শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি সর্বপ্রথম তুলেছিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। তারপর গেরুয়া শিবিরের একাধিক সাংসদ, বিধায়ক তাঁর পাশে দাঁড়ালেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিজেপি রাজ্য ভাগের বিরোধী। বার্লার বক্তব্য দলের বক্তব্য নয়।
বাংলা ভাগের দাবি তোলা বার্লাকে কিছু বলা তো দূর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে তাঁকে পুরস্কৃত করেছে মোদি। ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বার্লাকে মন্ত্রী করে আদপে দিলীপকেই বিশেষ বার্তা দেওয়া হল, এমনটাই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলের। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এ প্রসঙ্গে জানান, প্রধানমন্ত্রী কাকে মন্ত্রিসভায় নেবেন, সেটা একান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত।
বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা। সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে তাঁকে। এরপরই সরব হয়েছে তৃণমূল। বার্লা-নিশীথকে মন্ত্রী করার বিষয়টিকে ‘বাংলা ভাগের দাবি তোলার পুরস্কার’ বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, পৃথক রাজ্যের দাবিকে উসকানি দেওয়ার জন্যই মন্ত্রী করা হয়েছে। এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘বিজেপি একটা অদ্ভুত রাজনৈতিক দল। তারা এমন একজনকে উত্তরবঙ্গ থেকে মন্ত্রী করলেন যিনি বাংলা ভাগ চান। পাহাড় নিয়ে আগেও এই ধরনের মদত দেওয়া হয়েছে।’ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও ট্যুইটারে সরব হয়েছেন। মহুয়া লিখেছেন, ‘বিজেপি সাংসদ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গকে তিনভাগে ভাগ করা উচিত। বিজেপি তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করেনি। অথচ তাঁকেই মন্ত্রিসভায় জায়গা দিয়ে পুরস্কৃত করা হল। খেলা তো শুরু হয়ে গিয়েছে।’
উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তোলার পর বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আলিপুরদুয়ারে সাংগঠনিক বৈঠক করতে গিয়েছিলেন। সেখানে দেখা মেলেনি বিজেপি সাংসদ জন বার্লার। গেরুয়া শিবিরের স্থানীয় নেতৃত্বও গরহাজির ছিলেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যভাগের দাবি তোলা বার্লাকে মন্ত্রী করার বিষয়টি বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে গেরুয়া শিবিরের কাছে। রাজ্যভাগের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালানো কেপিপি, গ্রেটারদের একাংশ বার্লার মন্তব্যকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। তারপরেও তাঁকে মন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক তা সময়ই বলবে।
এদিকে তৃণমূলের তরফে এ বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, জন বার্লা মূর্খ। আমি তো পার্লামেন্টে দেখলাম, একদিনও একটা গোটা ভাষণ দিতে পারেনি। উনি কী বলেন তার কোনও গুরুত্ব নেই। এঁদের মন্ত্রী করে অন্যান্য মন্ত্রীদের মান নরেন্দ্র মোদি নামিয়ে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দফতরে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জন বার্লা। দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, আমার সংসদীয় এলাকায় অনেক চা বাগান শ্রমিক ও সংখ্যালঘু বসবাস করেন। সকলের জন্যই কাজ করব। উন্নয়ন হলেই ফিরবে শান্তি। কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে জনগণের জন্য কাজ করতে পারলে মানুষের ভালো হবে।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রের অনেক প্রকল্পের সুবিধা রাজ্যবাসী পাচ্ছে না, এই নিয়ে প্রয়োজনে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলব। উত্তরবঙ্গের মানুষের দাবি তো আজ থেকে নয়। এই নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না। জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। আগামীদিনে উন্নয়ন করব।