নয়াদিল্লি: ৪০ তলার দুটি আবাসন গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)৷ মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চের এমন নজিরবিহীন রায়ে দেশের অন্যতম বড় আবাসন নির্মাতা সংস্থা সুপারটেকের (Supertech) মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে৷ ক্ষুব্ধ দুই বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং এম আর শাহ জানিয়ে দেন, নয়ডা অথরিটির (Noida Authority) নির্দেশ মেনে আবাসন সংস্থাকে নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে ওই জোড়া টাওয়ার ভেঙে ফেলতে হবে৷
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে বেকায়দায় পড়েন অগ্রিম টাকা দিয়ে ওই আবাসনে ফ্ল্যাট বুকিং করা গ্রাহকরা৷ যদিও তাঁদের স্বস্তি দিয়েছে আদালত৷ ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, দু’মাসের মধ্যে সমস্ত ক্রেতাদের টাকা মেটাতে হবে সুপারটেককে৷ শুধু তাই নয়, টাকা জমা দেওয়ার দিন থেকে ১২ শতাংশ সুদ-সহ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে হবে৷ এখানেই শেষ নয়৷ রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে ২ কোটি টাকা চোকাতে হবে সুপারটেককে৷ এই রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন আবাসন নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে এতদিন আইনি যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল৷
আরও পড়ুন: কৃষি বিলের প্রতিবাদে ২৫ সেপ্টেম্বর ভারত বনধের ডাক কৃষক সভার
কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নয়ডার গ্রিন এলাকায় টুইট টাওয়ার তৈরি করেছিল সুপারটেক৷ ৪০ তলার ওই দুটো আবাসনে মোট ৯১৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে৷ যার মধ্যে ৬৩৩টি ফ্ল্যাট অগ্রিম বুকিং করেছিলেন গ্রাহকরা৷ তৈরির সময় থেকেই এই প্রজেক্ট নিয়ে অনেক আপত্তি উঠে আসছিল৷ ২০১৪ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টও দুটি আবাসন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল৷ জানিয়েছিল, নয়ডা বিল্ডিং রেগুলেশনে বলা হয়েছে দুটি বিল্ডিংয়ের মধ্যে কমপক্ষে ১৬ মিটার দুরত্ব রাখতে হবে৷ সেই নিয়ম এক্ষেত্রে মানা হয়নি৷ পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ অ্যাপার্টমেন্ট অনার্স অ্যাক্ট বলছে, যাঁরা ফ্ল্যাট কিনছেন তাঁদেরও মতামত নিতে হবে আবাসন সংস্থাকে৷ সেটাও এক্ষেত্রে মানা হয়নি৷
মঙ্গলবার ১৪০ পাতার রায়ে একই কথা জানায় সুপ্রিম কোর্ট৷ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ১৬ মিটারের পরিবর্তে দুটি বিল্ডিংয়ের মাঝে দুরত্ব রাখা হয়েছিল ৯ মিটার৷ যেহেতু দুটি টাওয়ারের উচ্চতা ২৪ তলা থেকে বাড়িয়ে ৪০ তলা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেহেতু ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী দুটি বিল্ডিংয়ের মাঝের দুরত্ব ২০.৪৫ মিটার রাখা দরকার ছিল৷ আবাসন সংস্থা সেটা পালন করেনি৷ এর বাইরেও বহু নিয়ম ভেঙেছে সুপারটেক৷ বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ বিল্ডিংটা বেআইনিভাবে তৈরি হয়েছে৷ আবাসন তৈরির কোনও নিয়ম মানা হয়নি৷ এজন্য নয়ডা অথরিটিকে ধমক দেয় আদালত৷ জানিয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবাসন তৈরির নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য
গত ৫ অগস্ট ছিল এই মামলার শেষ শুনানি৷ তার পর মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করে আদালত৷ জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে অ্যাপেক্স এবং সিয়ানে টাওয়ার দুটি ভেঙে ফেলতে হবে৷ এর সমস্ত খরচ সুপারটেক মেটাবে৷ দু’মাসের মধ্যে গ্রাহকদের অগ্রিম বুকিংয়ের টাকা ফেরত দিতে হবে৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অফিসারদের খুঁজে কঠোর শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ অপরদিকে সুপারটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান আর কে অরোরা জানিয়েছেন, তাঁরা রায় পুর্নবিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবেন৷