৮৬ বছরের বৃদ্ধা মা। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। নিজের বাড়ির পাশের নার্সিং হোমে তাঁর মাকে ভর্তি করে এসেছেন। তিনি এক ছেলে। বাকি তিন বোন। কলকাতায় গতকাল, শুক্রবার – বন্ধু ডাক্তার যা শোনানোর শুনিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। মা এখন ভেন্টিলেশনে। আর তাঁর একমাত্র ছেলে সুজন মুখোপাধ্যায়, এখন এই মুহুর্তে দায়িত্ব সামলাতে রয়েছেন কটকের বরাবাটি স্টেডিয়ামে। রবিবার রাতে সেখানে ভারত – দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টি টোয়েন্টি ম্যাচ।
সিএবি’র সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া অনুরোধটা করেছিলেন সুজনকে। কটক ৭৬ লাখ টাকার পিচ কভার এনেছে ইংল্যান্ড থেকে। সেটাও ইডেনের দেখা দেখি। কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। সেটার জন্য সুজনের ম্যাচের ৩ দিন আগে বরবাটিতে পৌঁছে যাওয়া।
একে তো মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা জেনে মনের অবস্থা বেজায় টালমাটাল। কিন্তু শুক্রবার মাঠে সময় কাটিয়ে মন আরও ভেঙে পড়েছে এই দুঁদে কিউরেটরের। শনিবার যখন ফোনে কথা হচ্ছিল তখন তিনি হোটেলের রুমে। ততক্ষনে কলকাতায় ৩ টি মাঠে পরের ম্যাচের প্রস্তুতি কি হবে, ফোনেই বাকিদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। কথা শুরু হয়েই শুনলাম এক রাশ হতাশা আর যন্ত্রণার কথা। রাখঢাক না বলেই ফেললেন,” আরে ইডেনে সিএবি’র কমিটি মেম্বাররা মাঠের আউট ফিল্ডে ঢুকতেই পারে না। আর এখানে! পুরো ফ্যামিলি পিকনিক চলছে। সকলে এখানে-দাদা! কেউ কারোর কথা শোনে না। এত দামী কভার পাতা, তারই উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে হাজার খানেক লোক! ফ্যামিলি নিয়ে সেলফি তুলছে। আবার শুয়ে পড়ছে! ভাবতেই পারছি না।” আর জানা গেল, মাঠেই নাকি যত্রতত্র থুতু ফেলছে সকলে।বাদ যায়নি গুটকার পিক্ও!
গলার স্বরে একরাশ বিরক্তি। যে কাজটি সামলাতে গেছেন সেটার কি হল? সুজন বলেছেন,” এত দামী গ্রাউন্ড কভার সেটা কিভাবে পাতা হবে, কিভাবে গুটিয়ে রাখা দরকার।কিছুই এরা জানে না। তার উপর দুই-আড়াই কেজির ওয়েট চাপতে হয় অনেকগুলো। সেগুলো এখনও বলে বলে পাইনি। আজ নাকি পাবো-বলেছেন কর্তারা। এগুলো দিয়ে বারবার এটা চাপানো আর তোলার ড্রিল প্র্যাকটিস করতে হয় গ্রাউন্ড স্টাফদের নিয়ে। তিনটি ড্রিল করিয়েছি, তাও ওয়েট ছাড়া।”
বৃষ্টি এলে? সুজনের ভরসা ভগবান। দুটি কারণে তাঁকে ডাকছেন।এক, মায়ের জন্য। আর দুই, ঠিকমতো এই ম্যাচটি যাতে শেষ হয়ে যায়। শনিবার বেলা একটায় দক্ষিণ আফ্রিকা নেট প্র্যাকটিস। রাহুল-পন্থরা বিকেল চারটায়।
India-SA T20 at #Barabati : Here is the Menu chart for players #Odisha #INDvsSA #BarabatiMatch #Cuttack https://t.co/wusck8XKmu
— Kalinga TV (@Kalingatv) June 10, 2022
প্রাক্তন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার এই সুজন। এখন তিনি দক্ষ পিচ কিউরেটর। নিজের হাতের তালুর রেখা গুলোর মতন চিনতে পারেন মাঠের রকমফের। আর ২২ গজ।
