Placeholder canvas
কলকাতা শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
চতুর্থ স্তম্ভ: গ্যাং রেপের আসামীদের জেল থেকে মুক্তি দিল বিজেপি সরকার।
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By: 
  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২, ০৯:৩৯:৪৬ পিএম
  • / ১৩৫ বার খবরটি পড়া হয়েছে

ঠিক যেই সময়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি, ট্রিম করা দাড়ি, আগে না দেখা, সম্ভবত নতুন কুর্তা জ্যাকেট পরে, স্বাধীনতা দিবসে, বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও এর বাওয়াল দিচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে গুজরাতের সাব জেল থেকে একে একে বের হচ্ছিল ১১ জন পশু৷ এক্কেবারে মানুষের মত দেখতে৷ এদের নাম যশবন্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, রাধেশ্যাম শাহ ওরফে লালা উকিল, বিপিন চন্দ্র জোশি, কেসরভাই বোহানিয়া, প্রদীপ বোহানিয়া, বাকাভাই বোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, নিতেশ ভাট, রমেশ চান্দানা আর একদা হেড কনস্টেবল সোমাভাই গোরি। এরা জেল থেকে বের হওয়ার পরে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াল, ক্যামেরার সামনে তাদের মালা পরানো হল, মিষ্টি খাওয়ানো হল। ওদিকে লালাকেল্লার মঞ্চ থেকে তখনও বাওয়াল দিচ্ছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও। ওই সময়েই গণধর্ষণে অভিযুক্ত নয়, না, মাথায় রাখুন অভিযুক্ত নয়, আদালতে দোষী প্রমাণিত, যাদেরকে যাবজ্জীবন জেলে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি, বলেছিলেন হিনিয়াস ক্রাইম, বলেছিলেন অপরাধীরা মানবতার কলঙ্ক, সেই কলঙ্কিত জন্তুগুলোকে স্বাধীন করে ছেড়ে দেওয়া হল জেল থেকে, যাকে সরকারি ভাষায় বলা হয়, এদের সরকারি মাফি দেওয়া হয়েছে, এদের সরকারের তরফে ক্ষমা করা হয়েছে।

কী করেছিল এই জন্তুর দল? ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০২, গোধরায় ট্রেনের কামরায় আগুন লাগানো হল{ ৫৯ জন করসেবক আগুনে পুড়ে হয় ঘটনাস্থলে৷ না হলে হাসপাতালে মারা গেলেন। তাঁদের দেহ পরদিন সকালে হাসপাতালের সামনে রাখা হল, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। ভয় পেলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু পরিবার৷ পাঁচমাসের গর্ভবতী বিলকিস বানো তার সাড়ে তিন বছরের মেয়ে আর পরিবারের অন্য ১৫ জন সদস্য তাদের গ্রাম, রাধিকাপুর, গোধরা ছেড়ে পালালেন পাশের জেলা ছাপরভাদে। ৩ মার্চ, মাথায় রাখুন গোধরায় ট্রেনে আগুন লাগানোর পরে গোধরা সমেত সারা গুজরাতে দাঙ্গা শুরু হয়েছে, যা মোদিজীর ভাষায় রিঅ্যাকশন, ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া। সেই ২৭ ফেব্রুয়ারির চার দিনের মাথায় ২৫/৩০ জন মানুষ, তাদের হাতে অস্ত্র, তারা ঝাঁপিয়ে পড়লো এই আশ্রয়হীন অসহায় পরিবারের ওপরে। মহিলাদের ধর্ষণ করল, তার মধ্যে ছিল পাঁচমাসের গর্ভবতী বিলকিস বানো, তাঁর মা এবং আরও তিনজন মহিলা।

এখানেই শেষ? না, কেবল ধর্ষণ নয়, ওই ধর্ষণের পরে তাদের পরিবারের বিলকিস, তিন বছরের এক শিশু, একজন পুরুষ বেঁচে ছিল৷ ৮ জনের মৃতদেহ ওখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল৷ ৬ জনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। জ্ঞান ফেরার পরে উলঙ্গ বিলিকিস বানোকে এক আদিবাসী মহিলা একটা কাপড় দেয়, সেটা গায়ে জড়িয়ে সে লিমখেডা পুলিশ স্টেশনে হাজির হয়, তারা অভিযোগ দায়ের করে না। বিলকিস গোধরা রিলিফ ক্যাম্পে যায়, সেখান থেকে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং থানায় অভিযোগও দায়ের করানো হয়। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন আর সুপ্রিম কোর্ট বিলকিসের অভিযোগ নেয়, সিবিআইকে তদন্ত করতে বলা হয়৷ ২০০৪ এ কোর্টে শুনানি শুরু হয়, সে বছরেই মনমোহন সিংহের সরকার এসেছে। ২০০৮ এ আদালত রায় দেয়, তাতে বলা হয়, যশবন্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই আর নরেশ কুমার মোর্ধিয়া বিলকিস বানোকে ধর্ষণ করেছে, শৈলেশ ভাট বিলকিসের সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে আছাড় মেরে খুন করেছে, বাকিরা অন্যদের ধর্ষণ করেছে বা মেরেছে। কিন্তু হত্যার মামলায় যথেষ্ট প্রমাণ না থাকার ফলে গ্যাং রেপ, গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এই ১২ জন, যার মধ্যে নরেশ কুমার মোর্ধিয়া জেলেই অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

