করোনাভাইরাস অতিমারির(coronavirus pandemic) আবহাওয়ায় সংক্রমণের আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে আমাদের প্রত্যেকের নিত্য জীবনযাপনের চেনা ছন্দ। করোনাকালে তাই নিউ নর্মালের সঙ্গে আপোস করেই চলছে দৈনন্দিন জীবন। তবে সাধারণ মানুষের তুলনায় করোনাকালে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ক্যানসার(cancer) আক্রান্তদের। সংক্রমণের আতঙ্কে দীর্ঘসময় ধরে ব্যাহত হয়েছে তাদের নিয়মিত চিকিৎসা। ফলে কোথাও যেমন অসুখের প্রথম ধাপেই চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার অভাবে আরও কঠিন রূপ(severity) নিয়েছে এই মারণ রোগ। তেমন আবার সময়মতো চেকআপের অভাবে কখন যে দ্বিতীয় বার শরীরে হানা দিয়েছে ক্যানসার(cancer) তা জানতে বেলা গড়িয়েছে এমন যে চিকিৎসা শুরুর আগেই অসুখের তীব্রতা ক্যানসার রোগী চিরনিদ্রায় পাঠিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়েছে।
mRNA ও ক্যানসার
তবে এত কিছুর মধ্যেও এই করোনাভাইরাস প্যান্ডেমিকেই (coronovirus pandemic) আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। কারন, মেসেঞ্জার RNA(mRNA)। এটি এমন একটি বিশেষ অণু যা পরীক্ষা করলে বিষদে জানা যেতে পারে কোষের প্রোটিন তৈরির পদ্ধতি। ইতিমধ্যেই কোটি কোটি মানুষ নিয়ে ফেলেছেন এই mRNA ভ্যাকসিন যা কোভিড ১৯- র বিরুদ্ধে কড়া প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
তবে অনেকেই হয়ত জানেন না এই mRNA ভ্যাকসিন(mRNA vaccine) যেটা কোভিড ১৯(Covid 19) এর জন্য ব্যবহার হয়েছে তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তারা এটা ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন ক্যানসারের চিকি ৎসায়। অন্তত এক দশক আগেই খুব অল্প পরিমাণে এই mRNA ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা চলেছিল। পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আশার আলো দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা।
তাই অতিমারির পরিস্থিতিতে (pandemic situation), এই Pfizer-BioNTech ও Moderna-র বিজ্ঞানীরা ক্যানসার ও mRNA ক্যানসার ভ্যাকসিন তৈরি করার অভিজ্ঞতাকেই কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন তৈরির কাজে লাগান। এখন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীদের ধারণা এই mRNA কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগের পর ক্যানসারের চিকিৎসায় গতি পাবে mRNA ক্যানসার ভ্যাকসিনের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণার কাজ।
বর্তমানে এই mRNA নিয়ে প্রবল উত্তেজনা রয়েছে, জানিয়েছেন দান-ফার্বার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক প্যাটরিক অট।
mRNA ক্যানসার ভ্যাকসিন ও ক্লিনিকাল ট্রায়াল
এই নিয়ে একগুচ্ছ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও চলছে। নানা ধরনের ক্যানসার যেমন প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার(pancreatic cancer), কোলোরেক্টাল ক্যানসার(colorectal cancer), মেলানোমায়(melanoma) আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এর ট্রায়াল চলছে। ক্যানসারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাই ওষুধ পত্রের সঙ্গে এই ভ্যাকসিন কীভাবে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে টিউমারের বিরুদ্ধে কার্যকরী করে তুলতে পারে তা নিয়ে চলছে পরীক্ষা নিরিক্ষা।
তবে এখনও এই mRNAক্যানসার ভ্যাকসিনকে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ছাড়পত্র দেয়নি ইউ এস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যামিনিসট্রেশন(US Food & Drug Administration)।
এছাড়া ক্যানসারের আবার নানা রকমের বিভেদ আছে তাই mRNAক্যানসার ভ্যাকসিন তৈরি করলে তা প্রত্যেকটি প্রকারের জন্য আলাদা আলাদ হতে হবে। এর ফলে এই ধরনের ক্যানসার ভ্যাকসিন তৈরি করতে প্রচুর পরিমান অর্থের প্রয়োজন। বিষয়টি যেমন ব্যয় সাপেক্ষ তেমনই সময় সাপেক্ষ। তবে কিছুটা হলেও কোভিড ১৯-র ভ্যাকসিনে mRNA-র সফল প্রয়োগ ক্যানসার নিয়ে ভবিষ্যত গবেষণার পথ সুগম করেছে।
পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসায় দীর্ঘ সময়ে ধরে চলে আসা পদ্ধতি রেডিওঅ্যাক্টিভ ও কেমোথেরাপি যেমন কার্যকরী তেমন আবার এই দুই ক্ষেত্রে ক্যানসারগ্রস্ত কোষ বা সেলের পাশাপাশি সুস্থ সেলের ক্ষতির সম্ভাবনাও প্রবল।
সেখানে mRNA ব্যবহারে রোগীর শরীরে থাকা ক্যানসারগ্রস্ত কোষের প্রোটিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে টার্গেট করা বেশি সহজ এবং আরও উন্নত হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই mRNA ক্যানসার ভ্যাকসিনের যে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না এমনটা জোর দিয়ে এখনি বলতে পারছেন না গবেষকরা। তবে গোটা বিষয়টা নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট আশাবাদি। ক্যানসারের মতো মারণ রোগের চিকিৎসার লক্ষ্যে এক পা এগোলেও তাদের মত এটা ক্যানসার চিকিৎসায় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশ্বেজুড়ে বহু সংখ্যক মৃত্যুর কারণগুলির অন্যতম ক্যানসার। ২০২০ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ কোটির বেশি মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO)প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে২০১৮ ক্যানসার আক্রান্ত হন ১ লাখেরও বেশি মানুষ। আবার সেই বছরই ক্যানসারে মারা যান ৭ লক্ষ ৮৪ হাজার ক্যানসার রোগী।
(ছবি সৌ:Unsplash)
(তথ্য সৌ: NIH-NCI)