কলকাতা: শ্রী কৃষ্ণ (Sri Krishna) জন্মাষ্টমী ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয়। অষ্টমী তিথি এবং রোহিণী নক্ষত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে মধ্যরাতে কৃষ্ণের জন্মোৎসব উদযাপনের প্রথা রয়েছে। তবে, এ বছর জন্মাষ্টমীর উৎসব ২ দিন ধরে পালিত হচ্ছে। দেশের শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরগুলিতে আজ ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে জন্মাষ্টমী পালিত হচ্ছে। জন্মাষ্টমী উৎসবের কথা বললে প্রথমেই মথুরা বা বৃন্দাবনের (Vrindavan) ছবি মনে ভেসে ওঠে। কারণ শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেমলীলার জন্য বিখ্যাত বৃন্দাবন। আর এই বৃন্দাবনের প্রসিদ্ধ মন্দির হচ্ছে নিধিবন মন্দির (Nidhivan Temple)। যা ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য। কথিত আছে, এই মন্দিরে প্রতিরাতে আসেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, রাধারাণী ও গোপিনীরা।
মহাভারত অনুসারে, এখানেই কেটেছিল শ্রীকৃষ্ণের ছেলেবেলা। এটি বাঁকে বিহারী মন্দির, মূরলীধর মন্দির, লীলাধর মন্দির নামেও পরিচিত। বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই নিধিবন মন্দির। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পর্যটকদের আকর্ষিত করে সমান ভাবে। নিধি কথার অর্থ হল সম্পদ এবং চারপাশ জঙ্গলে ঘেরা এই জায়গা। এই জঙ্গলের সব গাছের শাখাই নিম্নমুখী ও গাছের শাখা-প্রশাখাগুলি একে অন্যের সঙ্গে রয়েছে জড়াজড়ি করে। মানুষের বিশ্বাস, এই গাছগুলি আসলে বাঁকে বিহারীর লীলাখেলার সঙ্গী গোপীনির দল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গাছের শাখা-প্রশাখা নিম্নমুখী বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন:Ajay Devgn | Supernatural Thriller | অজয়ের ভূতুড়ে থ্রিলার
উপবনের মধ্যে রয়েছে বাঁকেবিহারী মন্দির। এই মন্দিরে রয়েছে কষ্টিপাথরে তৈরি কৃষ্ণের মূর্তি। ভক্তদের বিশ্বাস, সেই কৃষ্ণই নাকি প্রতি রাতে পা রাখেন এই নিধিবনে। আসনে শ্রীরাধিকাও। প্রতি রাতে গোপিনীদের সঙ্গে নিধিবনে মহারাসলীলায় মাতেন রাধা-গোবিন্দ। নিধিবনে গাছগুলির মাটির দিকে অবনত ডালপালা দেখলে প্রণামের ভঙ্গি মনে আসে। ভক্তদের মতে গাছগুলি আসলে ছদ্মবেশী গোপিনী। প্রতি রাতের রাসলীলায় নাকি যোগ দেন এই গোপিনীরাও। এ ছাড়াও নিধিবনে রংমহল রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, রাসলীলার শেষে এখানেই রাধার সঙ্গে বিশ্রাম নেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাই রংমহলে চন্দনকাঠের পালঙ্ক রয়েছে। প্রতিদিন মন্দির বন্ধের আগে ভোগ, মুখশুদ্ধি, দাঁতনকাঠি আর রাধার জন্য প্রসাধনসামগ্রী গুছিয়ে রংমহলে রেখে যান মন্দিরের সেবায়েতরা। শোনা যায়, পরের দিন ভোরে মন্দির খোলার পর সেই সবকিছুকেই নাকি ব্যবহৃত অবস্থায় দেখতে পান তাঁরা। রাধা-কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে সন্ধ্যারতির পর পুরোহিতরা এখানে শাড়ি, মিষ্টি, চুড়ি, পান রেখে যান। সকালে নাকি সেগুলি ছড়ানো-ছেটানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
আট আটটা তালা মেরে বন্ধ করে দেওয়া হয় রংমহল আর বাঁকেবিহারীর মন্দিরের দরজা। সন্ধ্যারতি শেষ হলে ভক্ত, পূজারিদের মন্দিরে থাকার অধিকার নেই। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই তালা পড়ে যায় নিধিবনের মূল ফটকে। সূর্যাস্তের পর শুধু মানুষ কেন মরজগতের কোনও প্রাণীরও এই নিধিবনে প্রবেশাধিকার নেই। দিনের বেলা নিধিবনে ঘুরে বেড়ানো পশু-পাখিরাও অন্ধকার নামলেই এই জঙ্গল ছেড়ে চলে যায় অন্যত্র। বিশ্বাস, রাতের অন্ধকারে আপাত স্বাভাবিক নিধিবনের বুকে জেগে ওঠে দ্বাপর যুগের পৌরাণিক নিধুবন।
কথিত আছে, এই মহারাসলীলা চাক্ষুস করতে চেষ্টা করেছিলেন কয়েকজন অতি-উৎসাহী। লুকিয়ে চুরিয়ে গিয়েছিলেন মন্দিরে। সকালবেলায় হয় তাঁদের মৃত, নয়তো পাগল অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। কেউ আবার বিকলাঙ্গ, রোগগ্রস্ত হয়ে গিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সন্ধের পর বন্ধ মন্দির থেকে ভেসে আসা ঘুঙুরের শব্দ অনেকেই শুনতে পেয়েছেন। কখনও কখনও ভেসে আসে বাঁশির সুরও। বহুবার এই মন্দিরের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করা হয়েছে আজও রহস্যেই নিমজ্জিত বৃন্দাবনের এই মন্দির। এইসব অজানা কারণেই আজও তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণের জায়গা এই নিধিবন।