বৃহস্পতিবার ম্যাচের শেষ দিন। ভারতের রান তাড়া করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ দিনের শেষে তাদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৯৪ রান। ম্যাচ জিততে দরকার আরও ২১১ রান । আর ভারতের দরকার আর ৬ উইকেট।
সোজা চোখে এটাই দুই দলের লক্ষ্য। ভারত দ্বিতীয় ইনিংসের রান নিয়ে ম্যাচে ৩০৫ রানের টার্গেট সাজিয়ে দিয়েছে। প্রোটিয়ারা একসময় ২ উইকেটে ৭৪ রান করে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল। কিন্তু সেটি সময় মতো রুখে দিতে বুমরা নিজের শেষ স্পেলে জোড়া ছোবলে তুলে নিলেন । তিন অঙ্কে পৌঁছনোর আগেই প্রোটিয়া দের টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যান ফিরে গেছে। রইলো বাকি ৬। দরকার ৬ টি দুর্দান্ত ডেলিভারি। তাহলেই কেল্লা ফতে। আজ , বৃহস্পতিবার – খেলার শেষ দিনে বৃষ্টির হুমকি আছে। ভারতের তাই লক্ষ্য দিনের প্রথম সেশনটি।
আবারও সেই সমস্যা!
ভারতীয় ব্যাটিংয়ে সেই একই সমস্যা। প্রথম ইনিংসেও তৃতীয়দিনে শেষ ৭ উইকেট ৫৫ রানে চলে গেল! তাও আবার প্রথম সেশনে। দ্বিতীয় ইনিংসে তাই বাড়তি সচেতনতা ছিল। চতুর্থ দিন সমঝে খেলা ছিল। তাই মধ্যাহ্ন বিরতির পর নিজেদের পায়ের নিচের জমি শক্ত করার চেষ্টা চালায়।
কিন্তু বোলারদের জন্য এমন উইকেটে রাবাডা নাইটওয়াচম্যান শর্দুলকে ফিরিয়ে দিয়ে ধাক্কা দেওয়া শুরু করেন। প্রথম ইনিংসের সফল ব্যাটার কে এক রাহুল খুব সাবধানী হয়ে ৭৩ বল খেলেও নিজের ২৩ রানে থামলেন। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট দিয়ে স্লিপে ধরা পড়ে ফিরলেন।
কোহলি – পূজারার পরীক্ষা শুরু হল। ২৩ ওভার থেকে দুজনের কাঁধে দলের দায়িত্ব। কোহলি জোরালো এলবিডব্লু আউটের আবেদনে বাঁচলেন। আর পূজারা, ১২ বল সবই খেলেছে – সহজ কাজ দিলেন। রাবাডা তা ফেললেন।
তারপর সাবধানী চেতেশ্বর ৫২ বলে ১২ রান করে থিতু হলেন।
আর কোহলি ৩২ বল সামলে ১৮ রানে। লাঞ্চে এই দুই ব্যাটার ফিরলেন যখন, দল তখন ৩ উইকেটে ৭৯ রানে দাঁড়িয়ে। সব মিলিয়ে ম্যাচে ২০৯ রানে এগিয়ে।
Stumps on Day 4 of the 1st Test.
South Africa end the day on 94/4. #TeamIndia 6 wickets away from victory.
Scorecard – https://t.co/eoM8MqSQgO #SAvIND pic.twitter.com/IgRuammbPo
— BCCI (@BCCI) December 29, 2021
আবার বিরাট ব্যার্থতা:
অতি সতর্কতায় খেলে লাঞ্চ করার পর হল কী নেতা কোহলির! জনসন কোহলিকে অফ স্টাম্পের বাইরে টেনে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। রান চাই কোহলির। তাই কি হতাশায় শরীর থেকে অত দূরের বলে চালাতে হল? আবার সেই রোগ – অফ স্টাম্পের বল তাড়া করে খোঁচা দিয়ে আউট হয়ে ফেরা।
শুরু হল কাঁটা ছেঁড়া। কোহলি কতদিন বড় রান পাচ্ছেন না? হিসাব বললো, টেস্টে দুটি বছর হয়ে গেল সেঞ্চুরি নেই। ২০২০ তে ভিকে খেলেছিলেন ৩ টি টেস্ট। দুটি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। তাতে সকলে ব্যর্থ। আর অস্ট্রেলিয়াতে একটি টেস্ট, যার প্রথম ইনিংসে রান পেয়েছিলেন। এবার বছর শেষের শেষ ইনিংস খেললেন। পরপর দুটি ক্যালেন্ডার ইয়ারে বিরাট আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন না! ৭১ তম সেঞ্চুরি যে থমকে গিয়ে আটকে আছে। অবশ্য মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরের এমন হাল হয়েছিল। তাঁর অভিষেকের বছরে (১৯৮৯), আর ১৯৯১ , তারপর আবার ২০১৩ তে। তবে টানা দুটি বছর সেঞ্চুরিহীন ছিলেন না। যা কোহলির হচ্ছে।
