হাওড়া: আনিস খান হত্যাকাণ্ডে (Anish Khan Murder) এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা। পুলিসের পোশাক পরে আনিসের বাড়িতে কারা ঢুকেছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি পুলিস। রবিবার সকালে তদন্তসূত্রে আমতায় (Howrah Murder)আনিসের বাড়িতে যান পুলিস আধিকারিকরা। সেখানে পুলিসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। শুক্রবার রাতের ওই ঘটনায় কারা জড়িত, এখনও কোনও সূত্র উঠে না আসায় সিবিআই (CBI) তদন্তের দাবি করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। পুলিসের গাফিলতির দাবিও করছে পরিবার।
ছাত্রনেতা আনিস খানের হত্যাকারীদের (Anish Khan murder case) শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। শনিবার সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে আনিসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন। রবিবার আনিসের হত্যার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই। আনিসের বাড়িতে যাবে রাজ্য এসএফআই-র প্রতিনিধি দল। থাকবেন সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধর, রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান, রাজ্য সহ সম্পাদক শুভজিৎ সরকার। সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন হাওড়া জেলা এসএফআই-র সভাপতি শিল্পা মন্ডল, এবং সম্পাদক সৌরভ মন্ডল। সেখানে মিছিল সংগঠিত হবে বলে সূত্রের খবর।
শনিবার সন্ধ্যায় আনিস হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল কলকাতা। নিহত ছাত্র নেতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন৷ তাঁর খুনের প্রতিবাদে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টের কাছে মোমবাতি মিছিল করেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া৷ সেই মোমবাতি মিছিল থেকেই পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা৷ তাদের একটাই দাবি, খুনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে৷
আরও পড়ুন: Anis Khan: আনিস খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত হবে, আদালতে তথ্য পেশ করবে পুলিস, দাবি ফিরহাদের
সোশ্যাল মিডিয়াতেও (FB Post) আনিস খুনের বিচার চেয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। #Justice For Anis Khan হ্যাশট্যাগ দিয়ে (#we want justice) অবিলম্বে দোষীদের এবং কড়া শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে। রবিবার কলকাতার মেয়র এবং পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব নিরপেক্ষ তদন্ত করে আদালতে তথ্য পেশ করবে পুলিস৷ দোষীরা যথাযত শাস্তি পাবে।’ শনিবারের মতো এদিনও ফিরহাদ দাবি করেন, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দ্বারা আনিসকে খুন করা হতে পারে৷ তবে, গোটা বিষয়টা তদন্ত সাপেক্ষ। কারণ, যে ভাবে পুলিস পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে আনিসকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন৷ উত্তরপ্রদেশ-বিহারের মতো রাজ্যগুলিতে এভাবে মানুষকে মারা হয়৷ বাংলার সংস্কৃতিতে মানুষ খুন করা হয় না বলেও মনে করেন কলকাতার মেয়র৷
আনিস হত্যাকাণ্ডে আগেই সরব হয়েছেন ভাঙড়ের আইএসএফ (ISF) বিধায়ক নওয়াজ সিদ্দিকি। শনিবার আমতার সারদা দক্ষিণ খান পাড়ায় আনিসের বাড়িতে যান। তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে নওয়াজ সাংবাদিকদের জানান, ‘আনিস তাঁদের সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ছাত্র সংগঠন গড়ার ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন।’ তিনিও দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি চাই না, এই ঘটনা নিয়ে কোনও রাজনীতি হোক। আনিস আইএসএফ করতেন বলে আমি চারজন তৃণমূল সমর্থককে জড়িয়ে দেব, এটা কোনও কাজের কথা নয়। ওই রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করিনা। আসল অপরাধীরা ধরা পড়ুক, এটাই চাই।’
আরও পড়ুন: Anis Khan Murder: আনিস খাঁন ‘হত্যা’র পিছনে কাদের হাত
আনিস খান প্রতিবাদী ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত ছিলেন। ছিলেন বেশ ডাকাবুকোও। রাজ্যের যেখানেই অন্যায় অবিচারের অভিযোগ উঠত, সেখানেই ছুটে যেতেন আনিস। এই প্রতিবাদই ছিল তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত ১টা নাগাদ চারজন যুবক আনিসের নাম করে দরজায় ধাক্কা দেয়। তারা পুলিসের লোক বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। পুলিস বলেই আনিসের বাবা সালাম খান দরজা খুলে দেন। তিনি পুলিসের পোশাক পরা একজনকে প্রথমে দেখতে পান। তার হাতে বন্দুক ছিল। সে আনিস কোথায় জানতে চায়। সালাম বলেন, আনিস বাড়িতে নেই। এরই মধ্যে আরও তিনজন বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সালাম জানান, ওই তিনজনের পরনে সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাক ছিল। পুলিসের পোশাক পরা যুবক তাঁকে ঘরে আটকে রাখে। বাকি তিনজন তিনতলার ছাদে উঠে যায়। রাত ৯টা নাগাদ একটি জলসা থেকে ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে আনিস ছাদেই পায়চারি করছিলেন। আনিসের বাবা জানান, কিছুক্ষণ পর তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পান। তখনও সালাম কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। অল্প সময় পরে ওই তিনজন নীচে এসে পুলিসের পোশাক পরা যুবকটিকে বলে, স্যর কাজ হাসিল হয়ে গিয়েছে। এরপরই দ্রুত সকলে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশীরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় আনিস মাটিতে পড়ে আছেন।