কলকাতা: কোন অধিকারে আয়কর দফতর কলকাতা টিভির অফিসে ঢুকে সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নিল, পিসিআর-এ ঢুকে সংবাদ সম্প্রচারে বাধা দিল, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে-সমাজের নানা স্তরের মানুষজন। এ বার পথে নেমে প্রতিবাদ জানাল সাধারণ মানুষজনও। আর একটু অন্য ভাবে বললে, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। যাঁরা অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ যাঁদের রক্তে রক্তে-ধমনীতে।
কোনও সংস্থার পতাকা তলে নয়। তাঁরা ‘বেঙ্গল ইউথ কলকাতা টিভি’। সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধে কেন্দ্রীয় অপচেষ্টার বিরুদ্ধে এক যোগে প্রতিবাদ জানান বহু মানুষ। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কড়া নিন্দা করেন। বহু সাধারণ মানুষের এই মঞ্চ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, আয়কর দফতর তল্লাশি চালাতেই পারে, নথিপত্র খুঁজতেই পারে। কিন্তু তাই বলে সংবাদমাধ্যমের অফিসে তারা তাণ্ডব চালাবে কেন। কেন সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়া হবে, সংবাদ সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে?
১৬ অগাস্ট, মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে টানা ৮০ ঘণ্টা দিল্লি থেকে আসা আয়কর দফতরের অফিসাররা কলকাতা টিভির দফতর, সম্পাদক কৌস্তুভ রায়ের বাড়ি, অন্য বেশ কয়েকটি অফিসে তল্লাশির নামে কার্যত তাণ্ডব চালান। কলকাতা টিভির একাধিক পদস্থ কর্তার বাড়িতেও তল্লাশি চলে। প্রধান সঞ্চালিকা সুচন্দ্রিমাকে আটকে রাখা হয়। একাধিক সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্তা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক-সহ সর্বস্তরের কর্মচারীর ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কলকাতা টিভির সম্পাদকের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা, মাকেও আয়কর দফতর ছাড় দেয়নি। বাড়ি লন্ডভন্ড করা হয়। ল্যান্ড লাইনের ফোন কেটে দেওয়া হয়।
আয়কর তল্লাশির নামে কলকাতা টিভির দফতরে তাণ্ডবের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্টজন। প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু বলেন, যে ভাবে আয়কর দফতর তল্লাশির নামে হেনস্তা করেছে, তা তাদের এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে না। গোয়েন্দা দফতর এসব করলে তবু বোঝা যায়। কিন্তু আয়কর দফতরের তো সেই এক্তিয়ারই নেই। আমি শুনেছি, ওরা কলকাতা টিভির প্রোডাকশন কন্ট্রোল রুমে ঢুকে সংবাদ সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করেছে। সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার কোনও অধিকারই নেই আয়কর দফতরের। যা হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা করছি।
ঘটনার নিন্দা করেন তৃণমূলের মুখপাত্র তাপস রায়। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করেছে আয়কর দফতর। যেভাবে কলকাতা টিভির দফতরে তল্লাশির নামে সকলকে হেনস্তা করেছে, তার নিন্দা করার ভাষা নেই। নিন্দা করেছেন অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, স্বপ্নময় চক্রবর্তী প্রমুখ। বিজেপির রাজ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা কখনওই কাম্য নয়। তবে এটি একটি আইনি বিষয়। কেন, কী কারণে আয়কর দফতর গিয়েছিল, তা তারাই বলতে পারবে।