কৌশিক মুখার্জি আজ তৃপ্ত, উল্লসিত, উচ্ছসিত। কৌশিক মুখার্জি কে চেনেন না? উনি একজন বিখ্যাত চলচিত্র পরিচালক, ওনাকে অবশ্য অনেকে চেনে কিউ নামে, কৌশিকের কিউ। কেন উল্লসিত? কারণ তিনি একটা ছবি করেছিলেন, তার নাম ছিল গান্ডু। তো ছবিটার দেখার আগেই নাম শুনে ছিছিক্কারে ভরেছিল আকাশ, এই আশালীন শব্দ মানুষ প্রকাশ্যে ব্যবহার করে নাকি? বন্ধুমহলে তবুও চলে কিন্তু প্রকাশ্যে একটা পুরোদস্তুর ফিল্ম আসছে, তার নাম গানডু? তো বাঙালি তখনও গুগল করে উঠতে শেখেনি, তাই একে ওকে জিজ্ঞাষাও করেছিল, শব্দটা তো ভারি খারাপ, কিন্তু শব্দটার মানে কী? যে যার মত পারে বলেছিল, যে যার মত করেই বুঝেছিল। কিন্তু সে জমানা গয়া, এখন গুগলবাবার দৌলতে সবাই এ শব্দের মানে জানে, খুব শুদ্ধ ভাষায় পুরুষ সমলিঙ্গ যৌনতার সঙ্গে জুড়ে থাকা এই শব্দের উচ্চারণ এখনও সিনেমার ভিলেন বা মদ্যপ ফ্রাস্টেটেড পুলিশ অফিসারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাহলে কিউ হঠাৎ খুশি কেন? কারণ আমাদের রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, বিদ্যাসগরের জেলা থেকে উঠে আসা বলে গর্বিত জননেতা শুভেন্দু অধিকারি প্রকাশ্যেই ক্যামেরার সামনে এই শব্দ প্রয়োগ করেছেন, কেবল প্রয়োগ করাই নয় তিনি এই শব্দটি রাহুল গান্ধীর উদ্দেশ্যেই বলেছেন। এই সংস্কৃত উচ্চারণের কথা ছড়িয়ে গেছে ইন্টারনেটে, শুনলাম জনান্তিকে তিনি বলেছেন, খুব খারাপ আর কী বলেছি? এ তো হামেশাই বলা হয়। তার মানে খুব পরিস্কার, শিশু বয়স থেকেই উনি এই শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত এবং এই শব্দ নিশ্চই ওনার চারপাশে, বাড়িতে ব্যবহার হতে শুনেছেন, এখন নিজেও ব্যবহার করছেন, এই তো। সেটাই বিষয় আজকে, গান্ডু শুভেন্দু অধিকারি।
আপব্রিঙ্গিং বলে একটা শব্দ আছে, বড় করে তোলা, বড় হয়ে ওঠা। এমনিতে মানুষকেও খাঁচায় রেখে খাবার দাবার দিলে সে গায়ে গতরে বেড়ে উঠবে বৈকি, কিন্তু পশুদের সঙ্গে মানুষের তফাত হল তার বিবেচনা বোধ, সে তার শৈশব থেকে প্রতিটা দিন তার চারপাশের পরিবেশ থেকে শেখে, প্রথমেই যা শেখে তা হল ভাষা আর খাবার, তারপর ধিরে ধিরে সেই ভাষার ব্যকরণ, সেই খাবারের ভালো মন্দ, পোশাক আশাক, তারও পরে নিয়ম, নীতি, রুচিবোধ ইত্যাদি। তো শুভেন্দুর সমস্যা সম্ভবত সেখানেই, যে ভাষা বা শব্দের প্রয়োগ ছোট্টবেলা থেকে শুনে এসেছেন, সেটাই এখনও তাঁর জিবের গোড়ায় লটকে আছে, ওদিকে আরেক নেতা সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির রাজ্য সভাপতি, তিনি নিশ্চই তাঁর বড় হয়ে ওঠার সময়েই দেখেছেন মায়ের বয়সী মহিলাকে কষে থাপ্পড় মারতে, কাকে দেখেছেন জানি না কিন্তু নিশ্চই দেখেছেন, আজ মায়ের বয়সী এক মহিলা যিনি নাকি রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী তাঁকে কষে থাপ্পড় মারার ইচ্ছে তো তাঁর হতেই পারে, হয়েছে, সেটা জানিয়েও দিয়েছেন। বিরোধী দলের নেতা দেশের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা কে অনায়াসে গান্ডু বলে দিলেন, সেটা তাঁর বেড়ে ওঠার সমস্যা, এই সমস্যা অনেকের আছে, এরজন্য তিনি যতটা দায়ী, তারচেয়েও বেশি দায়ী তাঁর গুরুজনেরা, বাবা, মা, আর যদি দেখা যায় তাঁদেরও রুচি, ভাষা একইরকম তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কাজেই এই শুভেন্দুর, সুকান্তর কাউন্সিলিং দরকার, চিকিৎসা দরকার, কে করাবে? জানা নেই। আরও আছে, সমস্যা কি একটা, রাহুল গান্ধী নাকি খুব বোকার মত কিছু বলেছেন, সেটা নিয়েই শুভেন্দুর এই মন্তব্য। আসুন দেখা যাক রাহুল কী বলেছিলেন। বাবা রাজীব গান্ধী, ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধী, দুজনেই শহীদ হয়েছেন, মাথায় থ্রেট পার্সেপশন নিয়ে বড় হয়েছেন, পড়াশুনো ইংরিজী মিডিয়ামে, হিন্দিতে সড়গড় হয়েছেন তো বছর দশেক হল। বক্তৃতা দিতে গিয়ে ইংরিজী শব্দ বলে ফেলেন, ইংরিজী শব্দের জুৎসই হিন্দি হাতড়িয়ে বেড়ান, সেই রাহুল বলছেন সুবহ উঠতে হো, স্টোভ মে কোয়লা ডালতে হো, উসকো জলাতে হো, স্টোভে কয়লা?
