অতীতে আমাদের দেশে কোনও একটি ‘আঞ্চলিক’ দল জাতীয় রাজনীতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস সেই চেষ্টা শুরু করেছে। সফল হবে কি না তা ভবিষ্যতই বলবে। আমরা বরং, কেন তৃণমূল কংগ্রেস এই পথ বেছে নিল, কতদূর তার সম্ভাবনা, সে দিকে একটু তাকাই।
ভারতীয় রাজনীতির একমেরু চরিত্র
১৯৪৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ভারতের রাজনীতি ছিল মোটামুটি ভাবে একমেরু চরিত্রের। কংগ্রেসই প্রধান দল। বাকিদের দূরবীণ দিয়ে দেখতে হত। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮, একটা এমন সময় যখন ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে। এটাকে ট্র্যানজিশনাল ফেজ বলা যেতে পারে। বিজেপি তখন উঁকি মারছে উইংসের ফাঁক দিয়ে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৪, এই ১৬ বছর আমরা দেখতে পেলাম দ্বিমেরু শক্তির দ্বন্দ্ব। কংগ্রেস এবং বিজেপিই সমানে সমানে প্রায়। ২০১৪ থেকে বর্তমান সময়, ফের ভারতীয় রাজনীতি একমেরু-কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। বিজেপির দখলে ৩০৩ লোকসভার আসন, ৩৭ শতাংশ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের ২০ শতাংশ ভোট, আসন সংখ্যা ৫২। বহু দূরে থাকা দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি। বিজেপির হাতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সব থেকে শক্তিশালী এবং ধারালো অস্ত্র কী? সেটা হল নেহরু-গান্ধী পরিবারের বংশানুক্রমিক শাসনের অভিযোগ।
কংগ্রেস ও বংশানুক্রমিক শাসন
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যেদিন কংগ্রেস রাজনীতিতে ছোট ছেলে সঞ্জয়কে সামনে আনলেন, সে দিন থেকেই কংগ্রেসে বংশানুক্রমিক শাসনের শুরু, তা এখনও চলছে। যেহেতু খুব স্বাভাবিক ভাবেই ইন্দিরা-রাজীবের আত্মত্যাগের কাহিনি বর্তমান প্রজন্মের, এমনকি আজকের মাঝবয়সি ভোটারদের স্মৃতিতেও সেভাবে নেই, ফলে পুত্র-কন্যা সহ সোনিয়া গান্ধীর এই ভাবে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ পদ ধরে রাখা, আম জনতার কাছে খুবই নেগেটিভ বার্তা দিয়ে চলেছে ক্রমাগত, যা তাঁরা মানতে নারাজ। উল্টো দিকে এই পরিস্থিতিতে, বিজেপি বা আরএসএসের ছবিটা একেবারেই ভিন্ন। সেখানে তাদের একটা বড়ো প্লাস পয়েন্ট, তাদের সংগঠনে সর্বোচ্চ পদে কাউকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনও রকম বংশ বা ডাইনাস্টিক প্রভাব কাজ করে না।
আধুনিক ভারত দেখতে চায় নিজের যোগ্যতায় ক্ষমতা অর্জন। বাবা, কাকার দয়ায় নয়। কংগ্রেস এই অবস্থা থেকে বেরোতে পারছে না। বেরোতে চাইছেও না। তার সঙ্গে অতীতের বোফোর্স, জরুরি অবস্থা, শিখ বিরোধী দাঙ্গা ইত্যাদি কংগ্রেসের যত খারাপ কাজের নজির, সত্যি হোক বা মিথ্যা, তার সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে নেহেরু-গান্ধী পরিবারের নাম জড়িত। ফলে যখনই মোদীকে নিয়ে গুজরাট, মুজাফ্ফরনগর,দিল্লির দাঙ্গার কথা আসে বা রাফাল নিয়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গ আসে, তখনই বিজেপি নেতারা নেহরু-গান্ধী নেতৃত্বের দিকে আঙুল তোলেন এবং অতীতের কথা ফিরিয়ে আনেন। এটা নিজেদের মুখ ঢাকার জন্য তাদের একটা বিরাট সুবিধে হয়ে গি্য়েছে। সোনিয়া গান্ধীরা সপরিবারে দলের ক্ষমতার শীর্ষপদ থেকে সরে গেলে, বিজেপি এই সুযোগ কম পাবে। কিন্তু দলের এক নম্বর পরিবারের তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।
কংগ্রেসের এই নেতৃত্বের আমলেই হতাশ হয়ে দল ছেড়ে চলে গিয়ে যাঁরা নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিতে শুরু করেছেন তাঁদের কয়েক জন হলেন, মহুয়া মৈত্র, জিতিন প্রসাদ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এমন নাম খুঁজলে আরও বেরোবে। কংগ্রেসের কী ভাবে ক্ষয় হচ্ছে সোনিয়া গান্ধীদের আমলে সেদিকে একবার তাকানো যাক।
কংগ্রেস-বিজেপির আসনের অঙ্ক
