কলকাতা টিভির প্রশ্ন ফের এড়িয়ে গেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শিশিরবাবুর সাংসদ পদ খারিজ প্রসঙ্গে শুক্রবার শুভেন্দুকে প্রশ্ন করেছিলেন কলকাতা টিভির সাংবাদিক। এর উত্তরে শুভেন্দু বলেন, ‘শিখিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে’। এর পর সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান বিরোধী দলনেতা।
মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের শুনানিতে শুক্রবার বিধানসভায় গিয়ে স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু। প্রায় ৩ মিনিট কথা হয় দু’জনের। সূত্রের খবর, অধ্যক্ষ শুভেন্দুকে আরও কিছু নথি জমা দেওয়ার কথা বলেন। কোথায় কোথায় সই-সাবুদ করতে হবে সেগুলিও দেখিয়ে দেন। ৩০ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন স্পিকার।
আরও পড়ুন: কলকাতা টিভির প্রশ্নে শুভেন্দুর মেজাজ হারানোর রেকর্ড
স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘বাংলায় দীর্ঘদিন থেকে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করা হচ্ছে না। ২০১১-র পর থেকে ৫০টা দলবদলের ঘটনা ঘটলেও একটি ক্ষেত্রেও এই আইন প্রয়োগ করা হয়নি। এই ব্যবস্থার প্রতি ভরসা নেই আমাদের। আমরা আইনের আশ্রয় নেব।’
এরপরেই কলকাতা টিভির সাংবাদিক শুভেন্দুকে শিশিরবাবুর সাংসদ পদ খারিজ নিয়ে প্রশ্ন করেন। ‘শিখিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে’ বলে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে একাধিক সাংসদ বিজেপিতে যোগদান করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধেও লোকসভার মুখ্য সচেতক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আরও পড়ুন: দেবাঞ্জনের ভুয়ো টিকার একমাস পর ভ্যাকসিন পেল সোনারপুর
কিন্তু তাঁদের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ায় নিয়ে এখনও কোনও শুনানি শুরু হয়নি। লোকসভার সচিবালয় থেকে বৃহস্পতিবার তৃণমূলত্যাগী সাংসদ সুনীল মণ্ডল এবং শিশির অধিকারীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকদিনে দু’বার চিঠি দেওয়ার পরে এই প্রথম লোকসভার সচিবালয় থেকে তাঁদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যদিও শুনানি প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি এই দুই সাংসদের বিরুদ্ধে।
বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ওনারা (শিশির অধিকারী, সুনীল মণ্ডল) বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই।
এর আগে একাধিকবার কলকাতা টিভির প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু। কলকাতা টিভির প্রশ্ন শুনলেই ইদানিং মেজাজ হারাচ্ছেন তিনি৷ বিধানসভা নির্বাচনের কিছু মাস আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য বাজেটকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে শিবির বদলে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই বদলে গিয়েছে সুর৷
আরও পড়ুন: বাংলায় দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগে আদালতে যাচ্ছে বিজেপি
তা হঠাৎ এই রাজনৈতিক ও আদর্শগত আমূল পরিবর্তনের কারণ কী? প্রশ্ন রেখেছিলেন, কলকাতা টিভির সাংবাদিক। ব্যস তাতেই মেজাজের তার কেটে যায়। উত্তরে শুভেন্দু বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের যেমন চাকরি পরিবর্তনের অধিকার আছে, তেমনই রাজনৈতিক দল পরিবর্তনের অধিকার আছে নেতাদের৷ যে দলে যখন রয়েছেন, তখন সে দলের আদর্শ মেনে চলেছেন৷ মতাদর্শের পরিবর্তন হতেই পারে৷’
মুকুল রায়কে পিএসি চেয়ারম্যান প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু। কলকাতা টিভির প্রশ্ন শুনে সেদিনও মেজাজ হারান তিনি। বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজভবনের বাইরে কলকাতা টিভির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন৷ কলকাতা টিভির প্রতিনিধি শুভেন্দুকে প্রশ্ন করেন, আপনি তৃণমূলের বিধায়ক তথা মন্ত্রী থাকাকালীন বিজেপিকে জঞ্জাল পার্টি মনে করতেন৷ এখন বিজেপি বিধায়ক হিসাবে নিজেকে জঞ্জাল মনে করছেন?
আরও পড়ুন: দীনেশ ত্রিবেদীর ছেড়ে যাওয়া রাজ্যসভার আসনে ভোট
প্রশ্ন শুনেই রেগে যান শুভেন্দু৷ তিনি কলকাতা টিভির প্রতিনিধিকে বলেন, কলকাতা টিভি একটি রাজনৈতিক চ্যানেল৷ তার কোনও প্রশ্নের উত্তর দেব না৷ কয়েকদিন আগে চ্যানেলের মালিক পশ্চিম মেদিনীপুরে রাজনৈতিক সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন৷ এ কথা বলেই উল্টো দিকে ঘুরে যান শুভেন্দু৷ এরপরেই কলকাতা টিভির আর এক প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন, পার্লামেন্টের বহু সাংসদের সাংবাদ মাধ্যম আছে, সেক্ষেত্রেও কি আপনার বক্তব্য একই থাকবে? ঘাড় ঘুরিয়ে শুভেন্দু সাংবাদিককে করজোড়ে নমস্কার করেন বলেন, আপনি ভালো থাকুন৷