‘ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন…’— কবির আকাশকুসুম কল্পনা নিয়ে কয়েক যুগ ধরে দরিদ্র ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী যারপর নাই আহ্লাদিত, আত্মতৃপ্তির নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলেন। রামরাজত্বে এসে হঠাৎ যখন সেই আচ্ছন্ন দশা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হল আমজনতা, তখন সাদা চোখে দেখল দেশের বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব ফ্যাকাশে। আমের শাঁস চুষে খেয়ে, জনতাকে আঁটি করে ফেলে দেওয়া হয়েছে শ্মশানে, গোরস্তানে অধুনা মা গঙ্গার বুকে। বিকাশের ফানুস ফেঁসে গেছে। আত্মনির্ভরতার স্থানে বেরিয়ে পড়েছে পরজীবী শিরদাঁড়ার সুতো। করোনা দেশের খড়-মাটি-রংয়ে চাপা দেওয়া কঙ্কালটাকে উলঙ্গ করে দিয়েছে। ছদ্ম-জঙ্গি খেলা, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘হল্লা চলেছে যুদ্ধে’ বলে রক্তচক্ষু, আবার চীনের মোকাবিলায় থুতু চেটে খাওয়া মনোভাবে পেট আর ভরছে না। একদিকে রোগ সংক্রমণ, অন্যদিকে টিকার অভাবে ধুঁকছে মহীয়সী ভারতমাতা। দেশের বীরসন্তানরা, যারা প্রবাসে ডলার কামায়, তাঁরাও মাতৃভূমি নিয়ে খিল্লি ওড়াচ্ছে। কেউ ভিক্ষে দিচ্ছে প্রাণবায়ু তৈরির যন্ত্র, কেউ টিকা। তাতেও খান্তি নেই, টিকার যা দাম তাতে কেনার সামর্থ্য নেই। লাইন দিয়ে টিকা নিতে বা সংক্রমণ পরীক্ষা করতে গিয়েও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। উজ্জ্বল পরমায়ুর আশীর্বাদধন্যরা জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ নিয়ে বাস করছেন। এখন যা দশা, তাতে হয় মরতে হবে। না হয় আধমরা হয়ে বাঁচতে হবে। পছন্দ নাগরিকের। করোনায় না মরলে অর্ধাহার, অনাহার, বেকারের ‘টিকা’ কপালে সেঁটে রকবাজি করে কাটাতে হবে। ভারত থেকেও শেষমেষ মধ্যবিত্ত বলে একটা শব্দ ফসিল হয়ে গেল। আর রোজ ঘুম থেকে উঠলেই শুনতে হবে এই দেখ, আমি বাড়ছি মাম্মি। ঠিক যেমনটা ভিড় বাসে কন্ডাক্টর সাহেব বলেন, পিছন দিকে এগিয়ে যান। মূর্তি, মন্দির, কাশ্মীর, লাদাখ, উত্তর-পূর্বী সীমান্ত নিয়ে ভাষণে ১৩০ কোটি মানুষ বিরক্ত। করোনা যোদ্ধা ভারতের মানুষের ‘মনের কথা’ কি সেন্ট্রাল ভিস্টার ভিতের নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে না? ফকিরের কানে কি যাচ্ছে না, মা আমার খিদে পেয়েছে, খেতে দে না! মনে যেন থাকে, পেটের আগুন প্রথমে চোখে জ্বলে ওঠে। তারপর অগ্ন্যুৎপাত ঘটে। তখন কিন্তু ফকিরের ‘ঝড়ে বক মারা’র বিদ্যা ফাঁস হবেই। লোটাকম্বলটা যেন কাঁধেই ঝোলানো থাকে। হিটলারকেও পাতালঘরে নিজের খুলি ওড়াতে হয়েছে, পালানোর পথ ছিল না।