আশাকরি, দলে এই সময় কোচ রাহুল দ্রাবিড় থাকার বিরাট এমন সমস্যা কাটিয়ে ফেলবেন। দ্য ওয়াল – জানেন তিনি ব্যাটিংয়ের সময় অফ স্ট্যাম্প ঠিক কোথায় তা টের পেতেন। সেই টিপস পাবেন কোহলি। আর এই দলে তো গ্রেগ চ্যাপেল কোচ নন। যিনি আবার নেতাকে ( পড়ুন সৌরভকে) সকলের সামনে প্রশ্ন করে বসবেন: রান নেই, তাহলে তোমাকে কেন দলে রাখা হবে! নেতা সৌরভ এখন বোর্ড সভাপতি। সেই সময় বোর্ড কর্তারা চ্যাপেলের কোথায় নেচেছিলেন। বোর্ড কর্তা প্রাক্তন সফল ক্রিকেটার বলে সেই অ্যাডভান্টেজ কোহলি পাচ্ছেন। তিনি যতই সৌরভের কোন মন্তব্যের বিরোধিতা করুন, সৌরভ দেশের নেতাকে – সেরা ক্রিকেটকে আগলে রাখতেই চান। ২০২২ সালের কোহলি কাহিনী অন্য হতে বাধ্য। পরিসংখ্যান হয়তো বলছে, ভিকের টেস্ট গড় ২০২০ থেকে আজ পর্যন্ত ২৬.০৮, ৫০ ওভারের ম্যাচে – ৪৬.৬৬ আর টি টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে- ৪৯.৫০।
বিরাটের শেষ সেঞ্চুরির পর ৬০ টি ইনিংস চলে গেল। এল ২০৭৮ রান। গড়- ৩৯.২০। সেঞ্চুরি না পেলেও, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ২০ টিতে। সেই ২০১৪ সাল থেকে কোহলিকে অফ স্টাম্পের বাইরের বল ভোগাচ্ছে। হতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৩ ম্যাচ পরেই একটি করে ৫০ রানের ইনিংস এসেছে। কিন্তু মনে নিশ্চয়ই কোহলি রেখেছেন, ২০টির মধ্যে ১৫ টি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে। টেস্টে সত্যিই তিনি ছন্দে নেই। আবার এই টেস্ট ক্রিকেট তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। দেখা যায়, রাহুল কিভাবে ব্যাটসম্যান কোহলিকে ছন্দ ফিরিয়ে দিতে পারেন।
পূজারা পাওয়ার শেষ!
কোহলি ফিরতেই পূজারা আত্মবিশ্বাসের দফারফা হয়ে যায়। আবারও তিনি মাথা নিচু করে ফিরলেন। লক্ষ্মণ নিশ্চয়ই দেখছেন পূজারার সমস্যা। নির্বাচকরাও দেখছেন। শ্রেয়াস আয়ার অপেক্ষায়, হনুমা বিহারী এই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুমাস আগেই এ দলের হয়ে সফল। আর কত সময় পূজারা পাবেন?
রাহানে-পন্থের রান:
দলের দুই ব্যাটিং স্তম্ভ পরপর ফিরলেও, উইলোর পাল্টা আক্রমন নিয়ে ক্রিজে থাকলেন পরীক্ষা দিতে নামা রাহানে। তাঁর ২৩ বলে ২০ রানে ঝাঁঝ ছিল। ৪ টি বাউন্ডারি তা দেখিয়েছে। তবে যে জানসেনের এক ওভারে ৩ টে বাউন্ডারি মারলেন সেই বোলারকে উইকেট দিয়ে এলেন।
দলের ব্যাটিং লেজের সঙ্গে পন্থ ৩৪ বলে ৩৪ করে গেলেন। অশ্বিন এসে ১৪ রান যোগ করলেন।
১৭৪ রানে ভারতকে থামলেন প্রোটিয়াদের দুই পেসার রাবাডা (৪/৪২) আর জানসেন (৪/৫৫)।
ভারত এগিয়ে ৩০৪ রানে।
https://twitter.com/LlcTrikona/status/1476313077079580678?t=fHV5IDrESezrTHZip70hVA&s=19
আবহাওয়ার ভেল্কি:
প্রথম ইনিংসের চেয়েও ভালো ব্যাটিং শুরু করেও দক্ষিণ আফ্রিকা দিনের শেষে ৪ উইকেট খুইয়ে বসে আছে। আগের ইনিংসে ১৩ ওভারে ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পর ৬২ ওভার পর্যন্ত প্রোটিয়ারা লড়েছিল নিচের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। এই পর্বে, ৪০ ওভার ব্যাটিং করেছে। দুটো ভালো পার্টনারশিপ ভারতীয় শিবিরে চিন্তার কারণ হয়ে উঠছিল।
এই পর্বে, একা কুম্ভ হয়ে গড় সামলেছেন – দলের নেতা এলগার। ৫২ রানে ক্রিজে আছেন।
এই টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি বৃষ্টিতে বানচাল হয়েছিল। একই আশঙ্কা এই শেষদিনে। কিন্তু তা নাকি দিনের পরের দিকে। কতো পরে? ঈশ্বর জানেন। আর শামি-বুমরা-সিরাজ-শর্দুল চান ৬ টি মোক্ষম বল। আর ৬ টি উইকেট। ম্যাচ উইনার অশ্বিনের আস্তিন থেকে কিছু তো বেরুক। একটা জয় বছর শেষে জরুরী। ২০২১ তো শুরু হয়েছিল অজি জয় দিয়ে।
ছবি: সৌ টুইটার