একটা ফ্লপ জনসভা, যা নিয়ে কেবল তৃণমূলই হাসছে এমন নয়, বিজেপি দলের লোকজনও হাসাহাসি করছে। অনেকেরই বক্তব্য এতে করে দলের মুখ পুড়লো। এ ছাড়াও সাংবাদিক মহলে, রাজনৈতিক মহলে, বিজেপি দলের মধ্যেও আলোচনা চলছে, অমিত শাহ এলেন, ঘোষিত কর্মসূচী মেনে তাঁর আরও ৪৫ মিনিট সভাতেই থাকার কথা, তিনি সাত তাড়াতাড়ি চলে গেন কেন? অনেকের বক্তব্য উনি আসার আগেই রাজ্য বিজেপির কিছু নেতা জানিয়েছিলেন সভা ফ্লপ হতে যাচ্ছে, রিপোর্ট পেয়েছেন যে বুথ স্তরে কোনও সংগঠনই গড়ে তোলা যায় নি। এসে খানিক টেরও পেয়েছেন। ওদিকে সদ্য এবং আচমকাই দলের রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন নগেন্দ্র রায় ওরফে স্বঘোষিত অনন্ত মহারাজ, তিনি আবার মূলত অমিত শাহের সমর্থনেই প্রার্থী হয়েছেন, তিনি এদিন ছিলেন দিল্লিতে, জানিয়েছেন তাঁকে নাকি ডাকাই হয় নি। অনুপম হাজরা, দলের সেন্ট্রাল একজিকিউটিভ কমিটির সদস্য, তিনিও একই কথা বলেছেন, ডাকাই হয় নি। শুভেন্দু অধিকারী মঞ্চে উঠে কিছু বলেছেন বটে কিন্তু তাঁর গলা থেকে ফিস ফিস করে যা বেরিয়েছে তা পাবলিক শুনতে পান নি। সব মিলিয়ে হাউ ইজ দ্য জোশ, জিজ্ঞেষ করার সুযোগ নেই, কাজেই ছোটা মোটাভাই ফিরে গেলেন সাত তাড়াতাড়ি, আর যাবার সময়ে দেখলেন ঝুলছে ব্যানার, মোটাভাই ভোট নাই। এরপরেও যদি রাগ না হয় তো রাগটা হবে কবে? চৌবাচ্চা ফুটো হয়ে গেছে, একধার থেকে জল বের হচ্ছে, এক গুজরাট ছাড়া আগের বারে যতজন সাংসদ জিতে এসেছিলেন, সেই সংখ্যা কোনও রাজ্যেই সম্ভব নয়, তার ওপরে আবার সংগঠন এলোমেলো। তাই কি উনি যাবার পরের দিনেই পাইক বরকন্দাজ, সান্ত্রী সিপাই এসে হাজির এই বাংলায়। আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, অমিত শাহের পেছনে পেছনেই এল ইডি, সি বি আই?
