ভোটের আগে উত্তরবঙ্গকে পাখির চোখ করেছিল বিজেপি। তাতে সাফল্য পেলেও রাজ্যে তারা ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এবার বিজেপি চাইছে ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে। তাতে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবি নতুন নয়। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনই তার বড় প্রমাণ। বিগত দিনে পৃথক রাজ্যের দাবিতে কেপিপি, জিসিপিপি, গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন দেখেছে উত্তরবঙ্গ। এবার উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার নয়া দাবি।
এবার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শেষ হতেই উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় ওঠে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপে এই দাবি জানিয়ে একের পর এক পোস্ট করা হয়। বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় গেরুয়া শিবির অভূতপূর্ব ফল করে। উত্তরের পাঁচ জেলাতে একক দাপট দেখায় কেন্দ্রের শাসক দল। উত্তরের পাঁচ জেলার মধ্যে দার্জিলিং,আলিপুরদুয়ারে এবং কালিম্পং জেলায় খাতাই খুলতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।
এই সুযোগে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা নিয়ে এই পৃথক রাজ্যের দাবি করা হচ্ছে। এই পাঁচটি জেলার মধ্যে দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, এবং কালিম্পং জেলাকে রাখা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবি করে পোষ্ট করেন বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা। বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর দেখা গেছে উত্তরের এই পাঁচ জেলায় বিজেপির কাছে রাজ্যের শাসকদল কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। তাই মানসিকতা যখন আলাদা তখন আলাদা জেলা নয় কেন? এই দাবিতেই সরব হন তাঁরা।
এই পাঁচ জেলায় মোট সাতাশটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এই সাতাশটি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে মাত্র পাঁচটি আসন, এবং বিনয়পন্থী মোর্চা পেয়েছে একটি আসন। বাকি একুশটি আসনে জয়লাভ করেছে বিজেপি। এই পাঁচ জেলার মধ্যে আলিপুরদুয়ার জেলায় পাঁচটি আসনে পাঁচটিতেই জয় পেয়েছে বিজেপি। একই ভাবে দার্জিলিং জেলায় পাঁচ আসনে পাঁচটি বিজেপি। অন্যদিকে কোচবিহারে নয় আসনের মধ্যে সাতটি বিজেপি, এবং দুটিতে তৃণমূল। অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলার সাতটি আসনের মধ্যে তিনটি তৃণমূল এবং চারটিতে বিজেপি জয়লাভ করেছে।
কার্যত উত্তরে বিজেপি ঝড়ে কুপোকাত তৃণমূল। উত্তরবঙ্গের চার জেলায় পরাজিত হয়েছেন পাঁচ ওজনদার প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে তিন বিদায়ী মন্ত্রীরা অন্যতম। তাঁরা হলেন গৌতম দেব, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। শাসকদলের না হলেও তালিকায় বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যও আছেন। শিলিগুড়িতে বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষের কাছে হেরে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছেন শহরের প্রাক্তন মেয়র।
সোমবার নবান্নতে সাংবাদিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রীর দিকে বঙ্গভঙ্গ সংক্রান্ত বিজেপির পরিকল্পনা নিয়ে তিনি তাঁর কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। পশ্চিমবঙ্গকে ভাঙতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনওরকম ডিভাইড অ্যান্ড রুল আমরা করতে দেব না। এগুলো রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া করা যায়ও না।’
এ প্রসঙ্গে অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরাও মনে করি পশ্চিমবঙ্গ ভাগ হওয়া উচিত নয়। এতে উত্তরবঙ্গর উন্নতি হবে না। কিন্তু ভাগাভাগির রাজনীতির পথ এ রাজ্যে বিজেপি করে আসছে। হিন্দু মুসলিমদের বিভেদ তৈরি করতে চাইছে তারা। কামতাপুরী, রাজবংশীদের আন্দোলনের সাথে তৃণমূলের মদত ছিল। এখন নির্বাচনে হেরে বিজেপি বুঝে গেছে পশ্চিমবঙ্গে তারা আর আসতে পারবে না তাই নতুন করে বিভাজনের রাজনীতি করে উত্তরবঙ্গকে আশান্ত করতে চাইছে।’
একই স্বরে সুর মিলিয়ে উত্তরবঙ্গেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব মোটেই ভাল নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। উত্তরবঙ্গের সাত জন বিজেপি সাংসদ আছে এ রাজ্যে। গত আড়াই বছর তাঁরা কী করেছেন? উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না, আর উত্তরবঙ্গের মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপির এই প্রচেষ্টা প্রতিহিত করবে।
যদিও শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষের দাবি উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন সেই অর্থে বিগত বছর গুলিতে হয়নি। এরই মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে। তাহলে উন্নয়নের জিগির তুলে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গকে দ্বিখন্ডিত করার চেষ্টা আদৌ কতটা সার্থক হবে সেটাই এখন দেখার।