এটিকে মোহনবাগান–২ হায়দরাবাদ এফ সি-২
(ডেভিড উইলিয়ামস, আশিস রাই–নিজ গোল) (বার্থেমিউ ওগবেচে, জেভিয়ার সিভেরিও)
সেই ১৯৭৬ সালে কলকাতা লিগে ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে মাত্র সতেরো সেকেন্ডে গোল করেছিলেন মোহনবাগানের মহম্মদ আকবর। হায়দরাবাদবাসী আকবরের গোলে সাত বছর পর কলকাতা মাঠে ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে জিতেছিল মোহনবাগান। পঁয়তাল্লিশ বছর পর আকবরের সেই রেকর্ডকে মুছে দিয়ে মাত্র ১২ সেকেন্ডের মধ্যে গোল করলেন এটিকে মোহনবাগানের স্ট্রাইকার ডেভিড উইলিয়ামস। আই এস এল-এর ইতিহাসে দ্রুততম গোল করেও টিমের জয়ের মুখ দেখতে পারলেন না হেই অজি স্ট্রাইকার। ৯১ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও ম্যাচটা জিতে ফিরতে পারল না জুয়ান ফের্নান্দোর টিম। জিতলে শুধু জয়ের হ্যাটট্রিকই হত না এক লাফে আই এস এল-এর পয়েন্ট টেবলের এক নম্বরে চলে যেতে পারত মোহনবাগানিরা। কিন্তু যা হয়নি তা নিয়ে অনুতাপ করে লাভ নেই। বরং বুধবারের ম্যাচ ড্র করে নয় ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে এক নম্বরে চলে গেল হায়দরাবাদ। এত দিন এক নম্বরে থাকা মুম্বই সিটি এফ সি চলে গেল দুই নম্বরে। আর নয় ন্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান উঠৈ এল তিন নম্বরে।
শুধু ১২ সেকেন্ডে গোল করাই নয়< ডেভিড উইলিয়ামস এদিন যা খেললেন তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। নিজে গোল করেছেন, জনি কাউকোকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। রয় কৃষ্ণকে বসিয়ে রেখে তাঁকে শুরু থেকেই নামিয়েছিলেন জুয়ান ফের্নান্দো। এই মরসুমে ম্যাচের পর ম্যাচ বসে থেকে থেকে এক রকম হতাশার মধ্যে পড়ে যাচ্ছিলেন ডেভিড উইলিয়ামস। শোনা যাচ্ছিল জানুয়ারি ট্রান্সফারে তিনি নাকি দল বদলাবার কথা ভাবছেন। জুয়ান সে সবের সমাধান করে দিলেন। প্রথম থেকেই উইলিয়ামসকে নামানোয় এবং মাত্র ১২ সেকেন্ডে তাঁর গোলের পর জুয়ান যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন তাতে স্পষ্ট উইলয়ামের সাফল্যকে তিনি নিজের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন। ১৮ মিনিটে অমরিন্দর সিং একটা বাজে গোল খাওয়ালেন মোহনবাগানকে। বাঁ দিক থেকে ভেসে আসা একটা বল গ্রিপ করতে গিয়ে তিনি হাত থেকে বল ফেলে দিলেন। সামনেই ওৎ পেতে থাকা ওগবেচে আলতো পুশে গোলটা শোধ করে দিলেন।
এ রকম একটা বাজে গোল খেলে যে কোনও টিমেরই মনোবল তলানিতে পৌছে যাবে। কিন্তু মোহনবাগান সেটা হতে দিল কোথায়? হুগো বুমো এবং ডেভিড উইলিয়ামের সম্মিলিত আক্রমণ হায়দরাবাদ ডিফেন্সকে একটার পর একটা আক্রমণে ঝাঁঝড়া করে শুরু করল। এই আক্রমণগুলো থেকে গোল হতেই পারত যদি মনবীর সিং এবং লিস্টন কোলাসো তাদের সামনে আসা সুযোগগুলো থেকে গোল করতে পারতেন। দ্বিতীয়ার্দ্ধে উইলিয়ামস একটা সোনার সুযোগ তৈরি করে দিলেন কোলাসোর জন্য। সামনে শুধু কাট্টিমণিকে পেয়েও গোলে বল রাখতে পারলেন না এই মরসুমে পাঁচটা গোল করে ফেলা কোলাসো।
ততক্ষণে অবশ্য জনি কাউকোকে দিয়ে গোলটা করিয়ে ফেলেছেন উইলিয়ামস। ৬৪ মিনিটে ডান দিক দিয়ে উঠে তিনি ঠিক বলটা সাজিয়ে দিয়েছিলেন জনির মাথায়। আলতো হেডে গোল করতে অসুবিধে হয়নি কার্ল ম্যাকহিউর বদলে মাঠে আসা কাউকোর। বলটা গোলের দিকে যাওয়ার সময় ডিফেন্ডার আশিস রাইয়ের মাথায় লেগে যায়। তাই গোলটা কাউকোর নামে দেননি রেফারি। বিরতির একটু আগে সংঘর্ষে আহত হন ম্যাকহিউ। তাঁর বদলে নেমে কাউকো খারাপ খেলেননি। আসলে মোহনবাগানের যে রোগটা ছিল অর্থাৎ ডিফেন্সের ভুলে গোল খাওয়া সেই রোগটা অনেকটাই সারিয়ে ফেলেছেন জুয়ান। তাঁর দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার তিরি এবং প্রীতম কোটাল এদিন ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার নাইজিরিয়ার বার্থোমিউ ওগবেচেকে একবারের জন্য সুযোগ দেননি। বল না পেয়ে ওগবেচে দিশেহারার মতো ঘুরে বেড়ালেন। শুধু ওগবেচে কেন হায়দরাবাদের ফরোয়ার্ড কিংবা মাঝ মাঠের ফুটবলাররা বল নিয়ে বাগান পেনাল্টি বক্সের আশেপাশে ঘুর ঘুর করলেও কাজের কাজ কিছু করতে পারেনি। এই ম্যাচটা থেকে তিন পয়েন্ট পাওয়া উচিত ছিল মোহনবাগানের। কিন্তু ৯১ মিনিটে দূর থেকে ভেসে আসা সেন্টারে হেড করে গোল করে দলকে এক পয়েন্ট এনে দিলেন স্পেনের স্ট্রাইকার জেভিয়ার সিভেরিও। এই পয়েন্টটাই হায়দরাবাদকে আই এস এল-এর মগডালে নিয়ে গেল। তবে জুয়ানের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। তিনি যেভাবে দলটাকে গুছিয়ে ফেলেছেন তাতে এই মোহনবাগান যে অনেক দূর যাবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। রয় কৃষ্ণকে শেষ কুড়ি মিনিটের জন্য নামানো হয়েছিল। তিনি কিছু করতে পারেননি। তবে এ ম্যাচের আসল প্রাপ্তি তো ডেভিড উইলিয়ামস। তিন পয়েন্ট না এলেও জুয়ান কিন্তু জয়ী।