মাঝে মধ্যে মনে হয় আমাদের মানে এই আম আদমির মাথায় নিশ্চই লেখাই আছে যে আমরা আসলে চার অক্ষরের বোকা, অন্তত রাজনীতির মানুষজন মানে ঐ নেতারা, তাঁদের আমচা চামচা সাংবাদিকেরা আমাদের দেখলেই এমন সব কথা বার্তা বলেন যা একজন রামপাঁঠা বা আস্ত গাধাকেও বিশ্বাস করানো যাবে না। কিন্তু তারা তা কেবল বলেন না, তাঁদের লক্ষ লক্ষ অনুগামী, কর্মীদের দিয়ে বলান ও। ধরুন স্বাধীনতা এসেছে ১৯৪৭ এ। ১৯৫২ সাল থেকে নিয়ম করেই নির্বাচন হচ্ছে, প্রত্যেক নির্বাচনের আগে এই এঁরা আমাদের দরজায় এসেছেন, বলেছেন রোটি কাপড়া আউর মকান মাঙ্গ রহা হ্যায় হিন্দুস্থান, বলেছেন গরিবী হাটাও, বলেছেন বিপ্লব এলো বলে, বলেছেন আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে। নানান কিসিমের নানান রঙ এর, নানান মতের রাজনৈতিক দল এইসব কথা বলেছেন, তাঁদের কর্মীরা এসব কথা আবার বলেছেন, আর গণমাধ্যম, সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেলে সে সব বারবার বলা হয়েছে। বেঝিঝক বলা হয়েছে। এই রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকেই মানুষ শুনেছে সুখি আর সম্পন্ন দিনের কথা, উন্নয়ন আর বিকাশের কথা। কেবল কি প্রতিশ্রুতি? একের বিরুদ্ধে অন্য আরেকজন অভিযোগ এনেছে কাঁড়ি কাঁড়ি, তারপর সেসব অভিযোগ হাওয়াতে মিলিয়ে গেছে। বলা হয়েছে গলি গলি মে চোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী নাকি বোফর্স কামান বেচে প্রচুর টাকা কমিশন নিয়েছে। সে অভিযোগ বিশ্বাস করেই মানুষ রাজীব গান্ধীর সরকার ফেলে দিয়েছেন, কিন্তু সেই কমিশন? একটা কুঁচো কাগজও পাওয়া যায় নি। এই বাংলার এক নেতাকে কারনানি ম্যানসনের মালিক বলে দেওয়া হল, তারপর তিনি মারা যাবার পরে জানা গ্যালো একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে, তাতে টাকা নেই। মানুষকে মিথ্যের পর মিথ্যে, মিথ্যের পর মিথ্যে বলা হয়েছে, হচ্ছে। আপাতত এক নতুন শব্দ এসেছে, সেটিং, যেখানেই তিন দল আছে, তিন জোট আছে, সেখানেই মানুষকে বলা হচ্ছে সব সেটিং, আমরা হলাম সাধু, ওরা দুজনেই এক, সব সেটিং, সেটাই বিষয় আজকে, সেটিং……… সেটিং………।
এ রাজ্যে রোজেই কথা শুনতে পাবেন। সি পি এম রোজ বলে চলেছে তৃণমূল আর বিজেপির সেটিং আছে, পালটা তৃণমূল ও বলে চলেছে, বাম কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির সেটিং আছে। আলোচনা করবেন? তার আগে চলুন কেরালাতে। সেখানে ছবিটা উলটো। বামেরা বলে কংগ্রেস বিজেপির সেটিং আছে, কংগ্রেস বলে বাম আর বিজেপির সেটিং আছে। ধরুন কেরালা, এই প্রথম কোনও রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী ১৪ দিনের তফাতে আবার গেলেন, আগে গিয়েছিলেন ৩ জানুয়ারি তে, এবারে গেলেন ১৭ জানুয়ারিতে, তিনি গিয়েছিলেন গুরুবায়ুর মন্দিরে, সেখানে তিনি সুরেশ গোপীর মেয়ের বিয়েতে থাকবেন এটা ঐ বিয়েতে অভ্যাগতদের দেড় মাস আগে থেকে জানা ছিল, এরপর তিনি কোচি ডকের মধ্যেই নতুন ড্রাই ডক তৈরি হচ্ছে, ৪০০০ কোটি টাকার প্রকল্প, তার উদ্বোধনে গিয়েছিলেন। ১৬ তারিখ রাতে মূখ্যমন্ত্রী বিজয়ন গেলেন এয়ারপোর্টে, প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে, সে ছবি দেখিয়ে কেরালা কংগ্রেসের নেতারা বললো, দেখুন সেটিং আছে, সি পি এম বিজেপির সেটিং। অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেলেন