জম্মু ও কাশ্মীরে শীঘ্রই খোলা হবে আইফেল টাওয়ারের (Eiffel Tower) চেয়েও উঁচু বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু (World’s Highest Railway Bridge)। আগামী বছরের মধ্যেই এই সেতুতে রেল চলাচল শুরু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নদীতল থেকে ৩৫৯ মিটার উঁচু এবং আইফেল টাওয়ারের থেকে ৩৫ মিটার বেশি লম্বা। চন্দ্রভাগা নদীর উপরে তৈরি হচ্ছে এমনই অত্যাশ্চর্য সেতু, যার নাম ‘চেনাব রেলওয়ে ব্রিজ’ (Chenab Railway Bridge)। রেল সূত্রের খবর, এই সেতু কাটরা এবং বানিহালের মধ্যে সংযোগস্থাপন করবে। উত্তরের কাশ্মীরকে জুড়ে দেবে দক্ষিণের কন্যাকুমারীর সঙ্গে।
উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেলওয়ে প্রকল্পের (Udhampur-Srinagar-Baramulla Railway Link ) অন্তর্গত এই ব্রিজ তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। পৃথিবীর উচ্চতম রেল ব্রিজে মোট ১৭টি পিলার রয়েছে। ১৪৮৪ কোটি টাকার ইস্পাত ব্যবহার হয়েছে এই সেতু তৈরিতে। গত অগাস্টেই চেনাব ব্রিজের গোল্ডেন জয়েন্ট যুক্ত করার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। শুধু জম্মু-কাশ্মীর বা দেশের মানুষের কাছে নয়, চেনাব ব্রিজ গোটা দুনিয়ার কাছে বিস্ময়। সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালের অগাস্ট মাসে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও বাতাসের প্রচণ্ড গতিবেগের কারণে রেল যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ফের নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে শুরু হয় কাজ।
আরও পড়ুন:Mississippi Tornado | ভয়ঙ্কর টর্নেডোয় বিপর্যস্ত মিসিসিপি, মৃতের সংখ্যা ২৩, নিখোঁজ ৪
রেলকর্তারা জানিয়েছেন, ‘চেনাব সেতুতে ট্র্যাক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। একবার কাজ সম্পূর্ণ হলে, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে যোগাযোগের নতুন পথ খুলে দেবে এই রেল ব্রিজ। শনিবার সেতুটি পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw)। তিনি জানিয়েছেন, তীব্র বেগে হাওয়ার প্রতিকূল পরিস্থিতি, প্রচণ্ড উষ্ণতা সহ ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতি সব ধরনের কঠিন পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়েছে এই সেতু। এখন শুধু একটি মোটর ট্রলি এবং ‘বোলেরো কাস্টমাইজড’ রেল চালিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে এই ব্রিজে রেল চলাচল শুরু হবে। ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ব্রিজ যে কোনও প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ সহ নানা উপকরণ দিয়ে এই ব্রিজের ইস্পাত বানানো হয়েছে। ভারতীয় সংস্থা জিন্দল গ্রুপ এই ব্রিজের জন্য রেল লাইন তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বর্তমানে সেতুটি ২৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত বায়ুপ্রবাহ সহ্য করতে পারবে। এর আয়ু হবে প্রায় ১২০ বছর। ইতিমধ্যেই উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা অংশের ৯০ শতাংশ রেল সংযোগের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, জম্মু ও কাশ্মীর সংযোগকারী লাইনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত টানেলে এখন প্রায় তৈরি। আর বাকি কাজের পাশাপাশি চেনাব রেলওয়ে সেতুর ট্র্যাক বসানোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। একজন রেল আধিকারিক জানিয়েছেন, কাটরা-বানিহাল সেকশনে মোট রেলপথ তৈরি হবে ১৬৩.৮৮ কিমি (টানেল সহ)। তার মধ্যে ১৬২.৬ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ১১৭.৭ কিলোমিটারের মধ্যে, ৩১.৩ কিলোমিটার ট্র্যাক প্রস্তুত। বানিহাল-কাটরা রেললাইনে ১২.৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারতের দীর্ঘতম ‘এস্কেপ’ টানেল ডিসেম্বরেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। রেলপথে দিল্লি-কাশ্মীর সংযুক্তিকরণ ভারতীয় রেলের ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক হতে চলেছে।