২০১৪ সালে লোকসভায় কংগ্রেস যে ৪৪টি আসন জিতেছিল, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে সেই সব আসনে জয়ের যে গড় ব্যবধান ছিল, ২০১৯-এ জেতা ৫২টি আসনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সেই ব্যবধান প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৩.৬ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮.৬ শতাংশ।২০১৪ সালে বিজেপি এবং কংগ্রেস প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, এমন আসন ছিল ১৮৯টি। তার মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছিল ১৬৬ আসনে। অর্থাৎ বিজেপির স্ট্রাইক রেট ৮৮ শতাংশ, কংগ্রেসের ১২ শতাংশ। বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে ১০০ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী দিলে মাত্র ১২ আসনে জিততে সক্ষম ছিল ২০১৪ সালে। ২০১৯-এ ছবিটা আরও করুণ হল কংগ্রেসের পক্ষে। বিজেপি-কংগ্রেস ১৯২টি আসনে সরাসরি লড়াই করে ২০১৯-এ। বিজেপি জেতে ১৭৬ আসনে। বিজেপির স্ট্রাইক রেট বেড়ে দাঁড়ায় ৯২ শতাংশ। কংগ্রেসের ৮ শতাংশ। মোট ১৬টি রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি ২০১৯-এ। সেগুলি হল, অন্ধ্র, লাক্ষাদ্বীপ, দিল্লি, দমন-দিউ, দাদরা ও নগর হাভেলি, চণ্ডিগড়, উত্তারখণ্ড, ত্রিপুরা, সিকিম, রাজস্থান, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাট, অরুণাচল প্রদেশ।২০১৯-এ পরাজয়ের পর রাহুল গান্ধী দায় স্বীকার করে নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। সোনিয়া গান্ধী সম্ভত চাননি শীর্ষপদ থেকে নেহরু-গান্ধী পরিবার সরে যাক। ফলে কার্যত তিনিই (তাঁরাই) থেকে গিয়েছেন। একটা প্রক্রিয়া চলছে কংগ্রেসে নতুন সভাপতি নির্বাচনের। খবর যা, তাতে সবাই ধরেই নিয়েছেন, রাহুল গান্ধীই ফের ওই পদে ফিরে আসছেন।
রাহুল-প্রিয়ঙ্কার অন্য সুর
অথচ বছর দু’য়েক আগেও কিন্তু রাহুল প্রিয়ঙ্কা অন্য পথের কথা ভাবছিলেন। আমারিকা-নিবাসী লেখক প্রদীপ চিব্বার এবং হর্ষ শাহের ‘ইন্ডিয়া টুমোরো’ বইয়ে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে এই কথা তাঁরা বলেছিলেন।
সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কার বক্তব্য ছিল, ‘ ২০১৯-এর ফল বেরোনোর পর পদত্যাগপত্রে (রাহুলের) সম্ভবত কথাটা নেই, কিন্তু অন্য এক জায়গায় রাহুল বলেছে, আমি (প্রিয়ঙ্কা) বা রাহুল, আমাদের দু’জনের কারও কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত নয়। আমি ওর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত এই ব্যাপারে। আমি মনে করি এবার দলের কাজ হবে তার নিজের পথ খুঁজে নেওয়া’। সাক্ষাৎকারটি প্রিয়ঙ্কা দিয়েছিলেন ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে, যখন তাঁর হাতে পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের ৪১টি আসনের ভার ছিল। প্রসঙ্গত, ওই ৪১ আসনে প্রিয়ঙ্কার নেতৃত্বে লড়ে কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল মাত্র ৫.৩ শতাংশ। সাক্ষাৎকারে প্রিয়ঙ্কার বক্তব্য ছিল, নেহরু-গান্ধী পরিবারের লোকজনেরা পদ থেকে সরে গেলে, নতুন সভাপতি যদি তাঁকে নির্দেশ দেন, উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে আন্দামানে গিয়ে সংগঠন করতে , আনন্দের সঙ্গে তিনি তা করবেন।
রাহুল গান্ধী সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, তিনি সভাপতি পদে না থাকলেও, রাজনীতির ময়দান ছেড়ে চলে যাবেন না। রাহুল বলেছিলেন, তিনি মনে করেন বিজেপি-আরএসএস তাঁকে ভয় পায় বলেই ক্রমাগত তাঁকে আক্রমণ করে। রাহুলের মতে, যতই আসন কমুক, কংগ্রেস আবার ফিরে আসবে। তাঁর মত, ২০১৯-এ কংগ্রেস পরাজিত হয়েছে তাঁর নেতৃত্বে। কংগ্রেসের মধ্যে একটা দায় নেওয়ার সংস্কৃতি খুব জরুরি। আর সেটা শুরু হওয়া উচিত সর্বোচ্চ স্তর থেকে। ‘সেই দায় নিয়ে আমি সরে দাঁড়িয়েছি’ বলেছিলেন রাহুল।
এভাবেও ফিরে আসা যায়?