সভা শেষের পরদিন সক্কাল বেলায় আমরা জানলাম সি বি আই এসেছে, ইডি এসেছে। সারা কলকাতা জুড়ে খ্যাপা ষাঁড়ের মতই ঘুরে বেড়াচ্ছেন তেনারা। বার তিনেক ঘরে গেছে, বার চারেক দপ্তরে ডেকেছে, সেই কাউন্সিলার বাপ্পাদিত্য দাসগুপ্তের বাড়িতে সি বি আই, সাত সকাল থেকে চোখে চোখ রাখনেওলারা চিল চিৎকার করার পরে দুপুর বেলায় সি বি আই বেরিয়ে এল, একই সময়ে তৃণমূল নেতা বিধাননগরের কাউন্সিলর দেবরাজ চক্রবর্তির বাড়ি, তাঁর স্ত্রী গায়িকা, তৃণমূল বিধায়ক অদিতি মুন্সির স্টুডিও তে সি বি আই হাজির, তাঁরাও দুপুর বেলায় বেরিয়ে গেছেন কিন্তু সকাল থেকে সি বি আই হানা, হুঁ হুঁ বাওয়া এবারে টাকা গোনার মেশিন আসছে বলতে বলতে গলা শুকিয়ে গেছে বিজেপির ঘেউ বাহিনীর। এবং শেষমেষ আরেকজনের বাড়িতে, ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক, জাফিকুল ইসলামের বাড়িতে ২৪/২৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়, সেয়া গুনতেও নাকি টাকা গোনার মেশিন আনতে হয়েছে, যে কোনও মাছের বাজারের কোনও ব্যবসায়ী যেটা হাসতে হাসতে করে দিত, সেটা করার জন্য মেশিল এল, সেটাই বড় করে মিডিয়া দেখালো, কিন্তু এই ২৪/২৫ লক্ষের এক হিসেব ঐ বিধায়ক দিয়েছেন, তা শোনানো হল না। আচ্ছা এরমানে আবার এরকম নয় যে উনি দুধ কা ধুলা, যিশুখ্রিস্টের সন্তান বা ধর্ম্পূত্র যুধিষ্টিরও নন। এই ক বছরের মধ্যে রমরম করে বেড়েছে ব্যবসা, এখন বেশ কটা গাড়ি, বাড়ি, কলেজ ইত্যাদির মালিক। কিন্তু এটাই কি অভিযোগ? মানে হঠাৎ করে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন এবং তাই সি বি আই গেছে? যদি তাই হত, তাহলে তো অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের ঘরেই আহে সি বি আই পাঠানো উচিত, গিয়েছে কী? যায় নি। তাহলে কারণ হঠাৎ সম্পদ বেড়ে যাওয়া নয়, তৃণমূল বা বিরোধী দলে থেকে সম্পদ বাড়ালে, ফাঁকতালে দু পয়সা কামালে সিবি আই যাবে, ইডি যাবে, গিয়েছে। আসলে সংগঠন দিয়ে, দলের কাজ দিয়ে, মোদি শাহ সরকারের প্রকল্প দিয়ে যদি মানুষের ভোট পাওয়া যেত, তাহলে তো প্রশ্নই ছিল না। কিন্তু সেখানে তো লবডঙ্কা, দেশের অর্থনীতি ইন মায়ের ভোগ, সে তো কবেই। চাকরি নেই, মূল্যবৃদ্ধি, বৈষম্য বাড়ছে, এসব তো আচেই। তাহলে একমাত্র উপায় হল বিরোধীরা চোর, এই ধারণা এই পার্সেপশনটাকে সামনে রাখা। আর সেই জন্যেই মাঝে মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ইডি আসছে, সি বি আই আসছে, ইনকাম ট্যাক্স আসছে, বিভিন্ন এজেন্সি আসছে। আমরা মাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, গত ৫ বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ই ডি, সি বি আই এর হানার কারণ কতটা রাজনৈতিক? আর কতটা সত্যিই দূর্নীতি রোখার জন্য এই লাগাতার সি বি আই, ইডি, ইনকাম ট্যাক্স হানা চলছে? শুনুন কী বলেছেন মানুষজন।
ছোতা মোতা ভাই এর সভা ফ্লপ তাই এল সি বি আই, ইডি? যদি তেমনটাই হয়ে থাকে তাহলে বলবো এটাও চুড়ান্ত ফ্লপ। মানুষ আর এই হানাদারিতে তেমন আস্থা রাখছে না, ৩ রা ফল বের হবে মিলিয়ে নেবেন, গরীব মানুষ আপাতত বুঝেছে ওসব বড় বড় প্রকল্প ইত্যাদি বুকনি দিয়ে তার কোনও কাজ নেই, সে এখন ঐ দূর্নীতি, রাম, মার্ক্স, আল্লা নিয়েও ভাবতে রাজী নয়, সে চায় সরাসরি কিছু বেনিফিট, সেটাও ভোটের আগেই, আই শপথ বলে বলে ফেলুন কত দেবেন? আমার বৌ ৫ টা ঘরে কাজ করে তার অ্যাকাউন্টে কত আসবে? ফ্রি তে আর কী কী দেবেন বলুন? পেলে ভোট দেবো, নইলে নয়, এতদিনে দেশের গরীব মানুষজন নিজের হিসেবটা নিজেই বুঝে নিতে শিখে গেছেন।