#INDvsSA : #India, #SouthAfrica Teams Arrive In #Bhubaneswar For #Barabati T20I#BarabatiStadium #BarabatiMatch #Cuttack https://t.co/wTKrp39nw4
— Pragativadi (@PragativadiNews) June 10, 2022
প্রায় ৬-৭ মাস এই উইকেটে ম্যাচ হয়নি। আউটফিল্ডে বালির ভাগ বেশি থাকায় তা স্লো হবে। উঁচু শট মাঠে পড়লে গতি হারাবে। আর উইকেট? সুজন উইকেট নিয়ে কিছু করছেন না। ওখানকার চিফ কিউরেটর ( লখনউ থেকে এসেছেন) দেখাশুনা করছেন। আর আছেন বোর্ডের হয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি আশীষ ভৌমিক।
কাছ থেকে দেখে বুঝেছেন, উইকেটের উপর ঘাসের আস্তরণ সব জায়গায় সমান নয়, তাই এই উইকেট হয়তো ‘বিচিত্র’ আচরণ করতে পারে। আগের ম্যাচের মত (দিল্লি) বেশি রানের লড়াই নাও হতে পারে।
তাহলে! ভারত যে ৫ ম্যাচের সিরিজে ০-১ ম্যাচে পিছিয়ে। এই ম্যাচে জয়ে ফিরতেই চায় রাহুলরা। সুজনের পরামর্শ হল, ‘টস জিতলে আগে ফিল্ডিং করে নিক ভারত। উইকেটের চরিত্র বোঝা হয়ে যাবে। ম্যাচ বের করতে সুবিধা হবে’। আর আগে ব্যাটিং করলে? উত্তর হল: ‘স্ট্রোক মেকারদের পাওয়ার প্লে-তে বিগ হিটে না গিয়ে ওভার পাঁচেক খুচরো রানে মন দেওয়া ভাল। উইকেট যেন না চলে যায়।’
#NaveenPatnaik, #SouravGanguly to attend #INDvsSA #T20I match at #Cuttack's #Barabati @Naveen_Odisha @SGanguly99 https://t.co/7nLNwb0EsR
— Prameya English (@PrameyaEnglish) June 10, 2022
নয়া আলোর রোশনাই:
এর আগে রনজি ম্যাচের জন্য বরাবাটি স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সুজন দু’বছর আগে। তখনকার স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলোর ছটা আর এখন নাকি আরো আকর্ষণীয়। এই প্রথমবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে স্টেডিয়ামের এলইডি আলোর ব্যবহার হচ্ছে। দিল্লিতেও এই এলইডি ফ্লাড লাইটেই এবার ম্যাচ খেলে এসেছেন পন্থ – পান্ডিয়ারা। একই কোম্পানির আলো ব্যবহার করা হয়েছে। ইডেনেও ফিলিপস ব্র্যান্ডের এলইডি লাইট লাগানো হবে। এর ফলে বিদ্যুতের খরচা অনেক কমে যাবে, কিন্তু আলো আরও দৃষ্টিনন্দন হবে। কটকের স্টেডিয়ামে নুতন আলো লাগলো কাজ যারা করেছে, তারা কলকাতার সংস্থা। রোশনি ইলেকট্রনিকস। এই সংস্থার কর্ণধার বাঙালি। ডানলপের কাছে কর্পোরেট অফিস। অর্ঘ্য বাবু বলছিলেন সেই অভিজ্ঞতার কথা। “ফিলিপস ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়াই বড় ব্যাপার। আমিও রবিবারের ম্যাচ টিভিতে দেখবো।আমরা খুশি। দারুণ আলো হবে।” তিনি ইডেনের কাজ পাবেন কিনা এখনও জানেন না। তবে ফিলিপস যে এইসব বাতিস্তম্ভের জন্য আদর্শ সেটা জানতে ভুললেন না।
#Fight between #women #for_cricket_match ticket At #Barabati #BarabatiStadium pic.twitter.com/hrIfU7bf4F
— JP Jit Pattnaik , I Am An Artist nd Journo (@jitpattnaik_jp) June 9, 2022
ভারতীয় দলে বাংলার প্রতিনিধি এবার কেউ নেই। কিন্তু মাঠে আছেন সুজন। আর নয়া ধাঁচের আলোর সঙ্গে আছেন অর্ঘ্য।
ছবি: সৌ টুইটার, নিজস্ব চিত্র।