এখন কিন্তু অবস্থাটা আর সেরকম নেই। রাহুলই যে থাকছেন, সেটা কংগ্রেসের নেতারাও ধরেই নিয়েছেন। প্রশ্ন হল রাহুল কি পারবেন? তথ্য বলছে, না।
এই যেখানে কংগ্রেসের অবস্থা, সেখানে অন্তত এই মুহূর্তে অন্য কোনও দলের মনে হতেই পারে কার্যত এখন বিরোধীদল বলে কিছু নেই। এখন বিরোধীদল মানে হল সংসদে ওয়েলে হৈচৈ করা, স্পিকার বহিষ্কার করে দিলে গান্ধীমূর্তির নিচে বসে স্লোগান দেওয়া আর বিজেপি ইচ্ছে মতো একের পর এক বিল পাস করিয়ে নেবে, সেটা চুপ করে দেখা। ২০২১-এর ২৯ নভেম্বর সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংবাদ মাধ্যমকে বললেন, তিনি চান সব বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা হোক। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই দেখা গেল কৃষিবিল প্রত্যাহার নিয়ে বিরোধীদের আলোচনার দাবি সরকার উড়িয়ে দিয়ে বিল পাস করিয়ে নিল। বিপুল সংখ্যাধিক্যের কারণে সংসদে বিরোধীরা তাদের কোনও দাবিই আদায় করতে পারেন না। কৃষিবিলও এই ভাবেই বিরোধীদের দাবি না মেনে পাস করানো হয়েছিল রাজ্যসভায়।
Delhi | Congress Interim President Sonia Gandhi leads party’s protest demanding repeal of Centre’s three farm laws#WinterSession pic.twitter.com/rTTH0qklae
— ANI (@ANI) November 29, 2021
কংগ্রেসের নেতৃত্বে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি দুর্বল বলেই, গত সাত বছরে ভারতে যে দুটি বড়ো আন্দোলন হল, তার একটিতেও বিরোধী দলের কোনও নেতা-নেত্রীর কোনও ভূমিকা কার্যত ছিল না। প্রথমটি শাহিনবাগের আন্দোলন, যা কোভিডের জন্য মাঝপথে তুলে নেওয়া হয়, আর দ্বিতীয়টি কৃষক আন্দোলন, যেখানে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন, বিলও প্রত্যাহার করে নিতে হয়। বিরোধী নেতারা যেখানে একটা বিল নিয়ে আলোচনার দাবিই আদায় করতে ব্যর্থ হন সংসদে, সেখানে এই কৃষকরা সফল হন সরকারকে বিল প্রত্যাহারে বাধ্য করতে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে বলছেন কংগ্রেসের অবস্থা কি তাহলে হবে ‘বৃটিশ লিবারেল পার্টি’র মতন? কংগ্রেসের জন্ম ১৮৮৫ সালে। তারও কয়েক দশক আগে জন্ম বৃটিশ লিবারেল পার্টির। আজ যে ইংল্যান্ডকে আমরা দেখি তার গঠনে বৃটিশ লিবারেল পার্টির বিরাট ভূমিকা। কিন্তু ওই মহীরুহ একটা সময় দুর্বল হতে হতে দলটা অবশেষে উঠে যায়। ১৯৮৮ সালে। বৃটিশ লিবারেল পার্টি মিশে যায় সোস্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টির সঙ্গে। কংগ্রেসের কি সেই অবস্থা হবে? সেটা মনে হয় না। তবে এর জবাব সময়ই দেবে।
বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির এই অক্ষমতা এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি খুব দক্ষতার সঙ্গে ভারতকে ক্রমেই একটি সংখ্যাগুরুবাদী গণতন্ত্রিক দেশের দিকে নিয়ে চলেছে। যেখানে হিন্দু ছাড়া বাকিরা হবেন কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে যত নতুন বিল পাস করিয়েছে তার বেশির ভাগই হয়েছে সংখ্যালঘু-কেন্দ্রিক। সেটা কখনও ৩৭০, কখনও তিন