উচ্চ আদালতের এই রায়ের পর আসামীরা সুপ্রিম কোর্টে যায়, সেখানেও এই একই রায় বহাল থাকে। এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদির সরকার এসেছে, আসামীদের তরফে রাধেশ্যাম শাহ ওরফে লালা উকিল রেমিশন, মানে শাস্তি কমানোর আপিল করতে থাকেন। গুজরাত হাইকোর্ট জানায় আমরা শাস্তি দিইনি, দিয়েছে বম্বে হাইকোর্ট৷ আমরা শাস্তি কম বা মুকুব করতে পারি না। আসামীরা সুপ্রিম কোর্টে যায়, সেখানে বলা হয় এই মামলা আমেদাবাদ হাইকোর্টেই চলতে পারে। শাস্তি কম করার আবেদন আবার নতুন করে জমা পড়ে। আসামীদের কাছে এবার সমস্যা হল ২০১৪ তে আইনের কিছু পরিবর্তন। ২০১৪ তে শাস্তি মুকুব বা কম করার আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়েছিল। বলা হয়েছিল গণধর্ষণের কোনও অপরাধী এই শাস্তি মুকুবের আবেদন করতে পারবে না। কেন হয়েছিল এই আইন? মনে করিয়ে দিই, ২০১৩ নির্ভয়ার ধর্ষণ নিয়ে সারা দেশ উত্তাল। উমা ভারতী, বাবা রামদেব, সুষমা স্বরাজ, স্মৃতি ইরানি, অরুণ জেটলির দিল্লির রামলীলা ময়দানে ধরণা, সারা দেশ জুড়ে আন্দোলন, সরকার বাধ্য হয়েছিল এই সংশোধনী আনতে। পাশবিক গণধর্ষণে অভিযুক্তদের সারাজীবন জেলেই থাকতে হবে। সেদিন আজকের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কংগ্রেসী রাজে মহিলারা সুরক্ষিত নয়, আমরা সরকার তৈরি করলে, ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রত্যেক অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। কী হল? স্বাধীনতা দিবসে গণসে সমস্যা উঠতেইবলা হল, ঘটনা তো ঘটেছে ২০০২ এ, আইন সংশোধন হয়েছে ২০১৪ তে, অতএব তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক। ধর্ষণে অভিযুক্ত ১১ জন অপরাধীদের জেল থেকে কেবল ছাড়া হল, তাই নয়, স্থানীয় বিজেপি নেতারা তাদের মালা পরালেন, মিষ্টি খাওয়ালেন। ব্যক্তি মানুষ কাকে সমর্থন করল, কেন করল? এসবের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা দেশ, তার সরকার কী চায়? কাদের পাশে আছে? কাদের সমর্থন করে? একটা সরকার যারা প্রকাশ্যেই ধর্ষকদের পাশে দাঁড়ায়, গণধর্ষণে অভিযুক্তদের যাবজ্জীবন  কারাবাসের শাস্তিকে কমিয়ে তাদের জেল থেকে ছেড়ে দেয়,তারা নীতি নৈতিকতা নিয়ে একটা কথা বলার অধিকারী?

এই প্রথম এক জননেতা, যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, যিনি নিজের ইলেকটোরাল এফিডেবিটে নিজের স্ত্রীর নামটা পর্যন্ত লেখেননি, বহু পরে সাংবাদিকরা তাঁর স্ত্রী নাম ধাম ছাপিয়ে দেওয়ার পরে মোদিজী তাঁর স্ত্রীর নাম লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই সেই নেতা, সেই নেতার সরকারের কাছ থেকে কীই বা আশা করা যায়? কিন্তু সেই মেয়েটি, চোখের সামনে নিজের মাকে ধর্ষিতা হতে দেখেছে, পরিবারের অন্য দুজনকে ধর্ষিতা হতে দেখেছে, পাঁচ মাসের সন্তান পেটে নিয়ে নিজে ধর্ষিতা হয়েছে, তাঁর কেমন লাগছে? তিনি কি মনে করছেন? তিই এই মাতৃভূমির কন্যা নন? এই দেশের নাগরিক নন? এটি বাঁচাও, বেটি পড়াও কি তাহলে এক বিশুদ্ধ তামাশা? কেবল ধর্ষণ? চোখের সামনে খুন করা হয়েছে তাঁর পরিবারের আরও ৮ জন কে, এই নারকীয় ঘটনা ঘটার সময় রক্তমাখা এক উলঙ্গ নারী দেখেছিল তাঁর আত্মজাকে আছাড় মেরে খুন করা হল। তারপরও সে থানায় গিয়েছে, অভিযোগ দায়ের করেছে, বিচারক রায় দেবার পরে বলেছিলেন, বিলকিস বানোর অদম্য সাহসের কারণেই এই ঘৃণ্য অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন আইনের রক্ষক, একজন হেড কন্সটেবল ও ছিল। কোনওভাবেই এই অপরাধীরা শাস্তি পেতনা যদি এই মোদি সরকার ক্ষমতায় থাকত, সবার চোখের সামনে গাড়ির চাকায় কৃষক পিষে মেরে ফেলার পর অভিযুক্ত আজ জেলের বাইরে, ধর্ষিতার লাশ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মধ্যরাতে পুলিশি পাহারায়।