হ্যাঁ ইংরিজি স্টোভ শব্দটার অর্থ উনুন, শুভেন্দু বা হিমন্ত বিশ্বশর্মা অবশ্য ডিকশনারি খুলে দেখবেন কিনা, দেখতে পারেন কিনা জানি না, কিন্তু ডিকসনারি খুলে দেখে নিন, স্টোভ মানে উনুন, উনি কয়লার উনুনের কথা বলেছেন, যেখানে কয়লা দিয়ে আগুন ধরিয়ে চা এর জল বসানো হয়। রাহুল গান্ধীর আপব্রিঙ্গিং এ এই উচ্চারণ খুব স্বাভাবিক। আমাদের অনেকের কাছে স্টোভ হল কেরোসিন স্টোভ, ইংরিজি স্টোভের বাংলা নয়, স্টোভ শব্দের ধারণাটাই আমাদের কাছে কেরোসিন তেলের স্টোভের, কাজেই মনে হতেই পারে যে এ তো ভারি মজা, মানুষটা খামোকা স্টোভের ওপর কয়লা দিতে বলছে কেন? আসলে উনি ঠিক বলছেন, আবার আমাদের ধারণাও ভুল নয়, কিন্তু এটা শুনেই রাহুল একটা গান্ডু, এই কথাটা যখন শুভেন্দু বলেন, তখন তাঁরা আপব্রিঙ্গিং সম্পর্কে আমাদের ধারণাও সাফ হয়। যখন দলের রাজ্য সভাপতি মায়ের বয়সী এক মহিলাকে থাপ্পড় মারার ইচ্ছের কথা প্রকাশ্যেই জানান, তখন ওনার আপব্রিঙ্গিং নিয়ে সত্যিই করুণা হয়। একটু ভদ্র পরিবেশে বড় হলে এরকম শব্দ উচ্চারণ তো তাঁরা করতেন না। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেষ করেছিলাম, বিজেপি দলের বিরোধী দলনেতা দেশের অন্যতম বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীকে গান্ডু বলছেন, বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী, মায়ের বয়সী এক মহিলাকে থাপ্পড় মারার কথা বলছেন, এগুলো কি তাঁদের বড় হয়ে ওঠার সমস্যা? যে পরিবারে, যে পরিবেশে বড় হয়েছেন, সমস্যা কি সেখানেই? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
তো আজ ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছেন শুভেন্দু অধিকারি, আজ বলেছেন গান্ডু কথাটার মানে হল বোকা, এ তো অসংসদীয় শব্দ নয়, কাজেই এ শব্দ ব্যবহার করে তিনি কোনও ভুল করেন নি। তাহলে তো ল্যাটা মিটেই গ্যালো। গ্যালো কি? না গ্যালো না, ধরুন আমার তো মনে হয় শুভেন্দু অত্যন্ত বোকা বলেই কেবল মুখ্যমন্ত্রী হবার জন্য দলবদল করেছেন, যে সাধ তাঁর পূর্ণ হবে না, কারোর সেটা নাই মনে হতে পারে, আমার মনে হয় বা বলা উচিত আমার ধারণা তিনি বোকা, এখন সমস্যা হল আমি কি তাঁকে গান্ডু শুভেন্দু বলবো? বললে তিনি রাগ করবেন না তো?
দেখুন আজকে: