মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আগেই শ্রী সিমেন্ট এবং ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের মধ্যে চুক্তিজট কাটতে চলেছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে এই সপ্তাহের মধ্যেই মিটতে পারে প্রায় এক বছর ধরে ঝুলে থাকা চুক্তি জট। যার ফলে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব তাদের ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে এগ্রিমেন্টের কপিতে সই করে দেবে, যা কিছু দিন আগেও প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল। আর তার ফলে সংশয়ে ছিল এই মরসুমে ইস্ট বেঙ্গলের টিম গড়া, কলকাতা লিগ এবং আই এস এল খেলা। এখন যা পরিস্থিতি তাতে সব সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। এবং এই ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন ক্লাবের প্রাক্তন সচিব, বিশিষ্ঠ আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত। মূলত তাঁরই উদ্যোগে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান হতে চলেছে। চুক্তির যে সব জায়গাগুলোতে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে আপত্তি ছিল, পার্থ সেগুলোকে এমনভাবে মেরামত করেছেন যাতে উভয় পক্ষ তা মেনে নেওয়ার জায়গায় যেতে পারে। পার্থ কলকাতা ডিজিটাল পেজকে বলছিলেন, ” আমি শ্রী সিমেন্টের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেই একটা চূড়ান্ত জায়গায় আসার চেষ্টা করছি। মনে হয় এর ফলে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের পক্ষে আর সই করতে অসুবিধে হবে না। আমি আমার প্রস্তাব ক্লাবকে ই মেলে জানিয়ে দিয়েছি। এখন ক্লাবের কার্যকরী কমিটি যদি তা মেনে নেয়, তাহলে সব সঙ্কটের অবসান হবে।” মঙ্গলবার বিকেল চারটেতেই ক্লাবের কর্মসমিতির সভা ডাকা হয়েছে। আশা করা যায়, সেদিনই এগ্রিমেন্টে সই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিছু দিন আগে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের কর্মসমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কোনও অবস্থাতেই তারা শ্রী সিমেন্টের পাঠানো চুক্তিপত্রে সই করবে না। সেদিন ক্লাবের মনোভাব ছিল, যাই হোক না কেন তারা এগ্রিমেন্টে সই করবে না। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল শ্রী সিমেন্টের পাঠানো চুক্তিপত্রে সই করলে ক্লাবের সমর্থক এবং সদস্যদের স্বার্থহানি হবে। এর পর আসরে নামানো হয় ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলারদের। মোট ৫৭জন প্রাক্তন ফুটবলারের উপস্থিতিতে দুই প্রাক্তন অধিনায়ক সুকুমার সমাজপতি এবং চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত হয় যে শ্রী সিমেন্টের পাঠানো টার্ম শিট এবং এগ্রিমেন্টের মধ্যে অনেক অসঙ্গতি আছে। প্রাক্তনরা এর পর ঠিক করেন, সমস্যা মেটানোর জন্য এর পর তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করবেন।
তার আগেই অবশ্য জট কাটানোর জন্য ক্লাবের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয় পার্থবাবুকে। গত ২৯ জুলাই ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার ই মেল করে পার্থবাবুকে সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পেয়েই পার্থ টার্ম সিট এবং এগিমেন্টের কপি পড়ে বেশ কয়েকটি জায়গা চিহ্ণিত করেন যেগুলো ঠিক না করলে ক্লাবের পক্ষ থেকে এগ্রিমেন্টে সই করা মুশকিল। এর পর পার্থ যে সব বিষয়গুলিকে চিহ্ণিত করতে চেয়েছেন সেগুলি এই রকম।
(১) এগ্রিমেন্টে ছিল ইনভেস্টের এক তরফাভাবে নব্বই দিনের নোটিশে চুক্তি বিচ্ছেদ করে চলে যেতে পারে। এবং তখন ক্লাব তার অধিকার ফিরে পাবে না। এখন বলা হচ্ছে ইনভেস্টর যদি নিজের থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে চলে যায়, তাহলে ক্লাব তার সব অধিকার ফিরে পাবে।