আজ ধর্ষিতা হলে বিলকিস বানো বিচার পেতেন? অসম্ভব। অপরাধের তালিকায় মহিলাদের ওপর অত্যাচার বেড়েই চলেছে আর তার শীর্ষে নাকি এক সন্ন্যাসী পরিচালিত উত্তরপ্রদেশের সরকার। মহিলাদের ওপর অত্যাচার, অপরাধ বাড়ছে সরকার বিকাশের কথা বলছে। আসলে এই মনুবাদী আরএসএস – বিজেপি মনেই করে প্রত্যেক নারী হল শুদ্র, তাদের জন্ম হয়েছে পুরুষকে সেবা করার জন্য, রান্না করার জন্য, বাচ্চা পয়দা করার জন্য। তার উলটো কিছু হলেই তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে। বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী হয়েছিলেন, বিয়েই করেননি, বুদ্ধদেব সন্ন্যাসী হয়েছিলেন, স্ত্রীকে ছেড়ে, সংসার ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, আমাদের নেতা বিয়ে করেছেন, সংসার ছাড়েননি, লাখ টাকার পেন রাখেন বুক পকেটে, বিলিতি রোদ চশমা পরেন, দিনে তিনবার পোশাক পাল্টান, কিন্তু স্ত্রীকে মর্যাদা দেবার কথাও ভাবেননি৷ এটাই মনুবাদীদের দর্শন, এটাই তাদের চেহারা। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, তখন রামমন্দির, ৩৭০ ধারা, তালাক নিয়ে কোনও কথাই বলেনি, এখন পেয়েছে, তারা মসজিদ ভেঙে রামমন্দির তৈরি করেছে, জোর করে কোনও আলোচনা ছাড়াই ৩৭০ ধারা তুলেছে, তালাক আইন এনেছে, তারা আরও কিছুদিন থাকলে সংবিধানের বদলে মনুবাদকেই সংবিধান বলেই চালাতে শুরু করবে, কারণ সেটাই তাদের আদর্শ, সেটাই তাদের লক্ষ্য। এক শুদ্র নারী কে ধর্ষণের অধিকার তো দেওয়াই আছে মনুস্মৃতিতে, অতএব জেলে পাঠানোর প্রশ্নই বা আসছে কেন? কিন্তু এখনও দেশে এক সংবিধান আছে, যা ন্যায় বিচারের কথা বলে, সি পি আই এম এর পলিটব্যুরোর সদস্য সুভাষিণী আলি, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মিত্র গেছেন আদালতে, আমরা তাঁদের পাশে আছি, এ লড়াই দুজন মহিলার নয়, কেবল বিলকিস বানোর নয়, এ লড়াই ভারতবর্ষের সংবিধানকে বাঁচানোর লড়াই, দেশের অর্ধেক আকাশের স্বাধীনতার লড়াই, আমরা আছি, আপনারাও সঙ্গে থাকুন।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

বজরংবলীর আশীর্বাদ পাবেন ৫ রাশির জাতক
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে সতর্কবার্তা নির্বাচন কমিশনের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
কখন শচীনের দ্বারস্থ হন কোহলি?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
চোটে জর্জরিত ম্যান ইউয়ের আজ কঠিন লড়াই
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মমতার দিদিগিরি বরদাস্ত করব না, কলকাতায় ফিরেই হুঙ্কার রাজ্যপালের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুদীপের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ বিজেপির
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মঙ্গলবার ৪ কেন্দ্রে ভোট, সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সন্দেশখালি ভাইরাল ভিডিওতে কন্ঠস্বর গঙ্গাধর-জবারানির, দাবি শান্তি দলুইয়ের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
জিতলে গম্ভীরের কৃতিত্ব হারলে দায় শ্রেয়সের? প্রশ্ন কিংবদন্তির  
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার বিজেপি নেতা?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
আগামিকাল মুর্শিদাবাদে সেলিমের পরীক্ষা, ১৩ মে বহরমপুরে অধীরের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
শাহের মুখে সন্দেশখালি আছে, নেই ভিডিও নিয়ে কোনও কথা
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
বেহাল সড়ক, প্রশাসনকে জানিয়েও হয়নি লাভ
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team