কলকাতা: রেড ভলান্টিয়ার (Red Volunteer) দিয়ে শুরু, শেষমেশ চতুর্থ প্রজন্মের উপরই লাল ঝান্ডা (CPIM State Committee) এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব বর্তাল। শতরূপ ঘোষ (Shatarup Ghosh), ময়ূখ বিশ্বাস, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee), সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীকউর রহমান, আত্রেয়ী গুহ, গার্গী চট্টোপাধ্যায়, আভাস রায়চৌধুরী, কনীনিকা ঘোষ, মধুজা সেন রায়ের মত তরুণ নেতৃত্বের হাতে আগামী দিনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও এর মধ্যে মহিলার সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম।
২৬-তম রাজ্য সম্মেলনে ৮০ জনের যে রাজ্য কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে প্রাধান্য পেয়েছে সিপিএমের ইয়ং ব্রিগেড। ১৫-১৭ মার্চ সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম থেকেই ঠিক ছিল, এবারে রাজ্য সম্পাদক সহ আমূল পরিবর্তন হবে রাজ্য কমিটিতে। কারণ তৃতীয় প্রজন্মের যে নেতৃত্বের হাতে দলের দায়িত্ব ছিল, তাঁদের অনেকেই বৃদ্ধ হয়েছেন। তাই দলের নিচুতলা থেকে নবীন প্রজন্মকে সামনে তুলে ধরার দাবি উঠছিল ক্রমাগত। সেই দাবিকে সম্মান দিয়ে এবার রাজ্য কমিটিতে এক ঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে আসা হল।
২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএমের ভরাডুবির পর্ব চলছিল। ৩৪ বছর শাসন করা দলে রাতারাতি বাতি জ্বালার কর্মী ছিল না। পাহাড়ে ধস নামার মতই সিপিএমের বেনোজল তৃণমূলে ঢুকতে শুরু করে। তখন থেকেই প্রায় অকেজো, বৃদ্ধ, জরাগ্রস্ত নেতৃত্বের হাতে দলের পরিচালনা ভার ছিল। একের পর এক নির্বাচনে সিপিএম গোহারা হয়। গ্রামেগঞ্জে মার খাওয়া, ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীরা বাধ্য হয় দলত্যাগে। কারণ, সেই সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর মত সাহস কলকাতার ঠান্ডা ঘরে বসে থাকা মার্কসবাদীরা দেখাতে পারেননি। ফলে ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয় দল।
আরও পড়ুন: CPM Md Salim: সিপিএমের নয়া রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম
ভারতে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের পর থেকে এত দুরবস্থা কোনওদিন হয়নি, যা ২০১১-র পর থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের হয়েছে। রাজ্যে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর সিপিএমের দ্বিতীয় প্রজন্ম ক্ষমতাসীন হয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক আবর্তে আটের দশকের আমল থেকে তৃতীয় প্রজন্মের হাতে পার্টির সর্বনাশের পর্ব শুরু হয়। পার্টির বপু বৃদ্ধি করতে গিয়ে নির্বিশেষে সদস্যপদ দান, বিরোধী অস্তিত্ব বিলোপ করা ও পার্টিকে ব্যবহার করে তোলাবাজি সহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে নাক অবধি ডুবে যান একাংশ নেতা।
প্রয়াত সিপিএম নেতা অনিল বিশ্বাস শেষ বারের মত পার্টিতে শুদ্ধকরণের চেষ্টা চালালেও তা সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি তিনি। ফলে প্রোমোটারি, ইমারতি কারবারি ও সিন্ডিকেট নির্ভর রাজনীতির দাস হয়ে যায় পার্টি। ধীরে ধীরে মানুষের মন থেকে সরে যেতে থাকেন জনবিচ্ছিন্ন নেতারা। একের পর এক ভোটে পরাজয়ে দলের জ্ঞানচক্ষু খুলতে থাকে। পক্ষান্তরে দিল্লি, জেএনইউ, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআই ও ডিওয়াইএফ-এর তরতাজা নেতা-নেত্রীরা খবরের শিরোনামে উঠে আসেন। তখন থেকেই এই নেতা-নেত্রীদের কাঁধেই দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জোরালো হতে থাকে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি আঁতাঁত হয়েছে, বিধানসভায় সরব মমতা
কোভিড কালে ভাষণ দেওয়া নেতাদের জায়গায় পথে নামেন যুব প্রজন্মের রেড ভলান্টিয়ার। আর্ত মানুষের দরজায় দরজায় গিয়ে সহজেই কমিউনিস্টদের অতীতের ধর্ম জনসংযোগকে পুনরুজ্জীবন দেয় লাল স্বেচ্ছাসেবকরা। গত বিধানসভা ভোট এবং সদ্য সমাপ্ত পুরভোটেও এই তরুণ প্রজন্মকে প্রার্থী করেছিল সিপিএম। এবং ভোটের ফল বলে দিয়েছে, এরা ভালো ফাইট দিয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। এবার রাজ্য দলের নীতি নির্ধারক কমিটিতেও তাঁদের ঠাঁই তাঁরা নিজ যোগ্যতায় অর্জন করে নিয়েছেন। সুতরাং, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, কোমায় চলে যাওয়া সিপিএমে ফের একবার আন্দোলনের প্রাণস্পন্দন ফিরে আসতে চলেছে।