(২) এত দিন এগ্রিমেন্টে নতুন ইনভেস্টর আসার কোনও সুযোগ ছিল না। এখন নতুন প্রস্তাবে ক্লাব এবং ইনভেস্টের যদি মনে করে তাহলে নতুন স্পনসর কিংবা ইনভেস্টর আনতে পারবে। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে শ্রী সিমেন্ট ইস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সের অনুমোদনের উপর।
(৩) টার্মশিটে বলা হয়েছিল, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের শেয়ার কুড়ি শতাংশের নীচে নামবে না। কিন্তু এগ্রিমেন্টে বলা হয়েছে , মেটিরিয়াল ব্রিচ অফ কন্ট্রাক্ট হলে ক্লাবের শেয়ার চব্বিশ শতাংশ থেকে দশ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বোর্ডে ইস্ট বেঙ্গলের ডিরেক্টর সংখ্যাও কমানো হতে পারে। কিন্তু নতুন এগ্রিমেন্টে বলা হয়েছে, এ সব কিছুই হবে না। ক্লাবের শেয়ার যা ছিল তাই থাকবে। আর বোর্ডে ডিরেক্টেরের সংখ্যাও যা ছিল তাই থাকবে। তবে সে ক্ষেত্রে ইনভেস্টের তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম বন্ধ করে দেবে।
(৪) ইনভেস্টের চেয়েছিল ক্লাবের মাঠ, তাঁবু, গ্যালারি সবকিছু ব্যবহারের জন্য শ্রী সিমেন্টকে দিয়ে দিতে হবে। ক্লাব জানিয়েছে, এ সব কিছু ব্যবহারের জন্য সেনার অনুমতি প্রয়োজন। শ্রী সিমেন্ট এই ব্যাপারগুলি মেনে নিয়েছে। তবে তারা সেনার কাছ থেকে নো অবজেকসন চিঠি দিয়েই মাঠ, তাঁবু, গ্যালারি ব্যবহারের অনুমতি পাবে। এ ব্যাপারে ক্লাবকেও সহযোগিতা করে বলতে হবে তাদের কোনও আপত্তি নেই।
(৫) নতুন চুক্তিতে সদস্যদের কোনও স্বার্থহানি হচ্ছে না। তাঁরা নিজেদের সদস্য কার্ড দেখিয়ে তাঁবুতে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ক্লাবকে তিন মাস অন্তর শ্রী সিমেন্টকে জানাতে হবে ক্লাবের বৈধ সদস্য কত। ক্লাবের সদস্যদের সব অধিকার বজায় থাকবে। যদি সেই অধিকারে কোনও পরিবর্তন করতে হয়, তবে বোর্ডকে সেই ব্যাপারে অবহিত করতে হবে। তবে মাঠে যদি কোনও ম্যাচ থাকে কিংবা ক্লাবে কোনও অনুষ্ঠান থাকে তাহলে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। সদস্য সমর্থকরা সেই সব ম্যাচে গ্যালারিতে বসতে পারবে কিংবা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে।
(৬) ক্লাবের একস্ট্রা অর্ডিনারি জেনারেল মিটিংয়ের ক্ষেত্রে ৩১ দিনের নোটিশ দিতে হবে। কার্যকরী কমিটির বৈঠকের ক্ষেত্রে পনেরো দিনের নোটিশ দিতে হবে। এর আগে বলা হয়েছিল মিটিংয়ের ক্ষেত্রে শ্রী সিমেন্টের অনুমতি নিতে হবে। এখন আর সে সবের দরকার নেই। নির্ধারিত সময়ের নোটিশ দিয়ে সভা করা যাবে।
ক্লাব সূত্রের খবর, এই সব বিষয়গুলিতে নমনীয় হওয়ার ব্যাপারে সায় দিয়েছে ইনভেস্টের। তবে আরও একটা ব্যাপারে শ্রী সিমেন্টের কাছে নমনীয় হওয়ার অনুরোধ করেছে ক্লাব। মূল চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে যে কোনও জায়গায় ক্লাবের লোগো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইনভেস্টরের কাছ থেকে অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু পার্থবাবুর প্রস্তাব স্পোর্টিং রাইটসের বাইরে অন্য বিষয়ে ক্লাবের লোগো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইনভেস্টরের অনুমতির প্রয়োজন নেই।
এখন দেখার ইনভেস্টর কোম্পানি এই সব নতুন শর্ত মেনে নেয় কি না। ক্লাবকেও কার্যকরী কমিটির সভায় নতুন শর্তগুলোর অনুমোদন নিতে হবে। তবে মনে হচ্ছে, এত দিনের জট এবার কাটতে চলেছে। শ্রী সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙ্গুর এখন কলকাতায় রয়েছেন। তাই ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের কর্মসমিতি যদি নতুন শর্তগুলো মেনে নেয় তাহলে চুক্তিজট কাটতে সময় লাগবে না।