তালাক, কখনও লাভ জিহাদ, কখনও সিএএ, কখনও গোরুর মাংস সংক্রান্ত আইন, কখনও রাস্তার ধারে মাংস বিক্রি না করার নির্দেশ। সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন পোশাক দেখে (লুঙি) চিনতে, তখন আদিত্য যোগী উত্তরপ্রদেশে প্রচারে গিয়ে বলছেন, তাঁর রাজত্বে ফেজ টুপি পরা গুন্ডারা ঘুরতে সাহস পায় না। কর্নাটকের বেলুরে তখন গির্জায় ভাঙচুর চালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। যাদের , সাত দিন পেরিয়ে গেলেও ধরতে সাহস পায় না পুলিশ। উত্তরাখণ্ড থেকে সেই একই সময়ে খবর আসে (৫ নভেম্বর, ২০২১) বিয়ে বাড়িতে উচ্চ বর্ণের সঙ্গে একই সারিতে খেতে বসেছিলেন বলে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে এক দলিত যুবককে। ‘সবকা বিকাশ’-এর এই নতুন ভাতের উত্থান দেখে কেউ হাত তালি দিচ্ছেন, কেউ চমকে উঠছেন ভয়ে।
মোদির শাসনকাল ও ভারতের আর্থিক বিপর্যয়
ডিমনিটাইজেশন(demonitisation), তাড়াহুড়ো করে জিএসটি(GST) চালু থেকে শুরু করে আচমকা লকডাউন(lockdown) ঘোষণা করে কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে(migrant labourer) বিপদে ফেলা, কয়েকশো শ্রমিককে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া, গায়ের জোরে কৃষিবিল(farm bill) পাশ করিয়ে নেওয়া ইত্যাদি, নরেন্দ্র মোদীর নেওয়া বেশির ভাগ সিদ্ধান্তই কার্যত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তাঁর হাতে ভারতের অর্থনীতি এখন তলানীতে। বেকারি বেড়েই চলেছে, এই বেড়ে চলাটা শুরু হয়েছিল কোভিডের অনেক আগেই। নরেন্দ্র মোদীর আমলে সারা পৃথিবীতে ভাতর সুনাম নষ্ট হয়েছে। খিদের সূচকে, গণতন্ত্রের সূচকে, দুর্নীতির সূচকে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সূচকে আমরা সারা পৃথিবীর চোখে বেশ কয়েক ধাপ নীচে নেমে গিয়েছি।
কিন্তু বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদী নিশ্চিত, যত ক্ষণ উল্টো দিকে গান্ধী-নেহরু পরিবারের নেতৃত্বে কংগ্রেস রয়েছে, তাঁদের কোনও ভয় নেই। দু’চারটে টুইট-ফুইট হবে, ক’দিন গান্ধীমূর্তির নীচে ধর্না ব্যাস, দম শেষ।
একলা চলো রে…
এই অবস্থাটাই বদলাতে কেউ তো উদ্যোগী হবেন! এগিয়ে এসে সেই কাজটাই সম্ভবত করতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ-ও এক ধরনের ‘একলা চলো রে’। এই মুহুর্তে পরিস্থিতি নিশ্চয়ই তাঁর অনুকূলে নয়। কিন্তু কোনও একটা জায়গা থেকে কাউকে তো শুরু করতে হয়। সেই কাজটা তিনি করেছেন। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কি বিরোধী ঐক্য সম্ভব? এক কথায় উত্তর না। কংগ্রেসকে নেতৃত্বে রেখে কি বিরোধীরা বিজেপিকে পারাজিত করতে পারবে? দু’বারের অভিজ্ঞতার নিরিখে এই মুহূর্তের জবাব, না। তাহলে? একটা বিকল্প পথ তো কাউকে খুঁজে বের করতে হবে। অন্তত সেই চেষ্টা তো করতে হবে! সেই চেষ্টাটাই তৃণমূলনেত্রী শুরু করেছেন। যদি দেশের গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হয়, তাঁর এই সাহসকে কুর্ণিশ না করে উপায় নেই। সাফল্য ব্যর্থতার কথা ইতিহাস লিখবে।