বাঁকুড়া: এখনও জ্বলজ্বল করছে শুক্রবার সন্ধের ট্রেন দুর্ঘটনা। একের পর এক মৃত্যুতে সংখ্য়া দাঁড়িয়েছে ২৭৫। জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একাধিক। হাসপাতালের বেডে শুয়ে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বাঁকুড়ার স্মৃতি ও সন্টু। একের পর এক রক্তাক্ত মৃতদেহ। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরানোর দৃশ্য, ভয়ঙ্কর আর্তনাদ, দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের কোচ। এতকিছুর মধ্যেই তাঁরা যে এখনও বেঁচে আছেন, তাঁদের কাছে ঈশ্বরের দান বলে মনে করছেন স্মৃতি ও সসন্টু। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বহ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন আবার অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এখনও। ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্মৃতি, সন্টুর মতো অনেকেই।
শুক্রবার করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটানায় জখম হয়ে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩ জন। জেলার মহকুমা ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬ জন। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ফিমেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি ছাতনার স্মৃতি মণ্ডল। তিনি নার্সিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। বাড়িতে ছুটি কাটিয়ে শুক্রবার খড়্গপুরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে বিশাখাপত্তনমের নার্সিং কলেজে ফিরছিলেন। দুর্ঘটনায় জখম হয়ে সেখান থেকে কোনওরকমে বাড়ি ফিরে সে এখন চিকিৎসাধীন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। চোখে-মুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। কোনওভাবেই ভুলতে পারছেন না সেই রাতের কথা। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর কয়েক সেকেন্ড কিছুই বুঝতে পারিনি। চারিদিক অন্ধকার। বগির সকলেই এদিক-ওদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল। দুর্ঘটনায় তাঁর চোখে ও পায়ে আঘাত লাগে। তারপর এক সহযাত্রী তাঁকে সেখান থেকে বের করতে সাহায্য করেন বলে জানান স্মৃতি।
আরও পড়ুন: Coromandel Express| ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের কফিনবন্দি দেহ ফিরল বাদুড়িয়ায়
এদিকে ওড়িশায় একটি বেসরকারী সংস্থার সার্ভের কাজ সেরে হামসফর এক্সপ্রেসে বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়া গোসাইডিহি গ্রামে নিজের বাড়ি ফিরছিল বছর ২৬-এর সন্টু মণ্ডল। করমণ্ডলের কোচ ধাক্কায় হামসফরের এক্সপ্রেসের বগির দরজায় ছিটকে পড়েন সন্টু। এর জেরে হাতে আঘাত পান তিনি। তিনিও এখন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের মেল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সেই সন্ধ্যার ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য এখনও বুলতে পারছেন সন্টু।
সোমবার আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান কেন্দ্রের শিক্ষাদফতরের প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। এদিন তিনি আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও করেন তিনি। এদিন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রশংসা করে আহতদের সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করেই ছুটি দেওয়ার পরামর্শও দেন।