লং বলে খেলল। বক্সের মধ্যে উঁচু করে বল ফেলা, যদি কিছু হয়। কিন্তু শুধু তো ডিফেন্সই নয়, এদিন অরিন্দম ভট্টাচার্যও খুবই ভাল খেললেন। বেশ কয়েকটা বল তিনি বাঁচিয়েছেন যা থেকে গোল হলেও হতে পারত।
ব্যাক ফোর এবং গোলকিপারের পাশাপাশি ভাল কথা বলতে হবে ইস্ট বেঙ্গলের মাঝ মাঠের কথাও। পাহাড়ি ছেলেগুলো লড়ল বটে। নামতে, হাওকিপ, বিকাশ জাইরু এবং নুয়াম মিলে মুম্বই ফুটবলারদের সামনে যে বাধার প্রাচীর তৈরি করল তা ভেদ করে অ্যাঙ্গুলরা খুব বেশি এগোতে পারেনি। পরের দিকে মহম্মদ রফিক নামায় মাঝ মাঠে ইস্ট বেঙ্গলের গভীরত আরও বাড়ে। কিন্তু তাতে গোল হয়নি। সামনে সিঙ্গল স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল চিমা। টানা দশটা ম্যাচ খেলা হয়ে গেল এই নাইজিরিয়ের। এবার তাঁর বিদায় হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জানুয়ারি উইন্ডোতে নতুন প্লেয়ার সুযোগ তো আছে। ইস্ট বেঙ্গল সেটা কী করে কাজে লাগায় তাই এখন দেখার।
রেনেডির সঙ্গে কোচ হিসেবে কদিন পরেই যোগ দেবেন মারিও রিভেরা। মাত্র কদিনের মধ্যেই রেনেডি তাঁর টিমের ডিফেন্সের রোগ অনেকটাই সারিয়ে ফেলেছেন। এদের সঙ্গে যোগ দেবেন আন্তোনিও পেরিসেভিচ, টমিস্লাভ মার্সেলা, ফ্রানিও পার্সেরা। তখন ইস্ট বেঙ্গলের টিমটা আরও ক্ষুরধার হতে বাধ্য। গোল পেয়েও গোল রাখতে পারছিল না ইস্ট বেঙ্গল। এখন ডিফেন্সের যা অবস্থা সেই দুরবস্থা আর হবে না। দশ ম্যাচে ছয় পয়েন্ট নিয়ে প্রথম লিগ শেষ করল ইস্ট বেঙ্গল। আর গত চার ম্যাচে দশ পয়েন্ট নষ্ট করে দশ ম্যাচে সতেরো পয়েন্ট নিয়ে আবার আই এস এল-এর শীর্ষে উঠৈ গেল গত বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই।