কলকাতা: সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার করেছিল বিজেপি। ভোটে ভরাডুবির পর কার্যত দিশেহারা গেরুয়া শিবির। ভবানীপুর উপনির্বাচন, সামশেরগঞ্জ, জঙ্গিপুরে উপনির্বাচনে পর্যদস্তু হওয়ার পর দলের কাছে মুখরক্ষার লড়াই ছিল ৪ কেন্দ্রের উপনির্বাচন। তাই পদ্ম ফোটাতে মরিয়া গেরুয়া শিবির হাতিয়ার করেছিল মেরুকরণকে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনাকে রীতিমতো সাম্প্রদায়িক রূপ দিয়ে উপনির্বাচনে প্রচার চালিয়েছিল বিজেপি। দলের নেতারা উপনির্বাচনে প্রচারে গিয়ে বারংবার উসকে দিয়েছেন সাম্প্রদায়িক ইস্যু। তবে এই প্রচার যে আদপে হিতে বিপরীত হয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল থেকে তা স্পষ্ট।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ, নদিয়ার শান্তিপুর এবং কোচবিহারের দিনহাটা কেন্দ্রে হারতে হয়েছে বিজেপিকে। বিধানসভা নির্বাচনে ৩৮.১০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। আর চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোট নেমে এসেছে ১৪.৫০ শতাংশে।
আরও পড়ুন: চার কেন্দ্রে ভরাডুবির পর ‘দিশাহীন’ সাংবাদিক সম্মেলন বিজেপির
শান্তিপুর বাদে বাকি তিনটি কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তবে আসল চমকটা রয়েছে অন্য জায়গায়। হিন্দুত্বকে হাতিয়ার করে ক্ষমতা দখলে মরিয়া বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে খোদ হিন্দুরাই। চার কেন্দ্রের ফলাফল পর্যলোচনা করে এই তথ্যই উঠে এসেছে।
বিধানসভা নির্বাচনে দিনহাটায় ৫৭ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামানিক। সেই দিনহাটায় এ বার ১ লক্ষ ৬৪ হার ভোটে জিতেছে তৃণমূল প্রার্থী উদয়ন গুহ। এই কেন্দ্রের মোট ভোটারের ৭০ শতাংশ হিন্দু। তাদের মধ্যে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১১ শতাংশ মানুষ।
নদিয়ার শান্তিপুরে ৮৬ শতাংশ হিন্দু ভোটার রয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার জিতেছিলেন প্রায় ১৬ হাজার ভোটে। এ বার এই কেন্দ্রে তৃণমূল জিতেছে ৬৪ হাজার ভোটে। মাত্র ২৩ শতাংশ হিন্দু ভোটার ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে। খড়দহে ৮৭ শতাংশ হিন্দু ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট দিয়েছেন বিজেপিকে।
আরও পড়ুন: মান্ডি লোকসভা এবং তিনটি বিধানসভা আসনে বিজেপিকে হারিয়ে হিমাচলে চমক দিল কংগ্রেস
গোসাবাতেও খারাপ ফল করেছে বিজেপি। ৯০ শতাংশ হিন্দু ভোটারের মধ্যে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ, এ কথা পরিষ্কার যে, বিজেপির অন্যতম ভরসা হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের বড়সড় ধস নেমেছে। ২০২৪ নির্বাচনে বাংলা থেকে ২৫টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তারা। কিন্তু, এইভাবে রক্তক্ষরণ চললে ৫টি আসন জুটবে তো, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।