দিল্লিতে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে, রাজ্যের দাবী সম্বলিত কাগজ নিয়ে আরও কিছু নেতাকে নিয়ে গিয়ে দেখা করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, ছবি উঠলো, সি পি এম সেই ছবি দেখিয়ে বললো, বুঝুন সেটিং আছে। সব্বাই জানে, সি পি এম, কংগ্রেস নেতারা তো আরও ভাল করেই জানেন, নীতিগত দিক থেকে তৃণমূল আর বিজেপির সেটিং সম্ভব হলেও কিন্তু তৃণমূলের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের জন্যই তা সম্ভব নয়। ওদিকে কেরালা কংগ্রেস আজ নয় বহু কাল ধরেই তারা বলে আসছে কেরালাতে বিজেপি সি পি এম সেটিং আছে, উদাহরণ স্বরূপ এন ডি এ তে যোগ দেওয়া জেডি এস দলের মন্ত্রী এখনও কিভাবে ভিজয়নের মন্ত্রী সভায় আছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে। গত পরশু কেরালার সবথেকে বেশি প্রচারিত মালয়ালম মনোরমাতে কংগ্রেসের বিবৃতি ছাপা হয়েছে। অন্য দিকে মূখ্যমন্ত্রী এবং সি পি এম পলিট ব্যুরো নেতা পিনারাই ভিজয়ন বহুবার বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করেছেন যে কেরালাতে কংগ্রেস বিজেপির বি টিম। এই দন্দ্ব আজকের নয়, ওখানে বিজেপির সঙ্গে সেটিং এর অভিযোগ কংগ্রেস এর, সি পি এম বলে আর কংগ্রেস তার উল্টোটা, এই প্রসঙ্গেই রাহুল গান্ধী ২০১৯ এ নিজের কন্সটিচুয়েন্সিতে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন সি পি এম এক অবসোলিট আইডিওলজি নিয়ে ভুল পলিটিক্স করে। এ রাজ্যে বামেরা সরকারে থাকা তৃণমূলের বিরোধী, বহু বিষয় নিয়েই তাঁরা বিরোধিতা করতেই পারেন, দূর্নীতি আছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে অরাজগতা আছে, কোর সেক্টর ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে না, দল এবং সরকারে অভূতপূর্ব দূর্নীতির অভিযোগ আছে, কিন্তু এসবের চেয়েও বামেরা এক সেটিং তত্ত্বকে হাতিয়ার করছেন কেন? কারণ যদি বিজেপি মমতা এক হ্যায় এটা মানুষকে বোঝানো যায় তাহলে মমতা বিরোধী সরকার বিরোধী সব ভোট আসবে বামেদের দিকে, তারমানে কেবল নির্বাচনী পাটিগণিতের হিসেব কষেই এই সেটিং এর তত্ত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই হিসেবে তৃণমূলও বাম বিজেপি সেটিং এর কথা বলছে। একইভাবে কেরালাতেও বাম আর কংগ্রেসের একে অপরকে সেটিং তত্বের অভিযোগে দাঁড় করানোটাও আদতে এক নির্বাচনী পাটিগণিত। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম, আচ্ছা এই যে বামেরা বিজেমূল তত্ত্বের কথা বলে, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের কথা বলে বা তৃণমূল দল বামেদের বিজেপির বি টিম বলে, তারাও এক সেটিং তত্ত্বের কথা বলে, তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য? শুনুন তাঁরা কী বলেছেন।
মানুষ বোকা নয়, মানুষ কে বোকা বানানো অত সহজও নয়। ঐ যে কথায় আছে না একটা মানুষকে অনেকদিন বোকা বানানো যায়, কিছু মানুষকে কিছুদিনের জন্য বোকা বানানো যায়, কিন্তু সব মানুষকে চিরদিনের জন্য বোকা বানানো যায় না। মানুষকে সত্যি কথাটা বলুন, সত্যি অবস্থাটা বলুন, মানুষ বুঝবে, আপনার কথায় সাড়া দেবে আর না হলে অমন ন্যানো গাড়ি দাঁড় করানোর পরেও মানুষের বিশ্বাস অর্জন না করতে পারলে শূন্যতে ঠেকা কেউ আটকাতে পারবে না।