ওয়েলিংটন: নিউজিল্যান্ডের সমুদ্র সৈকতে ডজন খানেক তিমির দেহ (Whales Died in New Zealand) মিলল ৷ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ দ্বীপের কাছে ৩৪টি তিমির দেহের সন্ধান পাওয়া যায় ৷ ভোর যত হতে থাকে ততই ভেসে আসতে থাকে আরও বহু দেহ ৷ সকালের জোয়ারের ফলে এই তিমিগুলির দেহ ভেসে আসে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ কীভাবে সমুদ্র সৈকতে এত বিপুল পরিমাণ তিমির দেহ মিলল তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে ৷ এর আগেও ২০১৭ সালে ঠিক এই জায়গায় ৭০০-র বেশি তিমি আটকে গিয়েছিল ৷ তিমি উদ্ধারকারী সংস্থার মুখপাত্র উইন্টার বার্গ সেসময় জানিয়েছিলেন, প্রায় ১০০-র কাছাকাছি তিমির মৃত্যু হয়েছিল সেবার ৷ কিন্তু কেন বারবার এই সৈকতে এত তিমির মৃত্যু হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ৷
সমুদ্র বিজ্ঞানীদের কথায়, ‘ঝাঁক বেঁধে তিমিদের সমুদ্র সৈকতে ভেসে আসা নতুন নয় ৷ ১৯৭৩ সালে তুতিকোরিন সৈকতে এভাবেই মৃত্যু হয়েছিল ১৪৭টি তিমির ৷ ২০১২, ২০১৫, ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডে ঠিক এই ঘটনা ঘটে ৷’ বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, একবার পাড়ে চলে এলে তিমিরা আর ফিরতে পারে না ৷ একে ভারী চেহারা, তার উপর গোটা দেহে চর্বির স্তর ৷ আচমকা জলের অভাবে দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে যায় ৷ অসুস্থ হয়ে পড়ে তারা ৷ তার উপর সমুদ্রের গভীরে জলস্তরের যে চাপ পাড়ে এসে তা চলে যাওয়ায় স্নায়ুতন্ত্রও জানান দেয় ৷ মৃত্যু হয় প্রাণীটির ৷ এ অবস্থায় কিছু প্রাণীকে ফেরত পাঠানো গেলেও মৃত্যু হয় অধিকাংশের ৷
কিছু প্রজাতির তিমি সাধারণত দল বেঁধে থাকে ৷ এরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে শব্দ আদান-প্রদান করে ৷ দলে কেউ বিপদে পড়লে সঙ্কেত পেয়ে বাকিরা সাহায্য করতে আসে ৷ স্বাভাবিকভাবেই বিপদের মুখে পড়ে তারাও ৷ অনেক ক্ষেত্রে আবার দলনেতার মৃত্যুতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে তিমির দল ৷ জেনে বুঝে মৃত্যুকেই বেছে নেয় তারা৷
আরও পড়ুন: Rajnath Singh: মোদির নেতৃত্বে সীমান্ত সুরক্ষিত, তাই দোলের দিন দেশবাসী নিরাপদে, মন্তব্য রাজনাথের
গভীর সমুদ্রের বাসিন্দারা হঠাৎ কেন সৈকতে এসে ভিড় করছে এ প্রসঙ্গে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি কারণের উল্লেখ করেছেন ৷ এক, দল বেঁধে পরিবার নিয়ে থাকে যে সব তিমি, পাড়ে এসে গণমৃত্যুর সম্ভাবনা তাদেরই বেশি ৷ কারণ, কোনও একজন ভুল করে পাড়ে চলে এলে বাকিরা সেই পথ অনুসরণ করে ৷ দুই, অনেক সময় খাদ্যের সন্ধানে সমুদ্রের তীরে চলে আসে এরা ৷ কখনও আবার খুনি-তিমির ভয়ে পালাতে গিয়ে অজান্তেই বেছে নেয় মৃত্যু পথ ৷ তিন, নৌ-যানের গতিবিধির উপর নজর রাখতে তিমির মতো শোনার (সাউন্ড নেভিগেশন অ্যান্ড রেঞ্জিং) প্রযুক্তি ব্যবহার করে নৌ-বাহিনী ৷ এই শব্দতরঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিমিদের মস্তিস্কের কোষ ৷ চার, সমুদ্রের তলা দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল বার করার সময় বিস্ফোরণ ঘটানো হয় ৷ এর ফলেও তিমির স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৷
কোনওভাবে সামুদ্রিক তল ও উপরিভাগের স্তরের মধ্যে বদল ঘটলে জলের কম্পন মাত্রা বদলে যায় ৷ এতে তিমিদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ৷ ভুলপথে কেউ কেউ পাড়ের দিকে চলে আসে ৷ আবার তিমিদের খাদ্য ফাইটোপ্ল্যান্টন বিষাক্ত হলে তা খেয়েও মৃত্যু ঘটে অনেক তিমির ৷ নিউজিল্যান্ডের সঠিক কী কারণ ঘটেছে তা এখনই স্পষ্ট হয়নি ৷ তবে মাঝে মাঝেই এমন ঘটনা ঘটায় বিষয়টির তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